পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর
পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে সহজ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যার
একটি বাস্তবভিত্তিক গাইড এখানে পাবেন। ছাত্রছাত্রীদের শহজভাবে বোঝার জন্য তৈরি
এই লেখায় রয়েছে- ভাইভা পরীক্ষায় ধরে এমন প্রশ্নের সহজ সমাধান। যারা
পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন, তারা এখান থেকে প্রাইমারি নিবন্ধন সহ
যেকোন চাকরির পরিক্ষায় কমন পাবেন ইনশাআল্লাহ।
পদার্থবিজ্ঞান ভাইভার সঠিক প্রস্তুতির জন্য এই গাইড লাইন আপনাকে সাহায্য করবে ও
ভাইভাতে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। পদার্থবিজ্ঞান ভাইভা প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য
এসএসসি, এইচএসসি সাইন্সের শিক্ষার্থী ও পদার্থবিজ্ঞান থেকে পাশ করা
শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি আদর্শ রিসোর্স।
সূচিপত্রঃ পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর
এই আর্টিকেল থেকে আপনি পদার্থ বিজ্ঞানের ভাইভার যে সমস্ত বিষয় শিখতে পারবেন তা
এক নজরে দেখে নিন-
-
পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর
- গতি
- বল ও নিউটনের গতি সম্পর্কিত সূত্র
- কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
- মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ
- পদার্থের গঠন
- তরল
- শব্দ
- আলো / আলোক
- তাপ
- বিদ্যুৎ ও চুম্বকত্ব
- পরিমাপ
- ভেক্টর
- গতিসংক্রান্ত গাঠনিক বিশ্লেষণ
- সরল হারমোনিক কম্পন ও তরঙ্গ
- তাপগতিবিদ্যা
- গ্যাসের আচরণ ও গতিতত্ত্ব
- স্থির বিদ্যুৎ
- চল বিদ্যুৎ
- চৌম্বকত্ব
- বৈদ্যুতিক বর্তনী ও পরিব্যাপ্তি
- আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান
- গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞান FAQs
- উপসংহার
পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর
পদার্থবিজ্ঞান এমন একটি বিষয় যা প্রকৃতির গভীর রহস্য ও নিয়মকে ব্যাখ্যা করে।
এতে আমরা গতি, বল, তাপ, আলো, শব্দসহ নানা শক্তির রূপ ও প্রয়োগ সম্পর্কে শিখি।
পদার্থবিজ্ঞান শুধু বইয়ের বিষয় নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনে এর প্রয়োগ রয়েছে
সর্বত্র।
এই বিষয়টি ভালভাবে বুঝে পড়লে- এটি হয়ে ওঠে সবচেয়ে মজার ও যুক্তিনির্ভর বিষয়।
তাই শিক্ষার্থীদের বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি শেখানো খুবই কার্যকর। চলুন আমরা
এখন পদার্থ বিজ্ঞানের প্রতিটি অধ্যায়ের পদার্থ বিজ্ঞান সম্পর্কিত ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর জেনে আসি। মনে রাখবেন ভাইবা
পরীক্ষায় শুধুমাত্র বেসিক ধারণা থেকে প্রশ্ন করা হয় তাই এখানে শুধুমাত্র
বেসিক বিষয়গুলো সংযোজন করা হয়েছে।
গতি (Motion)
“গতি” অধ্যায় থেকে মূলত: গতি, বেগ, ত্বরণ, সরণ, দূরত্ব, গতি সূত্র — এই টপিকগুলো
ভাইভায় বেশি আসে। সূত্রগুলো মুখস্থ থাকলে এবং ব্যাসিক পার্থক্যগুলো বোঝা থাকলে
সহজেই ভাইভা ভালো হবে যদি এই অধ্যায় থেকে প্রশ্ন করে।
ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: গতি কাকে বলে?
উত্তর: কোনো বস্তু স্থির অবস্থান পরিবর্তন করলে বা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়
গেলে তাকে গতি বলে।
প্রশ্ন ২: গতি ও স্থিতি মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: গতি মানে হলো অবস্থান পরিবর্তন করা, আর স্থিতি মানে হলো একই জায়গায়
থাকা। অর্থাৎ, বস্তু যদি অবস্থান না বদলায় তবে তা স্থির, আর বদলালে গতি আছে।
প্রশ্ন ৩: কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (km/h) থেকে মিটার প্রতি সেকেন্ডে (m/s)
কিভাবে রূপান্তর করা হয়?
উত্তর: 1 কিমি/ঘণ্টা = (1000/3600) মি/সেকেন্ড = 5/18 মি/সেকেন্ড
- কিমি/ঘণ্টা কে মি/সেকেন্ড করতে হলে গতি × (5/18)
- আর মি/সেকেন্ড কে কিমি/ঘণ্টা করতে হলে গতি × (18/5)
প্রশ্ন ৪: বেগ কাকে বলে?
উত্তর: বেগ হল কোনো বস্তুর একক সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্ব।
- বেগ = অতিক্রান্ত দূরত্ব / সময়
- সূত্র: v = d / t
প্রশ্ন ৫: ত্বরণ কাকে বলে?
উত্তর: ত্বরণ হলো বেগ পরিবর্তনের হার। অর্থাৎ, সময় অনুযায়ী বেগ যতটুকু বাড়ে বা
কমে, তাই ত্বরণ।
- ত্বরণ = বেগের পরিবর্তন / সময়
- সূত্র: a = (v - u) / t
(এখানে, v = চূড়ান্ত বেগ, u = প্রারম্ভিক বেগ, t = সময়)
প্রশ্ন ৬: ধ্রুব গতি ও অতি-ত্বরণগতির মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ধ্রুব গতি: বেগ যদি অপরিবর্তিত থাকে, তবে সেটা ধ্রুব গতি। অতি-ত্বরণগতি:
বেগ যদি প্রতি সেকেন্ডে পরিবর্তিত হয়, তবে সেটা অতি-ত্বরণগতি।
প্রশ্ন ৭: গড় বেগ কাকে বলে?
উত্তর: গড় বেগ মানে মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব ভাগ করা মোট সময় দিয়ে।
- সূত্র: v̄ = d / t
প্রশ্ন ৮: সরণ ও দূরত্বের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: সরণ হলো একটি নির্দিষ্ট দিকসহ ক্ষুদ্রতম দূরত্ব। দূরত্ব হলো মোট চলার
পরিমাণ, দিকের দরকার নেই।
প্রশ্ন ৯: ত্বরণের একক কী?
উত্তর: SI একক হলো: মিটার/সেকেন্ড² (m/s²)
প্রশ্ন ১০: মুক্তপতন কাকে বলে?
উত্তর: কোনো বস্তু যদি কেবল মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে নিচে পড়ে, তখন তাকে
মুক্তপতন বলে।
প্রশ্ন ১১: গতি সম্পর্কিত সূত্রগুলো কী কী?
উত্তর: তিনটি গতি সূত্র আছে:
- v = u + at
- s = ut + (1/2)at²
- v² = u² + 2as
এখানে,
- v = শেষ বেগ
- u = শুরু বেগ
- a = ত্বরণ
- t = সময়
- s = সরণ
প্রশ্ন ১২: যদি কোনো বস্তুর ত্বরণ না থাকে, তবে কোন সূত্র প্রযোজ্য হবে?
উত্তর: যদি ত্বরণ না থাকে (a = 0), তবে v = u, এবং s = vt হবে।
প্রশ্ন ১৩: গতি নির্ণয়ের জন্য কোন কোন মান জানা প্রয়োজন?
উত্তর: গতি নির্ণয়ের জন্য সময় ও অতিক্রান্ত দূরত্ব জানা প্রয়োজন।
প্রশ্ন ১৪: গতি কি আপেক্ষিক নাকি স্থির?
উত্তর: গতি আপেক্ষিক। একটি বস্তু একটি ব্যক্তির কাছে স্থির মনে হতে পারে,
আবার অন্য ব্যক্তির কাছে গতিশীল।
প্রশ্ন ১৫: রূপান্তর সূত্র সম্পর্কে বলুন -
- কিমি/ঘণ্টা → মি/সেকেন্ড: গতি × (5/18)
- মি/সেকেন্ড → কিমি/ঘণ্টা: গতি × (18/5)
বল ও নিউটনের গতি সম্পর্কিত সূত্র
এই অধ্যায়টি থেকে ভাইভাতে প্রায় সবসময় প্রশ্ন আসে, এবং প্রশ্নগুলো বেশ ছোট হলেও
ধারণা স্পষ্ট না থাকলে উত্তর দিতে সমস্যা হয়। তাই নিচে এই অধ্যায়টি থেকে ভাইভা
উপযোগী গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও সহজ ভাষায় উত্তর দেওয়া হলো।
ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: বল (Force) কাকে বলে?
উত্তর: বল হলো এমন একটি চাপ বা টান যা বস্তুকে চলতে, থামতে বা গতির দিক
পরিবর্তন করতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ২: বলের একক কী?
উত্তর: SI একক: নিউটন (N)
- ১ নিউটন = এমন একটি বল, যা ১ কেজি ভরের বস্তুতে প্রতি সেকেন্ডে ১ মিটার/সেকেন্ড² ত্বরণ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ৩: বলের মান নির্ণয়ের সূত্র কী?
উত্তর: F = ma
এখানে,
- F = বল,
- m = ভর,
- a = ত্বরণ
প্রশ্ন ৪: নিউটনের গতি সূত্র কয়টি এবং কী কী?
