বাংলাদেশে জুন মাসে স্বর্ণের দাম ২০২৫

বাংলাদেশে স্বর্ণ কেবল গহনার অলংকার নয়—এটি এক ধরনের সামাজিক মর্যাদা, নতুন সংসার শুরুর প্রস্তুতি, এবং অনেকের কাছে বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবেও বিবেচিত। বছরের বিশেষ সময়—যেমন বিয়ের মৌসুম, উৎসব কিংবা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়—স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যায়, আর তার প্রভাব পড়ে দামের ওপর। বর্তমান সময়ে যেখানে বাজার প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে, সেখানে সোনার দাম সম্পর্কে আপডেট থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ-জুন-মাসে-স্বর্ণের-দাম-২০২৫
এই প্রতিবেদনে আমরা জানবো বাংলাদেশে চলতি সময়ে স্বর্ণের দাম, স্বর্ণের দামের  পরিবর্তনের পেছনের কারণ, বাংলাদেশে স্বর্ণের দামের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব এবং বংলাদেশের বাজারে দামের ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস সম্পর্কে।

সূচিপত্র: বাংলাদেশে জুন মাসে স্বর্ণের দাম ২০২৫

স্বর্ণের আপডেট তথ্য সম্পর্কে আপনি যা যা তথ্য পাবেন তা এক নজরে দেখে নিন-

জুন মাসে স্বর্ণের দাম ২০২৫

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত, ২০২৫ সালের জুন মাসে, বাংলাদেশে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল প্রায় ৳১,৬৯,৯২১। বাংলাদেশের জায়গা অনুযায়ী এই দাম দুই থেকে তিন হাজার টাকা কম বেশি হতে পারে।

নিচে বিভিন্ন ক্যারেট অনুযায়ী জুন মাসের সোনার দাম দেওয়া হলো:
ক্যারেট প্রতি গ্রাম দাম (৳) প্রতি ভরি দাম (৳)
২২ ক্যারেট ১৪,৫৬৮ ১,৬৯,৯২১
২১ ক্যারেট ১৩,৯০৬ ১,৬২,০৮০
১৮ ক্যারেট ১১,৯১৯ ১,৩৯,০৩৫
সনাতন পদ্ধতি ৯,৭১৭ ১,১৩,৩৩৯
উল্লেখ্য: প্রতি ভরি সমান ১১.৬৬৪ গ্রাম।

সোর্সঃ এই তথ্য বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) কর্তৃক নির্ধারিত সর্বশেষ মূল্য অনুযায়ী প্রদান করা হয়েছে।


সনাতন পদ্ধতি স্বর্ণের দামঃ সনাতন পদ্ধতি মানে হলো—পুরনো বা প্রচলিত দেশি পদ্ধতিতে তৈরি স্বর্ণ, যা সাধারণত গ্রামের দোকান বা স্থানীয় কারিগরের হাতে তৈরি হয়। এই স্বর্ণের মান বা বিশুদ্ধতা সাধারণত ১৮ ক্যারেট বা তারও কম হয়ে থাকে, তবে এটি নির্ভর করে কারিগর ও মিশ্রণের উপর।
  • সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ মানে ১০০% খাঁটি স্বর্ণ নয়—এতে কিছু মিশ্র ধাতু থাকে (যেমন: তামা, রুপা ইত্যাদি)।
  • এটি সাধারণত শহরের বড় দোকান বা ব্র্যান্ডেড জুয়েলারির তুলনায় কিছুটা সস্তা হয়।
  • গঠনগতভাবে মোটা, ভারী এবং কম চকচকে হতে পারে।
  • অনেক সময় পূজার সামগ্রী, স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী অলংকার, বা সাধারণ ব্যবহারের গয়নায় এ ধরনের স্বর্ণ ব্যবহৃত হয়।

স্বর্ণের সাম্প্রতিক মূল্য প্রবণতা (সোনার দাম – মার্চ থেকে মে ২০২৫)

গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে স্বর্ণের দামে ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে উত্তেজনা, ডলার রেটের অস্থিরতা এবং স্থানীয় চাহিদা—এই তিনটি বড় কারণে দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

