সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস
সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে বিস্তারিত জানুন এই আর্টিকেলে।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কোন বিষয়ের উপর কত নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে – সব
কিছু এখানে দেওয়া হয়েছে স্পষ্টভাবে।
অভিভাবকদের জন্যও এটি কাজে লাগবে। গাইডবুক বা
প্রাইভেট ছাড়াও এই সিলেবাস ভালোভাবে প্রস্তুতির পথ দেখাবে। এই সিলেবাস বুঝে পড়লে ভালো রেজাল্ট করা সহজ হবে।
সূচিপত্রঃ সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস
বৃত্তি পরীক্ষা সম্পর্কে আপনি যে সমস্ত তথ্যগুলো এখানে পাবেন তা এক নজরে দেখে
নিন-
-
সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস
- বৃত্তি পরীক্ষা কাকে বলে?
- পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস
- পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষা কিভাবে দিতে হবে?
- বৃত্তি পরীক্ষা কয়দিন হবে?
- কয় ধরনের বৃত্তি দেওয়া হয়?
- ট্যালেন্টপুল বৃত্তি কত টাকা?
- সাধারণ বৃত্তি কত টাকা?
- পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি কতদিন পাওয়া যাবে?
- পঞ্চম শ্রেণীর সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা কবে হবে?
- বৃত্তি পরীক্ষায় কত পেলে পাস?
- উপসংহার
সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস
পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস মূলত বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সাধারণ
বিজ্ঞান বিষয়ের উপর হয়। প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ থাকে।
পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার প্রশ্ন হয় - পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির
বইভিত্তিক।
বৃত্তি পরীক্ষা কাকে বলে?
বৃত্তি পরীক্ষা হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের
খুঁজে বের করার জন্য নেওয়া হয়ে থাকে। এই পরীক্ষায় ভালো ফল করলে
শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট আর্থিক সহায়তা বা সম্মাননা পায়। প্রধানত
স্কুল-কলেজে সরকারিভাবে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় উৎসাহ বাড়ে ও পরিবারে অর্থনৈতিক সহায়তা জোগায়।
এটি শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে সকলের কাছে বিবেচিত।
পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস
সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা পরীক্ষার ৪টি বিষয় সমূহঃ
- বাংলা
- ইংরেজি
- গণিত এবং
- বিজ্ঞান
আরো তথ্যঃ
- মোট নাম্বারঃ পূর্ণমান ১০০।
- পরীক্ষার সময়ঃ ২ ঘণ্টা।
- সিলেবাস সম্পূর্ণ বই।
সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার মানবন্টন
(১) বিষয়ঃ বাংলা (মোট ২৫ নাম্বার)
ক. প্রশ্নপত্রে বাংলা থেকে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে ১৫টি (১✖১৫ = ১৫
মার্ক)
- প্রশ্নপত্রে ২টি বাংলা অনুচ্ছেদ থাকবে। ১টি অনুচ্ছেদ পাঠ্যবই থেকে দেওয়া হবে এবং ১টি অনুচ্ছেদ পাঠ্যবই বহির্ভূত হবে। এখান থেকে ৮টি MCQ এর উত্তর দিতে হবে। (৮✖১ = ৮ মার্ক)
- এছাড়া সম্পূর্ণ বই থেকে ৭টি MCQ এর উত্তর দিতে হবে। (৭✖১ = ৭ মার্ক)
খ. প্রশ্নপত্রে বাংলা রচনামূলক প্রশ্ন থাকবে ১টি। (১✖১০ = ১০ মার্ক)
- ১ পৃষ্ঠার মধ্যে রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
(২) বিষয়ঃ ইংরেজি (মোট ২৫ নাম্বার)
ক. প্রশ্নপত্রে ইংরেজি থেকে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে ১৫টি। (১৫✖১ = ১৫
মার্ক)
- ইংরেজি সম্পূর্ণ বই থেকে ১৫টি MCQ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
খ. ইংরেজি প্যারাগ্রাফ থাকবে ১টি। (১✖১০ = ১০ মার্ক)
- ১ পৃষ্ঠার মধ্যে প্যারাগ্রাফে কমপক্ষে ১০টি বাক্য লিখতে হবে।
(৩) বিষয়ঃ গণিত (মোট ২৫ নাম্বার)
ক. গণিত থেকে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে ১৫টি। (১৫✖১ = ১৫ মার্ক)
- গণিত সম্পূর্ণ বই থেকে ১৫টি MCQ এর উত্তর দিতে হবে।
খ. ২টি সমস্যামূলক গণিত প্রশ্ন (রচনামূলক প্রশ্ন) থাকবে। (২✖৫ = ১০
মার্ক)
- ২ পৃষ্ঠার মধ্যে ২টি অংক সমাধান করতে হবে।
(৪) বিষয়ঃ বিজ্ঞান (মোট ২৫ নাম্বার)
ক. বিজ্ঞান থেকে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে ১৫টি। (১৫✖১ = ১৫ মার্ক)
- বিজ্ঞান সম্পূর্ণ বই থেকে ১৫টি MCQ এর উত্তর দিতে হবে।
খ. বিজ্ঞান থেকে রচনামূলক প্রশ্ন থাকবে ২টি। (২✖৫ = ১০ মার্ক)
- ২ পৃষ্ঠার মধ্যে ২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ MCQ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় চারটি
অপশনের মধ্যে যদি দুই বা ততোধিক অপশন নির্বাচন করা হয়, তাহলে উক্ত উত্তর বাতিল
বলে ধার্য করা হবে। বৃত্তি পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ স্কুলে
প্রবেশপত্র দিয়ে দেওয়া হবে অথবা অনলাইন থেকেও সংগ্রহ করা লাগতে পারে। উক্ত
প্রবেশপত্রে পরীক্ষার কেন্দ্র উল্লেখ থাকবে। যে কেউ এই পরীক্ষা যদি না দিতে চাই
তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। অর্থাৎ এই পরীক্ষা দিতেই হবে এর কোন
বাধ্যবাধকতা নেই।
পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষা কিভাবে দিতে হবে?