উত্তর: নিউটনের গতি সূত্র ৩টি:
প্রথম সূত্র (Inertia বা জড়তা): কোনো বস্তু স্থির বা গতি অবস্থায় থাকবে যতক্ষণ
না বাহ্যিক বল প্রয়োগ হয়।
- অর্থ: কোনো কিছু নিজে থেকে চলতে বা থামতে পারে না।
দ্বিতীয় সূত্র (F = ma): বলের পরিমাণ বস্তুতে উৎপন্ন ত্বরণের সাথে সরাসরি
সম্পর্কিত।
- সূত্র: F = ma
তৃতীয় সূত্র (Action-Reaction): প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীতে সমান ও বিপরীত
প্রতিক্রিয়া থাকে।
- যেমন, আমরা মাটিকে চাপ দিলে মাটিও আমাদের পায়ের উপর সমান বল প্রয়োগ করে।
প্রশ্ন ৫: বল একটি ভেক্টর রাশি কেন?
উত্তর: কারণ বলের মান আছে এবং এটি একটি নির্দিষ্ট দিকে কাজ করে। তাই এটি ভেক্টর
রাশি।
প্রশ্ন ৬: জড়তা (Inertia) কাকে বলে?
উত্তর: বস্তু নিজ অবস্থান (স্থিতি বা গতি) বজায় রাখার যে প্রবণতা, তাকে জড়তা
বলে।
প্রশ্ন ৭: ভর ও জড়তার সম্পর্ক কী?
উত্তর: যত বেশি ভর, তত বেশি জড়তা। অর্থাৎ ভারী বস্তু সহজে অবস্থান বদলায় না।
প্রশ্ন ৮: নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র থেকে বলের একক নির্ণয় দেখাও।
উত্তর: নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র: F = ma
- একক: F = কেজি × মি/সেকেন্ড²
- বলের একক = কেজি·মি/সেকেন্ড² = নিউটন (N)
প্রশ্ন ৯: বল প্রয়োগে যদি ত্বরণ না হয়, তবে কি বল নেই?
উত্তর: না, বল থাকতে পারে, তবে বলের পরিমাণ যথেষ্ট না হওয়ায় ত্বরণ হয়নি।
অন্যদিকে, ঘর্ষণ বা অন্য কোনো বল সেটাকে ব্যালেন্স করে ফেলেছে।
প্রশ্ন ১০: প্রতিক্রিয়া বলের দিক কীভাবে হয়?
উত্তর: প্রতিক্রিয়া বল সবসময় ক্রিয়া বলের বিপরীত দিকে হয়।
প্রশ্ন ১১: বল প্রয়োগ করলে বস্তুর গতি পরিবর্তন হতে পারে কীভাবে?
উত্তর: বল প্রয়োগে বস্তু থামতে পারে, চলতে শুরু করতে পারে, বা চলতে থাকলে গতি
বা দিক পরিবর্তন হতে পারে।
প্রশ্ন ১২: ১ নিউটন বল বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ১ কেজি ভরের কোনো বস্তুতে ১ মি/সেক² ত্বরণ ঘটাতে যে পরিমাণ বল লাগে, তা
১ নিউটন।
প্রশ্ন ১৩: যদি ভর দ্বিগুণ করা হয়, বল কত হয়?
উত্তর: বল (F = ma) ⇒ ভর দ্বিগুণ হলে, ত্বরণ একই থাকলে বলও দ্বিগুণ হয়।
অতিরিক্ত তথ্য - গুরুত্বপূর্ণ সূত্র:
- বলের সূত্র: F = ma
- বলের একক: 1 N = 1 kg·m/s²
- ভর দ্বিগুণ করলে: F = 2ma (যদি a অপরিবর্তিত থাকে)
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
এই অধ্যায়টি থেকে প্রায় প্রতিটি ভাইভা পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। প্রশ্নগুলো বেশ ছোট
হলেও অনেকেই বিভ্রান্ত হয়। কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি" অধ্যায়টি মূলত ৩টি বিষয়ে ঘুরে
ফিরে প্রশ্ন করে। যেমন-
- কাজ হচ্ছে কিনা, হলে কতটা?
- সময়ে কাজ কতটা হয়েছে (ক্ষমতা)?
- কাজ করার সামর্থ্য (শক্তি)
সবগুলো বিষয় বুঝতে পারলে এই অধ্যায়টি ভাইভাতে একদম সহজ হয়ে যায়।
ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: কাজ (Work) কাকে বলে?
উত্তর: যখন কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে তার অবস্থান পরিবর্তন করা হয়, তখন
সেখানে কাজ হয়।
প্রশ্ন ২: কাজ করার জন্য কী কী দরকার?
উত্তর: কাজ করার জন্য দুটি বিষয় দরকার:
- বস্তুতে বল প্রয়োগ
- বলের দিকে সরণ
প্রশ্ন ৩: কাজের সূত্র কী?
উত্তর: W = F × d × cosθ
এখানে,
- W = কাজ,
- F = বল,
- d = সরণ,
- θ = বল ও সরণের মধ্যকার কোণ
যদি বল ও সরণ একদিকে হয়:
- W = F × d
প্রশ্ন ৪: কাজের একক কী?
উত্তর: SI একক: জুল (Joule)
- ১ জুল = ১ নিউটন বল × ১ মিটার সরণ
প্রশ্ন ৫: কবে কাজ শূন্য (০) হয়?
উত্তর: যদি বল দেওয়া হয় কিন্তু বস্তু না সরে, বা বল ও সরণ পরস্পর লম্বভাবে থাকে
(θ = 90°), তখন কাজ হয় না।
প্রশ্ন ৬: নেগেটিভ কাজ কাকে বলে?
উত্তর: যদি বল ও সরণের দিক বিপরীত হয় (θ > 90°), তখন কাজ হয় নেতিবাচক।
- যেমন: ব্রেক চাপলে গাড়ি থামে—এটা নেতিবাচক কাজ।
প্রশ্ন ৭: ক্ষমতা (Power) কাকে বলে?
উত্তর: ক্ষমতা হলো একক সময়ে সম্পাদিত কাজের পরিমাণ।
- সূত্র: P = W / t
(P = ক্ষমতা, W = কাজ, t = সময়)
প্রশ্ন ৮: ক্ষমতার একক কী?
উত্তর: SI একক: ওয়াট (Watt)
- ১ ওয়াট = ১ জুল কাজ / ১ সেকেন্ড
প্রশ্ন ৯: শক্তি (Energy) কাকে বলে?
উত্তর: শক্তি হলো কাজ করার সামর্থ্য।
- কোনো বস্তু যত বেশি কাজ করতে পারে, তার শক্তিও তত বেশি।
প্রশ্ন ১০: শক্তির একক কী?
উত্তর: SI একক: জুল (Joule)
প্রশ্ন ১১: ১ কিলোওয়াট ঘণ্টা (kWh) কত জুল?
উত্তর: ১ কিলোওয়াট ঘণ্টা = ৩.৬ × ১০⁶ জুল।
প্রশ্ন ১২: বল আছে, কিন্তু কাজ হয় না—এমন উদাহরণ দাও।
উত্তর: আপনি যদি দেয়াল ঠেলে ধাক্কা দেন কিন্তু দেয়াল না সরে, তবে বল প্রয়োগ
হয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি।
প্রশ্ন ১৩: যান্ত্রিক শক্তি কী?
উত্তর: যান্ত্রিক শক্তি হলো অবস্থানগত শক্তি (স্থিতিশক্তি) ও চলতিশক্তির
(গতিশক্তি) যোগফল।
- E = PE + KE
প্রশ্ন ১৪: গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তির মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: গতিশক্তি (Kinetic Energy): বস্তুর গতির জন্য যা শক্তি লাগে।
- সূত্র: KE = (1/2)mv²
স্থিতিশক্তি (Potential Energy): বস্তুতে সংরক্ষিত শক্তি, অবস্থানজনিত।
- সূত্র: PE = mgh
(এখানে, m = ভর, v = বেগ, g = মাধ্যাকর্ষণ ত্বরণ, h = উচ্চতা)
প্রশ্ন ১৫: গৃহস্থালি বিদ্যুৎ বিলের একক কী?
উত্তর: কিলোওয়াট-ঘণ্টা (kWh) — এটিই বিদ্যুৎ বিলের একক।
প্রশ্ন ১৬: কোন ব্যক্তি বেশি ক্ষমতাবান: ১০০ জুল কাজ ৫ সেকেন্ডে, না ১০০ জুল
কাজ ২ সেকেন্ডে?
উত্তর: যিনি কম সময়ে একই পরিমাণ কাজ করেন, তার ক্ষমতা বেশি।
- ২ সেকেন্ডে কাজ করা ব্যক্তি বেশি ক্ষমতাবান।
মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ
এই অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতিটি ভাইভা পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে—বিশেষ করে নিউটনের
মহাকর্ষ সূত্র, ওজন বনাম ভর, এবং অভিকর্ষীয় বলের প্রকৃতি নিয়ে। তাই আমরা নিচে
দিয়েছি ভাইভা উপযোগী প্রশ্ন-উত্তর সহজ ভাষায়। এই প্রশ্নগুলো বুঝে ফেললে মহাকর্ষ
নিয়ে ভাইভাতে আপনি ভাল করতে পারবেন।
ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: মহাকর্ষ বল কাকে বলে?
উত্তর: মহাকর্ষ বল হলো দুটি ভরের বস্তু একে অপরকে যে বল দ্বারা আকর্ষণ করে,
সেটিই মহাকর্ষ বল।
প্রশ্ন ২: মহাকর্ষ বলের প্রকৃতি কেমন?