নিচের টেবিলে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরিপ্রতি গড় মূল্য তুলে ধরা হলো:
📅 মাস 💰 ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ (ভরিপ্রতি গড় মূল্য)
মার্চ ২০২৫ ৳১০০,০০০
এপ্রিল ২০২৫ ৳১০২,৫০০
মে ২০২৫ ৳১০৫,০০০

বাংলাদেশের স্বর্ণের পরিমাপ

পরিমাপ একক পরিমাণ (গ্রামে) ব্যবহার মন্তব্য
১ ভরি ১১.৬৬৪ গ্রাম সবচেয়ে প্রচলিত একক ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহৃত
০.৫ ভরি ৫.৮৩২ গ্রাম ছোট পরিমাণ গহনার ছোট অংশে ব্যবহৃত
১ গ্রাম ১ গ্রাম আন্তর্জাতিক মান দাম নির্ধারণে ব্যবহৃত

স্বর্ণের ক্যারেট

ক্যারেট বিশুদ্ধতার হার ব্যবহার মন্তব্য
২৪ ক্যারেট ৯৯.৯% কমার্শিয়ালি কম ব্যবহৃত  নরম হওয়ায় গহনায় কম ব্যবহার
২২ ক্যারেট ~৯১.৬% সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত গহনায় জনপ্রিয়
২১ ক্যারেট ~৮৭.৫% কিছু গহনায় ব্যবহৃত কিছু দোকানে বিক্রি হয়
১৮ ক্যারেট ৭৫% ফ্যাশন গহনায় ব্যবহৃত শক্তিশালী ও টেকসই

"~" এই চিহ্নটি সাধারণত "প্রায়", "অনুমানত", বা "গড়পড়তা" বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি আনুমানিকতা বা নির্ধারিত মানের কাছাকাছি কোনো মান প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণ:
  • ৳১,৭০০০০ ~ → অর্থ: প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা
  • ~১১.৬৬৪ গ্রাম → অর্থ: প্রায় ১১.৬৬৪ গ্রাম
টিপ্সঃ স্বর্ণ কিনলে শুধু ভরি নয়, গ্রাম ও ক্যারেট দুটোই যাচাই করুন। বাজুস (BAJUS) এর নির্ধারিত দামে কেনা-বেচা করা নিরাপদ। গহনা কেনার সময় মেকিং চার্জ এবং ভ্যাট আলাদা হিসাব করুন।

বাংলাদেশে স্বর্ণের পরিমাপ সাধারণত ভরি, আনা, ও রতি এই ঐতিহ্যবাহী এককগুলোতে হয়ে থাকে। যদিও আধুনিক সময়ে ডিজিটাল মাপে গ্রাম ব্যবহার করা হয়, তবে সাধারণ ক্রেতা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এখনো পুরনো এককগুলো ব্যবহার করে থাকেন।

পরিমাপের সম্পর্ক ও মান
একক পরিমাণ (গ্রাম) সম্পর্ক মন্তব্য
১ ভরি ১১.৬৬৪ গ্রাম ১৬ আনা বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রচলিত একক
১ আনা ০.৭২৯ গ্রাম ৪ রতি আধা ভরি = ৮ আনা
১ রতি ০.১৮২২৫ গ্রাম - বর্তমানে কম ব্যবহৃত, তবে পরিচিত আছে

উদাহরণ:
  • আপনি যদি বলেন, “৮ আনার চেইন চাই”, তার মানে আপনি অর্ধ ভরি বা প্রায় ৫.৮৩২ গ্রাম স্বর্ণের গহনা চাচ্ছেন।
  • সোনার দামের হিসাব ও গহনার ওজন এখন সাধারণত গ্রামে দেওয়া হলেও, স্থানীয় বাজারে ভরি, আনা ও রতি এককের প্রচলন এখনো রয়েছে।
অনেক ক্রেতা এখনও এই পরিমাপগুলো বোঝেন, তাই গহনা কিনতে গেলে এগুলোর জ্ঞান থাকা জরুরি। কিছু দোকান এখনও দামের হিসাব আনা বা ভরি হিসেবে বলেন, তাই তুলনা করতে সুবিধা হয়।