সকল জেলার সরকারি প্রাথমিক স্কুল, বেসরকারি স্কুল ও সিটি কর্পোরেশন স্কুলের
বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি
পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। মোট শিক্ষার্থীর ১০% থেকে ২৫% পর্যন্ত বৃত্তি
পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের শেষ
সপ্তাহে এবং বার্ষিক পরীক্ষার পর।
বৃত্তি পরীক্ষা কয়দিন হবে?
এক দিনে সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং শেষ হয়ে যাবে।
কয় ধরনের বৃত্তি দেওয়া হয়?
দুই ধরনের বৃত্তি দেওয়া হবে।
- ট্যালেন্টপুল।
- সাধারণ বৃত্তি।
ট্যালেন্টপুল বৃত্তি কত টাকা?
ট্যালেন্টপুল বৃত্তিঃ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্তদের মাসিক ৩০০
টাকা করে দেওয়া হবে। উপজেলায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির ক্ষেত্রে, পরীক্ষায়
অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যার ভিত্তিতে, মোট বৃত্তির ৫০ শতাংশ ছাত্র
এবং ৫০ শতাংশ ছাত্রীর মধ্যে জেন্ডারভিত্তিক মেধা অনুসরন করে বৃত্তি দেওয়া হবে।
সাধারণ বৃত্তি কত টাকা?
সাধারণ বৃত্তিঃ সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তদের মাসিক ২২৫ টাকা করে দেওয়া হবে।
সাধারণ বৃত্তির ক্ষেত্রে ইউনিয়ন-ওয়ার্ডভিত্তিক ৩ জন ছাত্র এবং ৩ জন ছাত্রী
নির্বাচন করা হবে।
পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি কতদিন পাওয়া যাবে?
পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তির অর্থ
পাবে।
পঞ্চম শ্রেণীর সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা কবে হবে?
প্রতিবছর ৫ম শ্রেণির সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা হয়। তাই জানুয়ারি থেকে
ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃত্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ আমি পূর্বেই
বলেছি ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
বৃত্তি পরীক্ষায় কত পেলে পাস?
বৃত্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর প্রতিষ্ঠান ও শ্রেণিভেদে আলাদা হতে পারে।
সাধারণভাবে, মোট নম্বরের ৪০% থেকে ৬০% এর মধ্যে পেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাস
হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে মনে রাখবেন এই মার্ক নিয়ে বৃত্তি পাওয়া যাবে না।
বৃত্তি পেতে মেধা তালিকায় স্থান করে নিতে হলে আরও বেশি নম্বর প্রয়োজন হয়,
যেমন ৮০% বা তার বেশি।
যারা ৮০% বা তার বেশি মার্ক তুলতে পারে তাদের বৃত্তি পাবার সম্ভাবনা সবচেয়ে
বেশি থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বিবেচনা করা হয়। যদি
বেশিরভাগ সংখ্যক ছাত্রছাত্রীরা সর্বাধিক নাম্বার পায় তাহলে জেন্ডার এবং
ইউনিয়ন-ওয়ার্ড ভিত্তিক বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের নির্ধারণ করা হবে। যারা
সবচেয়ে বেশি নাম্বার অর্জন করবে তারাই বৃত্তি পাওয়ার জন্য মনোনীত হবে।
কিছু পরীক্ষায় কেবল মেধাক্রম অনুযায়ী ফলাফল নির্ধারণ করা হয়, ঠিক এমনই একটি
পরীক্ষা হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা যেখানে পাস বা ফেল বলা হয় না। শুধুমাত্র যারা
বৃত্তি পায় তাদেরই রেজাল্ট এখানে বলা হয়। এখানে যারা সর্বাধিক নাম্বার পায়
তারা টেলেন্টপুলে বৃত্তি পায় এবং যারা তাদের থেকে একটু কম মার্ক পায় তারা
সাধারণ বৃত্তি পায়।
উপসংহার
সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাস জানলে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতিতে ভরসা
পায়। প্রতিটি বিষয়ের আলাদা গুরুত্ব থাকলেও মূল কথা হচ্ছে—নিয়মিত চর্চা ও সঠিক
দিকনির্দেশনা। এই পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সিলেবাস অনুসরণ করাই সবচেয়ে
বুদ্ধিমানের কাজ। তাই এখন থেকেই পরিকল্পনা করে পড়াশোনা শুরু করুন।