উত্তর: এটি সর্বদা আকর্ষণকারী (পুলিং ফোর্স), আর এটি একটি ভেক্টর রাশি।
প্রশ্ন ৩: মহাকর্ষ বলের সূত্র কী?
উত্তর: সূত্রঃ F = G × (m₁ × m₂) / r²
এখানে,
- F = মহাকর্ষ বল,
- m₁ ও m₂ = দুই বস্তুর ভর,
- r = তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব,
- G = মহাকর্ষ ধ্রুবক
প্রশ্ন ৪: G এর মান ও একক কী?
উত্তর: G = 6.674 × 10⁻¹¹ N·m²/kg²
- এটি একটি ধ্রুবক, মহাবিশ্বে সর্বত্র একই।
প্রশ্ন ৫: ওজন (Weight) কাকে বলে?
উত্তর: বস্তুর উপর পৃথিবী যে মহাকর্ষ বল প্রয়োগ করে, সেটিই ওজন।
- সূত্র: W = mg
(m = ভর, g = মাধ্যাকর্ষণ ত্বরণ)
প্রশ্ন ৬: ভর (Mass) ও ওজনের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ভর হলো বস্তুর পরিমাণ, এটা সব জায়গায় একই। ওজন হলো মহাকর্ষ বল, এটি
স্থানের উপর নির্ভর করে।
- উদাহরণ: চাঁদে ওজন কম, কিন্তু ভর একই থাকে।
প্রশ্ন ৭: ভর ও ওজন কোন রাশি?
উত্তর: ভর → স্কেলার রাশি। ওজন → ভেক্টর রাশি (কারণ এর দিক থাকে, নিচের দিকে)।
প্রশ্ন ৮: ওজন কমে যায় কখন?
উত্তর: যখন g (মাধ্যাকর্ষণ ত্বরণ) কমে যায়, তখন ওজন কমে যায়। যেমন, চাঁদে g কম
→ ওজন কম।
প্রশ্ন ৯: মহাকর্ষ বল দূরত্বের সাথে কেমন সম্পর্কযুক্ত?
উত্তর: দূরত্ব বাড়লে মহাকর্ষ বল বর্গমাত্রায় কমে।
- F ∝ 1/r²
প্রশ্ন ১০: G ও g কি এক?
উত্তর: না, G হলো মহাকর্ষ ধ্রুবক (সব জায়গায় এক), আর g হলো কোনো নির্দিষ্ট
স্থানে মাধ্যাকর্ষণ ত্বরণ, যা পরিবর্তনশীল।
প্রশ্ন ১১: পৃথিবীতে g এর মান কত?
উত্তর: পৃথিবীর পৃষ্ঠে গড় g = 9.8 m/s²
প্রশ্ন ১২: মহাকর্ষ বল ছাড়া আমাদের কী কী সমস্যা হতো?
উত্তর: মহাকর্ষ বল ছাড়া আমাদের যা সমস্যা হতো তা নিম্নরূপ নিচে দেওয়া হল-
- আমরা মাটিতে দাঁড়াতে পারতাম না
- পানি নদীতে থাকতো না
- চাঁদ ও উপগ্রহ ঘুরতো না
- বস্তু মাটিতে পড়তো না
প্রশ্ন ১৩: G এর একক কিভাবে বের করবো?
উত্তর: G এর একক যেভাবে বের করবেন। সূত্র:
- F = G(m₁m₂)/r²
- ⇒ G = Fr² / (m₁m₂)
- ⇒ একক = (N·m²)/kg²
প্রশ্ন ১৪: অভিকর্ষ বল কাকে বলে?
উত্তর: যে কোনো দুটি বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে—এই আকর্ষণ শক্তিকে অভিকর্ষ বল
বলে।
- মহাকর্ষ বল, তড়িৎ বল, চৌম্বক বল—all are attractive forces।
জেনে রাখুন:
- মহাকর্ষ বল → সব সময় আকর্ষণ করে
- G → ধ্রুবক, g → পরিবর্তনশীল
- ওজন = ভর × g
- মহাকর্ষ বল দুই বস্তুর ভরের গুণফলের সাথে আনুপাতিক, আর দূরত্বের বর্গের সাথে বিপরীতানুপাতিক
পদার্থের গঠন
এই অধ্যায় থেকে ভাইভায় প্রায়ই অণু, পরমাণু, আধান, আয়ন, অণুর ধরণ, এবং কণার গঠন
সম্পর্কিত ছোট ছোট প্রশ্ন আসে। এই অধ্যায়টি ভাইভায় বেশ স্কোরিং। প্রশ্নগুলো সহজ
হলেও ঘন ঘন ভাইভাতে এই অধ্যায় থেকে প্রশ্ন ধরে। তাই নিচের উত্তরগুলো ভালোভাবে
মুখস্থ থাকলে ভাইভায় অসুবিধা হবে না।
ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর: যে বস্তু স্থান অধিকার করে এবং যার ভর আছে তাকে পদার্থ বলে।
- যেমন: পানি, বায়ু, লোহা।
প্রশ্ন ২: পদার্থ কী কী দিয়ে গঠিত?
উত্তর: পদার্থ যা যা দিয়ে গঠিত-
- পদার্থ গঠিত → অণু দিয়ে
- অণু গঠিত → পরমাণু দিয়ে
- পরমাণু গঠিত → মৌলিক কণিকা দিয়ে (ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন)
প্রশ্ন ৩: পরমাণু কাকে বলে?
উত্তর: যে কণার আরও বিভাজন করলে মৌলিক গুণাবলি নষ্ট হয় না, তাকে পরমাণু বলে।
প্রশ্ন ৪: অণু কাকে বলে?
উত্তর: এক বা একাধিক পরমাণু একত্র হয়ে যে কণিকা গঠন করে, সেটি অণু।
প্রশ্ন ৫: মৌলিক কণিকা কয়টি ও কী কী?
উত্তর: মৌলিক কণিকা ৩টি-
- ইলেকট্রন (ঋণাত্মক আধান)
- প্রোটন (ধনাত্মক আধান)
- নিউট্রন (আধানহীন)
প্রশ্ন ৬: একটি পরমাণু কীভাবে গঠিত?
উত্তর: কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস (প্রোটন + নিউট্রন)। নিউক্লিয়াসের চারপাশে
কক্ষপথে ঘুরে ইলেকট্রন।
প্রশ্ন ৭: পরমাণুর আধান কেমন?
উত্তর: সাধারণভাবে পরমাণু নিরপেক্ষ (নিরাহরণ), কারণ প্রোটন সংখ্যা = ইলেকট্রন
সংখ্যা।
প্রশ্ন ৮: আয়ন কাকে বলে?
উত্তর: যে পরমাণু ইলেকট্রন হারায় বা গ্রহণ করে চার্জযুক্ত হয়, তাকে আয়ন বলে।
- ইলেকট্রন হারালে → ধনায়ন
- ইলেকট্রন নিলে → ঋণায়ন
প্রশ্ন ৯: ধনায়ন ও ঋণায়নের পার্থক্য কী?
উত্তর: ধনায়ন: ইলেকট্রন হারানো → ধনাত্মক আয়ন। ঋণায়ন: ইলেকট্রন গ্রহণ →
ঋণাত্মক আয়ন।
প্রশ্ন ১০: ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের আপেক্ষিক ভর ও আধান কত?
উত্তর: ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের আপেক্ষিক ভর ও আধান-
- প্রোটন: ভর = ১, আধান = +১
- নিউট্রন: ভর = ১, আধান = ০
- ইলেকট্রন: ভর ≈ ১/১৮৩৬, আধান = –১
প্রশ্ন ১১: পরমাণুর ভর কোথায় থাকে?
উত্তর: মূলত পরমাণুর ভর নিউক্লিয়াসে থাকে, কারণ প্রোটন ও নিউট্রনের ভর আছে।
প্রশ্ন ১২: পদার্থের তিনটি অবস্থা কী কী?
উত্তর: পদার্থের তিনটি অবস্থা-
- কঠিন (Solid)
- তরল (Liquid)
- গ্যাস (Gas)
প্রশ্ন ১৩: কঠিন, তরল ও গ্যাস পদার্থে কণার বিন্যাস কেমন?
উত্তর: কঠিন, তরল ও গ্যাস পদার্থে কণার বিন্যাস-
- কঠিন: কণিকাগুলো ঘনভাবে গাদাগাদি করে থাকে
- তরল: কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে
- গ্যাস: কণাগুলো খুব ফাঁকায় থাকে
প্রশ্ন ১৪: কণার গতি কীভাবে পদার্থের অবস্থা নির্ধারণ করে?
উত্তর: কণার গতি যেভাবে পদার্থের অবস্থা নির্ধারণ করে-
- কণার গতি বেশি হলে → গ্যাস
- গতি মাঝারি হলে → তরল
- গতি কম হলে → কঠিন
প্রশ্ন ১৫: নিউক্লিয়াস কাকে বলে?
উত্তর: পরমাণুর কেন্দ্র, যেখানে প্রোটন ও নিউট্রন থাকে, তাকে নিউক্লিয়াস বলে।
প্রশ্ন ১৬: ইলেকট্রন কোথায় থাকে?
উত্তর: ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে শক্তিস্তরে (shell) ঘোরে।
জেনে রাখুন:
- সব পদার্থ পরমাণু দিয়ে গঠিত।
- পরমাণুতে আছে নিউক্লিয়াস আর চারপাশে ইলেকট্রনচ।
- প্রোটন ধনাত্মক, ইলেকট্রন ঋণাত্মক, নিউট্রন নিরপেক্ষ।
- পদার্থের অবস্থা নির্ভর করে কণার বিন্যাস ও গতির উপর।
তরল
এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করব তরলের গুণাবলি, চাপ, প্যাসকেলের সূত্র, আর্কিমিডিসের
সূত্র, আপদের চাপ, ভাসমান ও ডুবন্ত বস্তুর আচরণ ইত্যাদি। নিচে ভাইভা পরীক্ষার
জন্য সম্ভাব্য প্রশ্ন-উত্তর সাজানো হলো সহজ ভাষায়, যাতে যেকোনো ছাত্রছাত্রী বুঝতে
পারে।
ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: তরল কাকে বলে?