সোনার দাম সহ একটি টেবিল (জুন ২০২৫ অনুযায়ী ২২ ক্যারেট):

একক ওজন (গ্রাম) দাম (৳) – ২২ ক্যারেট
১ রতি ০.১৮২২৫ ৳২,৬৫২ (প্রায়)
১ আনা ০.৭২৯ ৳১০,৬১০ (প্রায়)
১ ভরি ১১.৬৬৪ ৳১,৬৯,৯২১

গণনার সূত্র:
  • প্রতি গ্রাম ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম: ৳১৪,৫৬৮ (BAJUS অনুযায়ী)
  • তাই রতির দাম = ১৪,৫৬৮ × ০.১৮২২৫ ≈ ৳২,৬৫২
  • আনার দাম = ১৪,৫৬৮ × ০.৭২৯ ≈ ৳১০,৬১০

স্বর্ণের হিসাব সহজভাবে শিখে নিন

১৬ আনা ১ ভরি
৯৬ রতি ১ ভরি
১১.৬৬ গ্রাম ১ ভরি
৬ রতি ১ আনা
০.৭৩ গ্রাম ১ আনা
০.১২ গ্রাম ১ রতি
৮৬.৭৩ ভরি ১ কেজ

স্বর্ণ কেনার সময় করণীয়

বিষয় চেক করুন
১. বিশুদ্ধতা যাচাই (ক্যারেট)
☐ ২২ ক্যারেট (সবচেয়ে প্রচলিত)
☐ ২১ ক্যারেট
☐ ১৮ ক্যারেট (ফ্যাশন জুয়েলারি)
২. পরিমাণ যাচাই (ভরি/গ্রাম)
☐ দোকানের ওজন মাপে সঠিক কিনা দেখুন
☐ ১ ভরি = ১১.৬৬৪ গ্রাম নিশ্চিত করুন
৩. দাম যাচাই (BAJUS দামে কিনুন)
☐ সেদিনের BAJUS দাম যাচাই করুন
☐ দোকানের হালনাগাদ তালিকা দেখুন
৪. মেকিং চার্জ ও ভ্যাট
☐ মেকিং চার্জ কত শতাংশ তা জিজ্ঞেস করুন
☐ আলাদা করে ভ্যাট বা অতিরিক্ত চার্জ আছে কিনা দেখুন
৫. হালাল ও খাঁটি গহনা কিনুন ☐ ভালো মানের রেনাউনড ব্র্যান্ড বা দোকান থেকে কিনুন
৬. রসিদ বা ক্যাশ মেমো ☐ রসিদে ক্যারেট, ওজন, দাম ও চার্জ উল্লেখ আছে কিনা যাচাই করুন
৭. এক্সচেঞ্জ ও রিটার্ন নীতিমালা ☐ ভবিষ্যতে ফেরত বা পরিবর্তন করা যাবে কি না, সেই নিয়ম জেনে নিন
৮. পরীক্ষিত/হলমার্ক গহনা কিনুন ☐ BSTI বা নির্ভরযোগ্য পরীক্ষিত হলমার্ক আছে কি না দেখুন
৯. দোকানটির লাইসেন্স আছে কি না ☐ বাজুস/সরকারি লাইসেন্স আছে কিনা যাচাই করুন
১০. দোকানের রিভিউ ও রেপুটেশন ☐ পূর্ব অভিজ্ঞতা বা পরিচিতদের রিভিউ শুনুন

সোনার দামের ওঠানামার কারণ

বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম সপ্তাহে বা মাসে এক রকম থাকে না—এটি অনেকগুলো অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
সোনার-দামের-ওঠানামার-কারণ
নিচে কিছু মূল কারণ তুলে ধরা হলো যেগুলোর কারণে সোনার দাম বাড়ে বা কমে:

১. আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামের পরিবর্তন: বাংলাদেশের স্বর্ণ আমদানি মূলত বৈশ্বিক দামের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারে যদি দাম বাড়ে, বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও লন্ডনের বাজারে স্বর্ণের প্রতি আউন্স মূল্য বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ে।