উত্তর: যে পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন থাকে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার থাকে না, তাকে
তরল বলে।
- উদাহরণ: পানি, দুধ, তেল।
প্রশ্ন ২: তরলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী কী?
উত্তর: তরলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য-
- নির্দিষ্ট আয়তন থাকে
- নিজস্ব আকৃতি থাকে না
- পাত্রের আকৃতি নেয়
- প্রবাহিত হতে পারে
প্রশ্ন ৩: চাপ (Pressure) কাকে বলে?
উত্তর: একক ক্ষেত্রফলে খাড়া করে প্রয়োগ করা বলকে চাপ বলে।
- সূত্র: P = F / A
(P = চাপ, F = বল, A = ক্ষেত্রফল)
প্রশ্ন ৪: চাপের একক কী?
উত্তর: SI একক → পাসকেল (Pa)
- 1 Pa = 1 N/m²
প্রশ্ন ৫: তরলের চাপ কীভাবে কাজ করে?
উত্তর: তরল চাপ সব দিকে সমানভাবে প্রয়োগ করে এবং নিচের দিকে বেশি হয় (কারণ নিচে
তরলের স্তর বেশি)।
প্রশ্ন ৬: চাপ গভীরতার উপর কেমনভাবে নির্ভর করে?
উত্তর: গভীরতা বাড়লে চাপও বাড়ে।
- সূত্র: P = hρg
(h = গভীরতা, ρ = ঘনত্ব, g = মাধ্যাকর্ষণ ত্বরণ)
প্রশ্ন ৭: প্যাসকেলের সূত্র কী?
উত্তর: তরলের কোনো এক অংশে চাপ প্রয়োগ করলে সেটি তরলের সবদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে
পড়ে।
প্রশ্ন ৮: প্যাসকেলের সূত্রের ব্যবহার কোথায় দেখা যায়?
উত্তর: প্যাসকেলের সূত্রের ব্যবহার দেখা যায়-
- হাইড্রলিক প্রেস
- হাইড্রলিক ব্রেক
- হাইড্রলিক লিফট
প্রশ্ন ৯: আর্কিমিডিসের সূত্র কী বলে?
উত্তর: যে কোনো বস্তু তরলে নিমজ্জিত হলে, সেটি তরলের ওজনের সমান একটি আপথিত বল
অনুভব করে।
- আপথিত বল = স্থানচ্যুত তরলের ওজন
প্রশ্ন ১০: আপথিত বল কাকে বলে?
উত্তর: তরলে নিমজ্জিত বস্তুর উপর তরল একটি উর্ধ্বমুখী বল প্রয়োগ করে, সেটিই
আপথিত বল (Buoyant Force)।
প্রশ্ন ১১: কোন বস্তুরা তরলে ভাসে আর কোনগুলো ডুবে যায়?
উত্তর: কোন বস্তুরা তরলে ভাসে আর কোনগুলো ডুবে যায় জেনে নিন-
- যদি বস্তুর ঘনত্ব < তরলের ঘনত্ব → ভাসে
- যদি বস্তুর ঘনত্ব > তরলের ঘনত্ব → ডুবে যায়
- সমান হলে → সম্পূর্ণভাবে ডুবে ভাসে
প্রশ্ন ১২: তরল ঘনত্ব কাকে বলে?
উত্তর: ঘনত্ব = ভর / আয়তন
- সূত্র: ρ = m / V
(SI একক: kg/m³)
প্রশ্ন ১৩: তরলে বস্তু ভাসার শর্ত কী?
উত্তর: যখন আপথিত বল = বস্তুটির ওজন, তখন বস্তুটি ভাসে।
প্রশ্ন ১৪: কোন কোন বিষয় তরলের চাপ নির্ভর করে?
উত্তর: যেসব বিষয় তরলের চাপ নির্ভর করে তা নিম্নরূপ নিচে দেওয়া হল-
* তরলের ঘনত্ব (ρ)
* গভীরতা (h)
* মাধ্যাকর্ষণ ত্বরণ (g)
- সূত্র: P = hρg
প্রশ্ন ১৫: তরলের কিছু ব্যবহারিক উদাহরণ দিন।
উত্তর: উদাহরণ সমূহ-
- পানির স্তরে ডুবন্ত নৌকা
- হাইড্রলিক ব্রেক
- প্লবতা পরিক্ষা (floatation test)
কিছু পয়েন্ট মনে রাখুন:
- তরল সবদিকে সমানভাবে চাপ দেয়।
- গভীরতা বেশি → চাপ বেশি।
- প্যাসকেল বলেছিলেন, চাপ সবদিকে সমানভাবে যায়।
- আর্কিমিডিস বললেন, বস্তু নিচে গেলে তরল তাকে উঁচুতে তুলতে চায়।
- আপথিত বল ও ওজনের তুলনায় বস্তু ভাসবে না ডুববে সেটা নির্ধারিত হয়।
- আপথিত বল = স্থানচ্যুত তরলের ওজন
শব্দ
এই অধ্যায়টি শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বাস্তব জীবনের
অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত। এই অধ্যায়ের প্রশ্নগুলো প্রায়ই ভাইভাতে আসে, বিশেষ করে
শব্দের প্রচার, প্রতিধ্বনি, এবং শ্রাব্যতার ব্যাপারগুলো থেকে। ছাত্রছাত্রীরা যদি
নিচের প্রশ্ন–উত্তর ভালোভাবে অনুশীলন করে, তাহলে ভাইভা পরীক্ষায় ভালো নম্বর তোলা
সহজ হবে। নিচে দেওয়া হলো ভাইভা পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর।
ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: শব্দ কাকে বলে?
উত্তর: যে তরঙ্গ আমাদের কানে পৌঁছে শ্রবণ অনুভূতি সৃষ্টি করে, তাকে শব্দ বলে।
প্রশ্ন ২: শব্দ কিভাবে উৎপন্ন হয়?
উত্তর: শব্দ উৎপন্ন হয় কম্পনের মাধ্যমে। যখন কোনো বস্তুর কণা দ্রুত কম্পিত হয়,
তখন তা শব্দ তৈরি করে।
প্রশ্ন ৩: শব্দের প্রকৃতি কেমন?
উত্তর: শব্দ হলো একটি যান্ত্রিক তরঙ্গ এবং এটি অনুদৈর্ঘ্য (longitudinal)।
প্রশ্ন ৪: শব্দ কি শূন্য মাধ্যমে চলতে পারে?
উত্তর: না, শব্দকে প্রচার হতে হলে মাধ্যম দরকার হয় (যেমন: বায়ু, জল, কঠিন)।
শূন্য মাধ্যমে শব্দ চলতে পারে না।
প্রশ্ন ৫: শব্দের তরঙ্গ কত প্রকার?
উত্তর: তরঙ্গ দুই ধরনের হতে পারে –
- অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ (যেমন: শব্দ তরঙ্গ)
- আনুপ্রস্থ তরঙ্গ (যেমন: আলো তরঙ্গ)
প্রশ্ন ৬: শব্দের গতি কোন মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: শব্দের গতি সবচেয়ে বেশি কঠিন পদার্থে, তারপরে তরলে, এবং সবচেয়ে কম
গ্যাসে।
- কঠিন > তরল > গ্যাস
প্রশ্ন ৭: বায়ুতে শব্দের গতি কত?
উত্তর: প্রায় ৩৩২ মিটার/সেকেন্ড (২০° C তাপমাত্রায়)।
প্রশ্ন ৮: শব্দ প্রচারে কোন কণার প্রয়োজন হয়?
উত্তর: শব্দ প্রচারে মাধ্যমের কণার প্রয়োজন হয়, কারণ কণারা একে অন্যকে ধাক্কা
দিয়ে শব্দের তরঙ্গ ছড়িয়ে দেয়।
প্রশ্ন ৯: শব্দের কম্পাঙ্ক (frequency) কী?
উত্তর: প্রতি সেকেন্ডে কণার কম্পনের সংখ্যা হলো কম্পাঙ্ক।
- SI একক: হার্টজ (Hz)
প্রশ্ন ১০: শ্রাব্য শব্দ কী?
উত্তর: যে শব্দ মানুষের কানে শোনা যায়, তার কম্পাঙ্ক ২০ Hz – ২০,০০০ Hz এর
মধ্যে থাকে। এটিকে শ্রাব্য শব্দ বলে।
প্রশ্ন ১১: অশ্রাব্য শব্দ কী?
উত্তর: যে শব্দ মানুষের কানে শোনা যায় না (২০ Hz এর কম বা ২০,০০০ Hz এর বেশি),
তাকে অশ্রাব্য শব্দ বলে।
প্রশ্ন ১২: প্রতিধ্বনি কাকে বলে?
উত্তর: কোনো কণ্ঠস্বর বা শব্দ কোনো প্রতিফলক পৃষ্ঠে ধাক্কা খেয়ে ফিরে এলে,
তাকে প্রতিধ্বনি বলে।
- প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শব্দের প্রতিফলন ০.১ সেকেন্ডের মধ্যে হতে হবে।
প্রশ্ন ১৩: শব্দের তরঙ্গের মৌলিক গুণাবলি কী কী?
উত্তর: শব্দের তরঙ্গের মৌলিক গুণাবলি সমূহ-
- কম্পাঙ্ক (frequency)
- তরঙ্গ দৈর্ঘ্য (wavelength)
- গতি (velocity)
- প্রচণ্ডতা (amplitude)
প্রশ্ন ১৪: শব্দের গতি নির্ণয়ের সূত্র কী?
উত্তর: সূত্রঃ v = f × λ
- (v = শব্দের গতি, f = কম্পাঙ্ক, λ = তরঙ্গদৈর্ঘ্য)
প্রশ্ন ১৫: প্রতিধ্বনির ব্যবহার কোথায় হয়?
উত্তর: প্রতিধ্বনির ব্যবহার হয়-
- সোনার (SONAR) যন্ত্রে
- সাবমেরিনে
- গুহার মধ্যে শব্দ পরীক্ষায়
- বাদ্যযন্ত্রে
মনে রাখুন:
- P = F / A
- শ্রাব্য শব্দ: ২০ Hz – ২০,০০০ Hz
- অশ্রাব্য শব্দ: < ২০ Hz বা > ২০,০০০ Hz
- শব্দের গতি: কঠিন > তরল > গ্যাস
- শব্দ মানেই কম্পন
- শব্দ = অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ
- বায়ুতে গতি = ৩৩২ m/sক
- প্রতিধ্বনি = প্রতিফলিত শব্দ
- শ্রাব্য শব্দ = ২০ Hz – ২০,০০০ Hz
- অশ্রাব্য শব্দ = এর বাইরে
আলো / আলোক
এই অধ্যায়টি বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলো কিভাবে কাজ করে,
প্রতিফলন, প্রতিসরণ, আয়না-লেন্সের ব্যবহার—সব মিলিয়ে এই অধ্যায় থেকে ভাইভা ও
লিখিত পরীক্ষায় নিয়মিত প্রশ্ন আসে। নিচে আপনাকে দেওয়া হচ্ছে এই অধ্যায়ের
ভাইভার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর।
ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: আলো কাকে বলে?
উত্তর: আলো হলো এমন একধরনের শক্তি যা আমাদের চোখে দৃশ্য সৃষ্টি করে। এটি হলো
এক ধরনের তরঙ্গ এবং তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ, যা শূন্য মাধ্যমেও চলতে পারে।
প্রশ্ন ২: আলো কেমন ধরনের তরঙ্গ?
উত্তর: আলো হলো আনুপ্রস্থ তরঙ্গ (Transverse wave)। এটি শূন্য মাধ্যমে চলতে
পারে।
প্রশ্ন ৩: আলোর গতি কত?
উত্তর: শূন্য মাধ্যমে (vacuum) আলোর গতি হলো:
- 3 × 10⁸ m/s (বা 3 লাখ কিমি/সেকেন্ড)
প্রশ্ন ৪: আলো কি মাধ্যম ছাড়া চলতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, আলো মাধ্যম ছাড়া চলতে পারে, যেমন শূন্য মাধ্যমে (vacuum)। এটি
তড়িৎ-চৌম্বক তরঙ্গ বিধায় মাধ্যম ছাড়া চলতে পারে।
প্রশ্ন ৫: প্রতিফলন কাকে বলে?
উত্তর: যখন আলো কোনো প্রতিবন্ধকে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে, তখন তাকে প্রতিফলন
বলে।
- যেমন: আয়নায় মুখ দেখলে প্রতিফলন ঘটে।
প্রশ্ন ৬: প্রতিফলনের সূত্র দুটি কী?
উত্তর: প্রতিফলনের সূত্র দুটি হচ্ছে
- আপতন কোণ = প্রতিফলন কোণ
- আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি ও লম্ব একই সমতলে থাকে।
প্রশ্ন ৭: প্রতিসরণ কাকে বলে?
উত্তর: আলো এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করে দিক পরিবর্তন করলে, তাকে
প্রতিসরণ বলে।
- যেমন: পানিতে ঢুকলে খড়ি বাঁকা দেখা যায়।
প্রশ্ন ৮: প্রতিসরণের কারণ কী?
উত্তর: আলোর গতি এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে পরিবর্তন হওয়ার ফলে প্রতিসরণ
ঘটে।
প্রশ্ন ৯: লেন্স কাকে বলে ও কত প্রকার?
উত্তর: দুই পৃষ্ঠ সমান বা বক্র এমন স্বচ্ছ পদার্থ যার মাধ্যমে আলো প্রবাহিত
হয় এবং প্রতিসরণ ঘটে, তাকে লেন্স বলে।
লেন্স দুই প্রকার:
- উত্তল লেন্স (convex lens)
- অবতল লেন্স (concave lens)
প্রশ্ন ১০: আয়না কত প্রকার?
উত্তর: আয়না তিন প্রকার:
- সমতল আয়না
- উত্তল আয়না
- অবতল আয়না
প্রশ্ন ১১: উত্তল আয়নার ব্যবহার কী?
উত্তর: উত্তল আয়নার ব্যবহার সমূহ-
- গাড়ির পেছনের আয়না
- ট্র্যাফিক মিরর
- নিরাপত্তা মনিটরিং
প্রশ্ন ১২: অবতল আয়নার ব্যবহার কী?
উত্তর: অবতল আয়নার ব্যবহার সমূহ-
- দাঁতের ডাক্তারদের আয়না
- সৌরচুল্লি
- শেভিং আয়না
প্রশ্ন ১৩: উত্তল লেন্সের ব্যবহার কী?
উত্তর: উত্তল লেন্সের ব্যবহার সমূহ-
- দূরবীন
- ক্যামেরা
- অগ্নিকাচ
প্রশ্ন ১৪: আলোকবিকেতন (Refraction) কাকে বলে?
উত্তর: আলোর গতিপথ এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে পরিবর্তিত হলে তাকে
আলোকবিকেতন বা প্রতিসরণ বলে।
প্রশ্ন ১৫: বাস্তব প্রতিচ্ছবি ও কাল্পনিক প্রতিচ্ছবির পার্থক্য কী?
উত্তর: বাস্তব প্রতিচ্ছবি:
- প্রকৃত রশ্মিগুলি একত্রিত হয়ে গঠিত
- পর্দায় ধারণ করা যায়
- উল্টো হয়
উদাহরণ: অবতল আয়নার প্রতিচ্ছবি।
কাল্পনিক প্রতিচ্ছবি:
- রশ্মিগুলোর প্রসারণের মাধ্যমে তৈরি
- পর্দায় ধারণ করা যায় না
- সোজা হয়
উদাহরণ: সমতল আয়নায় মুখের প্রতিচ্ছবি।
প্রশ্ন ১৬: প্রকৃত ও কাল্পনিক প্রতিচ্ছবির প্রধান পার্থক্য কী?
উত্তর: প্রকৃত প্রতিচ্ছবি হলো যেখানে রশ্মিগুলো বাস্তবে মিলিত হয় এবং পর্দায়
পাওয়া যায়। কাল্পনিক প্রতিচ্ছবি হলো যেখানে রশ্মিগুলো একত্রিত হয় না বরং মনে
হয় এক জায়গা থেকে আসছে।
মনে রাখুন -
প্রতিফলনের সূত্র:
- আপতন কোণ = প্রতিফলন কোণ।
- আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি ও লম্ব একই সমতলে থাকে।
Lens ও Mirror:
- উত্তল লেন্স = দূরবীন, অগ্নিকাচ
- অবতল আয়না = দাঁতের আয়না
- উত্তল আয়না = গাড়ির পিছনের আয়না
- প্রতিসরণ: আলোর দিক পরিবর্তন = ভিন্ন মাধ্যম
আরো কিছু তথ্য:
- আলো মানে গতি ও প্রতিফলন।
- আয়না = প্রতিফলন, লেন্স = প্রতিসরণ।
- সমতল আয়নায় কাল্পনিক প্রতিচ্ছবি, অবতল আয়নায় বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
- উত্তল লেন্স সব কিছু বড় করে দেখায়, অবতল লেন্স ছোট করে।
তাপ
এই অধ্যায়ে তাপের প্রভাব, তাপ সঞ্চালনের উপায়, তাপমাত্রা, নির্দিষ্ট তাপ ইত্যাদি
নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এটি এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পাঠ্যক্রমে রয়েছে। এই অধ্যায় থেকে
ভাইভায় প্রায় সব স্যারেরাই প্রশ্ন করে থাকে, বিশেষ করে তাপ vs তাপমাত্রা, তাপ
সঞ্চালনের উপায়, সূত্র, ও তাপের একক–এর ওপর।
ভাইভা পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: তাপ কাকে বলে?
উত্তর: তাপ হলো এমন একধরনের শক্তি যা উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু থেকে নিম্ন
তাপমাত্রার বস্তুর দিকে প্রবাহিত হয়। এটি বস্তুর অণু-পরমাণুর গতিজ শক্তির
প্রকাশ।
প্রশ্ন ২: তাপমাত্রা কাকে বলে?
উত্তর: তাপমাত্রা হলো কোনো বস্তুর গরম বা ঠান্ডা অবস্থার পরিমাপক। এটি তাপের
মান নির্দেশ করে না, বরং কণার গতি নির্দেশ করে।
প্রশ্ন ৩: তাপ ও তাপমাত্রার পার্থক্য কী?
উত্তর: তাপ:
- শক্তি
- একক: জুল (Joule)
- তাপ স্থানান্তরযোগ্য
তাপমাত্রা:
- পরিমাপক
- একক: ডিগ্রি সেলসিয়াস (°C), কেলভিন (K)
- তাপমাত্রা স্থানান্তর হয় না
প্রশ্ন ৪: তাপ সঞ্চালনের তিনটি উপায় কী কী?