২. ডলারের বিনিময় হার: স্বর্ণ মূলত ডলারে কেনাবেচা হয়। ফলে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়লে, একই স্বর্ণ আমদানি করতে বেশি টাকা খরচ হয়। এতে স্বর্ণের দাম বাড়ে।

৩. বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ও আমদানি নীতিমালা: যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। স্বর্ণ আমদানির সুযোগ কমলে বাজারে সরবরাহ কমে যায়, ফলে দাম বাড়ে।

৪. উৎসবকালীন চাহিদা: বিয়ের মৌসুম, ঈদ, পূজা বা অন্য উৎসবগুলোতে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত চাহিদা দাম বাড়াতে প্রভাব ফেলে।

৫. কর ও ভ্যাট নীতির পরিবর্তন: সরকার যদি স্বর্ণ আমদানিতে শুল্ক, ভ্যাট বা কর বাড়ায়, তাহলে বিক্রেতারা সেটি মূল্য বাড়িয়ে পুষিয়ে নেন। ফলে বাজারদর বেড়ে যায়।

এই উপাদানগুলো সম্মিলিতভাবে প্রতি সপ্তাহ বা মাসে সোনার দামে ওঠানামার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে।

স্বর্ণের দামের উপর আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব

বাংলাদেশে সোনার দাম নিজস্বভাবে নির্ধারিত হয় না—এটি অনেকটাই নির্ভরশীল আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, চীন ও ভারতের মতো প্রধান বাজারে স্বর্ণের দাম উঠলে বাংলাদেশের বাজারেও স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব পড়ে।

উদাহরণস্বরূপ:

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণ কিনতে শুরু করেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়ে যায়। বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানি করতে হয়, তাই বৈশ্বিক বাজারে দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারেও প্রতি ভরির দাম বেড়ে যায়।

আবার, যখন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ায়, তখন অনেকেই স্বর্ণের পরিবর্তে ডলারে বিনিয়োগ করে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার চাহিদা কমে, দাম কমে যায়—বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ে।

প্রভাবের ধরণ:
  • বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে ➜ বাংলাদেশে দাম বাড়ে
  • বিশ্ববাজারে দাম কমলে ➜ বাংলাদেশেও দাম কমার সম্ভাবনা
এই কারণে, বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন আন্তর্জাতিক স্বর্ণমূল্যের আপডেটের দিকে নজর রাখেন।

বাংলাদেশে স্বর্ণের দামের ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস ও বিশ্লেষকদের মতামত

বাংলাদেশের স্বর্ণবাজারে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে দামের ওঠানামা বেশ উল্লেখযোগ্য ছিল।
  • বাজুসের পর্যবেক্ষণ: বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হারের পরিবর্তন এবং স্থানীয় চাহিদার ওঠানামার কারণে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম প্রায়ই পরিবর্তিত হয়েছে।
  • আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস: বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্পট মার্কেটে বর্তমানে প্রতি আউন্স সোনার দাম প্রায় $৩,৩৬৪, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৳৪,০৬,৮২০ (১ ডলার = ১২১ টাকা হিসেবে)। বাংলাদেশের বাজারে এক আউন্স স্বর্ণের দাম বিশ্ববাজারের দরের চেয়েও প্রায় ৳৪৪,৮২৪ বেশি।
স্বর্ণের দাম পূর্বাভাস অনেকাংশেই অনুমানের ওপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা, স্থানীয় নীতিমালার পরিবর্তন এবং চাহিদার ওঠানামা দামের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই স্বর্ণে বিনিয়োগের আগে ভালোভাবে বাজার বিশ্লেষণ করা এবং প্রয়োজনে স্বর্ণ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

স্বর্ণ কেনার টিপস

স্বর্ণ শুধু অলংকার নয়—এটি অনেকের কাছে নিরাপদ সঞ্চয় বা বিনিয়োগও। তবে দাম প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে বলে সচেতন না হলে ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে। তাই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা ভালো:

গহনা কেনার সময়: উৎসব বা বিয়ের মৌসুমের আগে দাম কিছুটা বাড়তে পারে, তাই সময় থাকলে তার আগেই কেনা ভালো। বিশেষ ছাড় বা অফার চলাকালীন কিছুটা কম দামে গহনা পাওয়া যায় — বিশেষ করে রোজা, ঈদ, পূজা বা বছরের শেষের অফারগুলোতে নজর রাখুন। বাজুস অনুমোদিত দোকান থেকে কেনার চেষ্টা করুন এবং অবশ্যই পাকা রসিদ সংগ্রহ করুন।
স্বর্ণ-কেনার-টিপস
বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ কেনার সময়: বার বা কয়েন আকারে স্বর্ণ কেনা বিনিয়োগের জন্য বেশি সুবিধাজনক, কারণ এতে মজুরি লাগে না বা কম লাগে। স্বর্ণের বাজারদর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন — বিশেষ করে আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে মিলিয়ে চলুন। খুব অল্প সময়ে লাভ করতে চান এমন উদ্দেশ্যে স্বর্ণে বিনিয়োগ না করাই ভালো। এটি দীর্ঘমেয়াদী নিরাপদ সম্পদ হিসেবে কাজ করে।

অন্ততপক্ষে বাজার বিশ্লেষণ বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নিন। স্বর্ণে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত নয়। দাম কমলে ক্ষতি হতে পারে, যদিও দাম কমার সম্ভাবনা একদমই কম। তাই বিনিয়োগের আগে নিজের প্রয়োজন, বাজেট ও বাজার পরিস্থিতি মিলিয়ে সাবধানভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

FAQs

১. বাংলাদেশের স্বর্ণের দাম কিভাবে জানা যায়?
বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম প্রতিদিন নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। বাজুসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ও সংবাদমাধ্যমে এই তথ্য পাওয়া যায়।

২. ১ ভরি স্বর্ণে কত গ্রাম থাকে?
বাংলাদেশে ১ ভরি = ১১.৬৬৪ গ্রাম।

৩. স্বর্ণ কেন এত দামি?
স্বর্ণ একটি মূল্যবান ধাতু যা দুষ্প্রাপ্য, স্থায়ী ও রূপ-গুণে আকর্ষণীয়। এটি আন্তর্জাতিকভাবে মুদ্রার বিকল্প এবং নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় বলেই এর চাহিদা ও দাম বেশি।

৪. স্বর্ণের দাম প্রতিদিন কেন ওঠানামা করে?
আন্তর্জাতিক বাজারের দাম, ডলারের বিনিময় হার, স্থানীয় চাহিদা, সরকারী নীতিমালা—এসব কারণে প্রতিদিন দাম পরিবর্তিত হতে পারে।

৫. বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয়?
বাংলাদেশে বাজুস আন্তর্জাতিক বাজারদর, ডলার রেট এবং আমদানি ব্যয় বিবেচনায় প্রতিদিন দাম নির্ধারণ করে।

৬. গহনার বদলে সোনার বার বা কয়েন কেন বেশি লাভজনক?
সোনার বার বা কয়েনে মজুরি কম লাগে এবং তা বিক্রি করাও সহজ। বিনিয়োগের জন্য এগুলো বেশি উপযোগী।

৭. স্বর্ণ কোথা থেকে কিনলে নিরাপদ?
বাজুস অনুমোদিত দোকান থেকে স্বর্ণ কেনা সবচেয়ে নিরাপদ। স্বর্ণ কেনার সময় রসিদ ও সনদ নেওয়া নিশ্চিত করুন।

উপসংহার

বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম নানা কারণে ওঠানামা করে—আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, ডলারের বিনিময় হার, স্থানীয় চাহিদা ও নীতিমালার পরিবর্তন সবই একেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিগত কয়েক মাসে স্বর্ণের দাম বেড়েছে, তবে স্বর্ণের দাম কমার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই একটি সচেতন সিদ্ধান্তই আপনাকে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা করতে পারে।

Share This Post ...

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url