উত্তর: তাপ সঞ্চালনের তিনটি উপায়-
- পরিবহণ (Conduction) — কঠিন পদার্থে
- সংবহন (Convection) — তরল ও গ্যাসে
- বিকিরণ (Radiation) — শূন্য মাধ্যমেও
প্রশ্ন ৫: পরিবাহী ও অপরিবাহী পদার্থ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পরিবাহী পদার্থ: যে পদার্থ সহজে তাপ সঞ্চালন করে, যেমন তামা, লোহা।
অপরিবাহী পদার্থ: যেগুলো তাপ সঞ্চালন করে না বা খুব কম করে, যেমন কাঠ,
প্লাস্টিক।
প্রশ্ন ৬: নির্দিষ্ট তাপধারণ ক্ষমতা কাকে বলে?
উত্তর: এক কেজি বস্তুর তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়াতে যে পরিমাণ তাপ
লাগে, তাকে তার নির্দিষ্ট তাপধারণ ক্ষমতা বলে।
- সূত্র: Q = mcΔθ
(Q = তাপ, m = ভর, c = নির্দিষ্ট তাপধারণ ক্ষমতা, Δθ = তাপমাত্রার পরিবর্তন)
প্রশ্ন ৭: সুষম তাপমাত্রা কাকে বলে?
উত্তর: যখন দুই বা ততোধিক বস্তু তাপ বিনিময়ের পর একই তাপমাত্রায় পৌঁছে, তখন সেই
তাপমাত্রাকে সুষম তাপমাত্রা বলে।
প্রশ্ন ৮: গরম পানিতে চামচ দিলে চামচ গরম হয় কেন?
উত্তর: কারণ ধাতব চামচ একটি তাপ পরিবাহী পদার্থ এবং এটি পরিবহণ প্রক্রিয়ায় তাপ
গ্রহণ করে গরম হয়ে যায়।
প্রশ্ন ৯: সূর্যের তাপ কীভাবে পৃথিবীতে আসে?
উত্তর: সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে বিকিরণ (Radiation) প্রক্রিয়ায়, কারণ মাঝে
কোনো মাধ্যম নেই।
প্রশ্ন ১০: কেলভিন ও সেলসিয়াস স্কেলের সম্পর্ক কী?
উত্তর: কেলভিন ও সেলসিয়াস স্কেলের সম্পর্ক-
- K = °C + 273
- °C = K − 273
প্রশ্ন ১১: কোন ধাতব পদার্থ তাপ সঞ্চালনে সবচেয়ে বেশি কার্যকর?
উত্তর: রূপা (Silver) — এটি তাপ পরিবাহিতায় সবচেয়ে কার্যকর ধাতু।
প্রশ্ন ১২: কাঁচ, কাঠ ও প্লাস্টিককে কেন অপরিবাহী বলা হয়?
উত্তর: কারণ এরা তাপ সঞ্চালন করে না বা খুবই কম করে। তাই এগুলো তাপ নিরোধক
হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন ১৩: খাদ্য গরম রাখার জন্য থার্মোফ্লাস্কে কি নীতির ব্যবহার হয়?
উত্তর: তাপ সঞ্চালন কমানোর জন্য তিনটি প্রক্রিয়া (Conduction, Convection,
Radiation) কে রোধ করার ব্যবস্থা রাখা হয়। ফলে তাপ বাইরে যায় না।
প্রশ্ন ১৪: বরফ গলে যাওয়াকে কী বলে?
উত্তর: বরফ গলে পানি হলে তাকে বলে গলন প্রক্রিয়া (Melting)।
প্রশ্ন ১৫: গলন বিন্দু কাকে বলে?
উত্তর: একটি পদার্থ যখন কঠিন থেকে তরলে রূপান্তর হয় এবং তখন তার তাপমাত্রা
অপরিবর্তিত থাকে, সেই তাপমাত্রাকে গলন বিন্দু বলে।
- বরফের গলন বিন্দু: ০°C
মনে রাখুন-
- তাপ একক = জুল (J)
- তাপমাত্রা একক = °C, K
- নির্দিষ্ট তাপ = এক কেজি বস্তুর তাপমাত্রা ১°C বাড়াতে যত তাপ লাগে
- তাপ মানে শক্তি, তাপমাত্রা মানে গরম-ঠান্ডার মাত্রা
- পরিবহণ = ধাতব পদার্থে
- সংবহন = তরল/বায়ুতে
- বিকিরণ = মাধ্যম ছাড়াই (সূর্যের আলো)
বিদ্যুৎ ও চুম্বকত্ব
এই অধ্যায়ে মূলত বিদ্যুৎ প্রবাহ, সার্কিট, চুম্বক, ইলেকট্রোম্যাগনেট, এবং তাদের
বাস্তব জীবনে প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আসে। এখানে অনেক প্রশ্ন সহজ হলেও সঠিক
ব্যাখ্যা দিতে না পারার কারণে ভাইভা পরীক্ষায় নম্বর কাটা যায়। এই অধ্যায়
থেকে প্রায় প্রতি ভাইভাতেই প্রশ্ন ধরে। আপনি যদি নিচের প্রশ্নগুলো ঝালিয়ে নেন,
তাহলে ভাইভায় ভাল করবেন।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: বিদ্যুৎ কাকে বলে?
উত্তর: বিদ্যুৎ হলো ইলেকট্রনের প্রবাহ বা গতি। যখন ইলেকট্রন এক জায়গা থেকে
অন্য জায়গায় সঞ্চালিত হয়, তখন বিদ্যুৎ তৈরি হয়।
প্রশ্ন ২: বৈদ্যুতিক বর্তনী কাকে বলে?
উত্তর: যে পথে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, তাকে বৈদ্যুতিক বর্তনী বলে। এটি
ব্যাটারি, তার, সুইচ এবং রোধক দিয়ে তৈরি হয়।
প্রশ্ন ৩: বৈদ্যুতিক বিভব কাকে বলে?
উত্তর: কোনো চার্জকৃত কণাকে একটি স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করতে যে
কাজ করতে হয়, তাকে বৈদ্যুতিক বিভব বলে।
- একক: ভোল্ট (Volt)
প্রশ্ন ৪: ভোল্টেজ কাকে বলে?
উত্তর: দুই বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্যকে ভোল্টেজ বলে। এটি হলো একটি চলককে
চলাচলের শক্তি দেওয়া।
প্রশ্ন ৫: বৈদ্যুতিক প্রবাহ কাকে বলে?
উত্তর: একক সময়ে পরিবাহকের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের যে প্রবাহ ঘটে, তাকে
বৈদ্যুতিক প্রবাহ বা কারেন্ট বলে।
- একক: অ্যাম্পিয়ার (A)
প্রশ্ন ৬: কারেন্ট, ভোল্ট এবং রেজিস্ট্যান্সের সম্পর্ক কী?
উত্তর: এই তিনটির সম্পর্ক হয় ওমের সূত্র দিয়ে:
- V = IR
- অথবা, I = V/R
- অথবা, R = V/I
এখানে,
- V = ভোল্টেজ (Volt)
- I = কারেন্ট (Ampere)
- R = রোধ (Ohm)
প্রশ্ন ৭: ওমের সূত্র কী?
উত্তর: স্থির তাপমাত্রায়, কোনো পরিবাহকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট সেই
পরিবাহকের দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সাথে সরল অনুপাতে পরিবর্তিত হয়।
- সূত্র: V = IR
প্রশ্ন ৮: রোধ (Resistance) কাকে বলে?
উত্তর: বৈদ্যুতিক প্রবাহকে বাধা দেয় যে গুণ, তাকে রোধ বা রেজিস্ট্যান্স বলে।
- একক: ওহম (Ω)
প্রশ্ন ৯: পরিবাহী ও নিরোধকের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: পরিবাহী: যে পদার্থে বিদ্যুৎ সহজে প্রবাহিত হয়, যেমন তামা, লোহা।
নিরোধক: যে পদার্থে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না, যেমন রাবার, কাঠ।
প্রশ্ন ১০: চৌম্বক কাকে বলে?
উত্তর: যে বস্তু লোহা, নিকেল বা কোবাল্টকে আকর্ষণ করতে পারে, তাকে চৌম্বক
বলে।
প্রশ্ন ১১: প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম চুম্বকের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: প্রাকৃতিক চুম্বক: প্রাকৃতিকভাবে তৈরি (যেমন ম্যাগনেটাইট)। কৃত্রিম
চুম্বক: ইচ্ছামতো তৈরি (যেমন বার চুম্বক, ঘোড়া আকৃতির চুম্বক)।
প্রশ্ন ১২: চৌম্বক ক্ষেত্র কাকে বলে?
উত্তর: চুম্বকের চারপাশের সেই অঞ্চল যেখানে চুম্বকীয় বল কাজ করে, তাকে চৌম্বক
ক্ষেত্র বলে।
প্রশ্ন ১৩: ইলেকট্রোম্যাগনেট কাকে বলে?
উত্তর: যখন কোনো লোহার কোরে তার পেঁচিয়ে তাতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়, তখন
যে সাময়িক চুম্বক তৈরি হয় তাকে ইলেকট্রোম্যাগনেট বলে।
প্রশ্ন ১৪: ইলেকট্রোম্যাগনেট কোথায় ব্যবহার হয়?
উত্তর: ইলেকট্রোম্যাগনেট এর ব্যবহার-
- বৈদ্যুতিক ঘণ্টা
- MRI মেশিন
- ক্রেন (লোহার জিনিস তোলার কাজে)
প্রশ্ন ১৫: চৌম্বকত্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর: যখন কোনো পরিবাহকের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, তখন চারপাশে
চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ১৬: বিদ্যুৎ চৌম্বক প্রভাব কাকে বলে?
উত্তর: বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হলে তাকে বিদ্যুৎ
চৌম্বক প্রভাব বলে।
মনে রাখুন-
- VIR মনে রাখো → V = IR
- ইলেকট্রন চলে = বিদ্যুৎ হয়
- কারেন্ট থাকলেই চৌম্বক ক্ষেত্র হয়
- লোহা + তার + বিদ্যুৎ = ইলেকট্রোম্যাগনেট
একক:
- বিভব পার্থক্য = Volt (V)
- কারেন্ট = Ampere (A)
- রোধ = Ohm (Ω)
তিনটি তত্ত্ব:
- বিদ্যুৎ = ইলেকট্রনের প্রবাহ
- রোধ = বিদ্যুৎ প্রবাহে বাধা
- চৌম্বকত্ব = ইলেকট্রিক কারেন্ট থেকে সৃষ্ট চুম্বকীয় ক্ষেত্র
পরিমাপ
এই অধ্যায়ে মাপজোকের ধারণা, একক, পরিমাপের পদ্ধতি, ত্রুটি ও নির্ভুলতার আলোচনার
পাশাপাশি SI একক নিয়েও প্রশ্ন আসে। এই অধ্যায়টা যত সহজ মনে হয়, ভাইভা পরীক্ষায়
ততটাই ঘুরিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাই নিচের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করুন।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: পরিমাপ কাকে বলে?
উত্তর: কোনো পদার্থের দৈহিক রাশির মান নির্দিষ্ট এককের সাথে তুলনা করার
প্রক্রিয়াকে পরিমাপ বলে।
প্রশ্ন ২: দৈহিক রাশি কাকে বলে?
উত্তর: যে রাশিগুলোর পরিমাপ করা যায় এবং যেগুলো কোনো ঘটনা বা বস্তু বর্ণনা
করতে ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে দৈহিক রাশি বলে।
- যেমন: দৈর্ঘ্য, ভর, সময়।
প্রশ্ন ৩: মৌলিক ও উৎপন্ন রাশির মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: মৌলিক রাশি: যেগুলো অন্য কোনো রাশি থেকে উদ্ভূত নয়। যেমন – দৈর্ঘ্য,
ভর, সময়।
উৎপন্ন রাশি: যেগুলো মৌলিক রাশিগুলোর সংমিশ্রণ থেকে পাওয়া যায়। যেমন – গতি,
ভরবেগ, কাজ।
প্রশ্ন ৪: মৌলিক রাশি কয়টি?
উত্তর: মোট ৭টি মৌলিক রাশি রয়েছে:
- দৈর্ঘ্য (meter)
- ভর (kilogram)
- সময় (second)
- তাপমাত্রা (kelvin)
- বৈদ্যুতিক প্রবাহ (ampere)
- পদার্থের পরিমাণ (mole)
- আলোক তীব্রতা (candela)
প্রশ্ন ৫: দৈর্ঘ্যের একক কী কী?
উত্তর: দৈর্ঘ্যের একক-
- SI একক: মিটার (m)
- অন্যান্য: সেন্টিমিটার (cm), কিলোমিটার (km)
প্রশ্ন ৬: ভরের SI একক কী?
উত্তর: ভরের SI একক হলো কিলোগ্রাম (kg)।
প্রশ্ন ৭: সময়ের SI একক কী?
উত্তর: সেকেন্ড (second বা s)।
প্রশ্ন ৮: SI একক কী এবং কেন ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: SI একক হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একক ব্যবস্থা। এটি বিশ্বের সব
দেশে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিক্ষায় ব্যবহৃত হয় যাতে পরিমাপের মান অভিন্ন
হয়।
প্রশ্ন ৯: ঘনত্বের একক কী?
উত্তর: SI একক: কেজি/মিটার³ (kg/m³)
প্রশ্ন ১০: গতি এবং বেগের একক কী?
উত্তর: উভয়ের SI একক: মিটার/সেকেন্ড (m/s)
প্রশ্ন ১১: দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে কী কী যন্ত্র ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে যা যা যন্ত্র ব্যবহৃত হয়-
- ফিতা (Tape)
- স্কেল
- ভার্নিয়ার ক্যালিপার
- স্ক্রু গেজ
প্রশ্ন ১২: ভার্নিয়ার ক্যালিপার কী ও কীভাবে কাজ করে?
উত্তর: একটি যন্ত্র যা খুব সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য পরিমাপে ব্যবহৃত হয় (যেমন:
ব্যাস)। এটি দুটি স্কেলে গঠিত — প্রধান স্কেল ও ভার্নিয়ার স্কেল।
প্রশ্ন ১৩: স্ক্রু গেজ দিয়ে কী মাপা যায়?
উত্তর: স্ক্রু গেজ ব্যবহার করা হয় খুব ছোট ও সূক্ষ্ম বস্তুর পুরুত্ব বা ব্যাস
পরিমাপে, যেমন কাগজ বা তারের ব্যাস।
প্রশ্ন ১৪: পরিমাপের ত্রুটি কাকে বলে?
উত্তর: যে পার্থক্যটি প্রকৃত মান ও পরিমাপকৃত মানের মধ্যে হয়, তাকে পরিমাপের
ত্রুটি বলে।
প্রশ্ন ১৫: যথার্থতা ও নিখুঁততার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: যথার্থতা মানে বারবার পরিমাপে একই ফলাফল পাওয়া (কতটা ধারাবাহিক)।
নিখুঁততা মানে প্রকৃত মানের কতটা কাছাকাছি রয়েছে।
প্রশ্ন ১৬: ফিজিক্সে মাপজোখ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: সঠিক ফলাফল পেতে হলে নির্ভুল পরিমাপ দরকার। কারণ পদার্থবিজ্ঞানে সমস্ত
সূত্র, পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ নির্ভর করে পরিমাপের উপর।
কিছু তথ্য মনে রাখুন:
মূল পরিমাপক যন্ত্র:
- দৈর্ঘ্য: স্কেল, ফিতা
- সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য: ভার্নিয়ার ক্যালিপার, স্ক্রু গেজ
- গতি, বেগ: মিটার/সেকেন্ড (m/s)
- ঘনত্ব: কেজি/মিটার³ (kg/m³)
- পরিমাপের ত্রুটি = পরিমাপকৃত মান − প্রকৃত মান
আরো মনে রাখুন:
- DIM TIME PC = দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, তাপমাত্রা, কারেন্ট, পদার্থের পরিমাণ, ক্যান্ডেলা
- ভার্নিয়ার = সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য
- স্ক্রু গেজ = পাতলা বস্তু
- SI একক সব জায়গায় চলে, তাই মুখস্থ করা জরুরি
ভেক্টর
এই অধ্যায় থেকে বেশিরভাগ প্রশ্ন হয় মৌলিক ধারণা, রাশি চিনে রাখা, ভেক্টরের
যোগ-বিয়োগ, গাণিতিক বিশ্লেষণ এবং বাস্তব উদাহরণ নিয়ে।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: ভেক্টর কাকে বলে?
উত্তর: যে রাশির পরিমাণ (magnitude) ও দিক (direction) দুইটাই থাকে, তাকে
ভেক্টর বলে।
যেমন: বেগ, বল, ভরবেগ।
প্রশ্ন ২: ভেক্টর রাশির উদাহরণ দাও।
উত্তর: বেগ, ত্বরণ, বল, ভরবেগ, স্থানচ্যুতি, তড়িৎ ক্ষেত্র ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৩: স্কেলার কাকে বলে?
উত্তর: যে রাশির শুধু পরিমাণ থাকে, কিন্তু কোনো দিক থাকে না, তাকে স্কেলার
রাশি বলে।
যেমন: ভর, তাপমাত্রা, কাজ, সময়।
প্রশ্ন ৪: ভেক্টর ও স্কেলার রাশির মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ভেক্টরের পরিমাণ ও দিক দুটোই থাকে, স্কেলারে শুধু পরিমাণ থাকে। ভেক্টর
যোগ করতে নিয়ম মানতে হয় (ত্রিভুজ নিয়ম), স্কেলারে সরাসরি যোগ করা যায়।
- উদাহরণ: বেগ (ভেক্টর), দূরত্ব (স্কেলার)।
প্রশ্ন ৫: ভেক্টরের উপাংশ কাকে বলে?
উত্তর: কোনো ভেক্টরকে নির্দিষ্ট দুটি ছেদকারী অক্ষ বরাবর ভাগ করলে প্রতিটি
অংশকে ভেক্টরের উপাংশ বলে।
প্রশ্ন ৬: ভেক্টরের যোগ কিভাবে করা হয়?
উত্তর: ভেক্টরের যোগ করা হয় ত্রিভুজ নিয়ম বা সমান্তরাল চতুষ্কোণ নিয়ম
অনুসারে।
প্রশ্ন ৭: ত্রিভুজ নিয়ম কী?
উত্তর: যদি দুটি ভেক্টরকে একসাথে বসানো হয় এবং প্রথমটির শেষ বিন্দু থেকে
দ্বিতীয়টি শুরু হয়, তবে প্রথমটির শুরু এবং দ্বিতীয়টির শেষ বিন্দুর
সংযোগকারী রেখা হলো তাদের যোগফল।
প্রশ্ন ৮: ভেক্টর বিয়োগ কিভাবে করা হয়?
উত্তর: ভেক্টর বিয়োগ মানে হল এক ভেক্টরের সাথে আরেকটির বিপরীত দিকের ভেক্টর
যোগ করা।
- যেমন: A – B = A + (–B)
প্রশ্ন ৯: ফলন্তর ভেক্টর কাকে বলে?
উত্তর: দুটি বা ততোধিক ভেক্টরের সম্মিলিত প্রভাবে যে একটি একক ভেক্টর পাওয়া
যায়, তাকে ফলন্তর ভেক্টর বলে।
প্রশ্ন ১০: শূন্য ভেক্টর কাকে বলে?
উত্তর: যে ভেক্টরের পরিমাণ শূন্য কিন্তু একটি দিক নির্ধারণযোগ্য থাকে, তাকে
শূন্য ভেক্টর বলা হয়।
প্রশ্ন ১১: একক ভেক্টর কাকে বলে?
উত্তর: যে ভেক্টরের পরিমাণ ১ এবং একটি নির্দিষ্ট দিক থাকে, তাকে একক ভেক্টর
বলা হয়।
প্রশ্ন ১২: ভেক্টরের স্কেলার গুণফল কাকে বলে?
উত্তর: ভেক্টরের সাথে কোনো স্কেলার গুণ করলে একটি নতুন ভেক্টর পাওয়া যায়, যার
দিক অপরিবর্তিত থাকে কিন্তু মান স্কেলারের সাথে গুণিত হয়।
কিছু সূত্র ও তথ্য:
- → ভেক্টর: যার পরিমাণ ও দিক দুটোই থাকে
- → স্কেলার: যার শুধু পরিমাণ থাকে
ভেক্টর যোগের ত্রিভুজ সূত্র:
- → R = √(A² + B² + 2ABcosθ)
(যেখানে θ = A এবং B এর মধ্যবর্তী কোণ)
একক ভেক্টর:
- → û = A / |A|
উপাংশ বিভাজন (2D তে):
- → Ax = A cosθ
- → Ay = A sinθ
মনে রাখুন:
- ভেক্টর মানে "দুইটা জিনিস": পরিমাণ + দিক
- স্কেলার মানে "শুধু পরিমাণ"
- ভেক্টর যোগ করতে চিত্র আঁকো — ত্রিভুজ বা সমান্তরাল চতুষ্কোণ
- বিয়োগ মানে “বিপরীত দিক যোগ করো”চ
- একক ভেক্টর মনে রাখো: দিক জানতে হলে এককে নামাও
গতিসংক্রান্ত গাঠনিক বিশ্লেষণ
গতিসংক্রান্ত গাঠনিক বিশ্লেষণ (Kinematical Structural Analysis) এই অধ্যায়টি
মূলত পদার্থবিজ্ঞানে গতি বিশ্লেষণ করার পেছনের গাণিতিক কাঠামো এবং সমীকরণ ভিত্তিক
বিশ্লেষণ নিয়ে গঠিত। ভাইভাতে এখান থেকে সাধারণত সূত্র, প্রয়োগ এবং বাস্তব
উদাহরণভিত্তিক ছোট প্রশ্ন করা হয়।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: কাইনেমেটিক্স (Kinematics) কাকে বলে?
উত্তর: যে শাখায় কেবল গতির বর্ণনা করা হয়, তার কারণ বা বল নিয়ে আলোচনা করা
হয় না, তাকে কাইনেমেটিক্স বলে।
প্রশ্ন ২: গতি কাকে বলে?
উত্তর: কোনো বস্তুর অবস্থানের সময়ের সাথে পরিবর্তন হলে, তাকে গতি বলে।
প্রশ্ন ৩: স্থানচ্যুতি ও দূরত্বের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: দূরত্ব হলো বস্তুর চলার মোট দৈর্ঘ্য। এটি স্কেলার রাশি। স্থানচ্যুতি হলো
প্রারম্ভিক ও অন্তিম অবস্থানের সরলরেখা দূরত্ব। এটি ভেক্টর রাশি।
- যেমন, কেউ ১০ মিটার এগিয়ে আবার ১০ মিটার পিছনে গেলে দূরত্ব ২০ মিটার, কিন্তু স্থানচ্যুতি ০ মিটার।
প্রশ্ন ৪: বেগ ও গতি মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: গতি (Speed) হলো সময় অনুযায়ী দূরত্ব পরিবর্তনের হার — স্কেলার রাশি। বেগ
(Velocity) হলো সময় অনুযায়ী স্থানচ্যুতি পরিবর্তনের হার — ভেক্টর রাশি।
প্রশ্ন ৫: ত্বরণ (acceleration) কাকে বলে?
উত্তর: যদি বেগ সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়, তাহলে যে হারে পরিবর্তিত হয় তাকে
ত্বরণ বলে।
প্রশ্ন ৬: ধ্রুব গতি ও পরিবর্তনশীল গতি কী?
উত্তর: ধ্রুব গতি: বস্তুর বেগ যদি সময়ের সাথে অপরিবর্তিত থাকে। পরিবর্তনশীল
গতি: বেগ যদি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়।
প্রশ্ন ৭: ধ্রুব ত্বরণ কী?
উত্তর: যখন একটি বস্তুর বেগ সময়ের সাথে নির্দিষ্ট হারে পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে
ধ্রুব ত্বরণ বলে।
প্রশ্ন ৮: বিন্দু কণার গতি কাকে বলে?
উত্তর: যদি কোনো বস্তুর আকার ও আকৃতি উপেক্ষা করে কেবল তার গতি বিশ্লেষণ করা
হয়, তখন তাকে বিন্দু কণার গতি বলা হয়।
প্রশ্ন ৯: গতির সমীকরণগুলো কী কী?
উত্তর: যেসব সমীকরণের মাধ্যমে বেগ, ত্বরণ, স্থানচ্যুতি ও সময়ের সম্পর্ক
নির্ধারণ করা যায়, সেগুলো হলো গতির সমীকরণ।
গতির ৩টি ধ্রুব সমীকরণ:
- v = u + at
- s = ut + ½at²
- v² = u² + 2as
যেখানে:
- u = প্রারম্ভিক বেগ
- v = অন্তিম বেগ
- a = ত্বরণ
- t = সময়
- s = স্থানচ্যুতি
প্রশ্ন ১০: মুক্তপতন কাকে বলে?
উত্তর: যদি কোনো বস্তুকে কেবল মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে উপর থেকে ফেলে দেওয়া
হয়, তাকে মুক্তপতন বলে।
প্রশ্ন ১১: মুক্তপতনের গতি বিশ্লেষণ করতে কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর: মুক্তপতনের গতি বিশ্লেষণে “g” বা অভিকর্ষজ ত্বরণ ব্যবহার করা হয়। এর
মান পৃথিবীতে প্রায় g = 9.8 m/s²।
প্রশ্ন ১২: যদি কোনো বস্তুর ত্বরণ ঋণাত্মক হয়, তখন কী বোঝায়?
উত্তর: ত্বরণ ঋণাত্মক মানে বস্তুর বেগ কমছে, অর্থাৎ এটি ধীরগতি বা বিরোধী গতি
নির্দেশ করে।
প্রশ্ন ১৩: বক্ররেখায় গতি চলাকালীন বস্তুতে কোন কোন ত্বরণ কাজ করে?
উত্তর: বক্ররেখায় চলন্ত বস্তুর গতি বিশ্লেষণে দুটি ত্বরণ ধরা হয় —
- রৈখিক ত্বরণ (Tangential acceleration)
- কেন্দ্রমুখী ত্বরণ (Centripetal acceleration)
মনে রাখুন:
- যদি প্রশ্নে "ধ্রুব" বলা থাকে = ত্বরণ ধ্রুব।
- যদি বলা হয় "বিনাশক্তি গতি", তবে বল বা ত্বরণ ধরতে হবে না।
- মুক্তপতনের সময় সব সময় g = 9.8 m/s² ব্যবহার করো।
সমীকরণ মনে রাখার জন্য কৌশল:
- 1st Equation: বেগ ও সময়
- 2nd Equation: স্থানচ্যুতি ও সময়
- 3rd Equation: বেগ ও স্থানচ্যুতি (সময় ছাড়া)
সরল হারমোনিক কম্পন ও তরঙ্গ
এই অধ্যায় থেকে ভাইভা বোর্ডে প্রায়ই প্রশ্ন আসে কারণ এটি বাস্তব উদাহরণসমৃদ্ধ এবং
গাণিতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রছাত্রীদের অনেক সময় সরলভাবে না বোঝানো হলে এটি
কঠিন মনে হয়। তাই এখানে সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: কম্পন কাকে বলে?
উত্তর: কোনো বস্তু যদি এক বিন্দু থেকে শুরু করে সমান সময় পরপর একই অবস্থায় ফিরে
আসে, তাহলে তার চলনকে কম্পন বলে।
- উদাহরণ: দোলনায় দোল খাওয়া, পেন্ডুলামের দোল ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২: সরল হারমোনিক কম্পন (SHM) কাকে বলে?
উত্তর: যে কম্পনে কোনো বস্তু স্থিতিবিন্দুর দুই পাশে দোল খায় এবং তার
প্রত্যাবর্তনকারী বল স্থিতিবিন্দুর দিকে কাজ করে ও সরণের সাথে আনুপাতিক হয়,
তাকে সরল হারমোনিক কম্পন বলে।
প্রশ্ন ৩: SHM-এর উদাহরণ দাও।
উত্তর: SHM-এর উদাহরণ-
- একটি দোলনা
- বসন্তে বাঁধা বস্তুর দোল
- পেন্ডুলামের দোল ইত্যাদি
প্রশ্ন ৪: সরল হারমোনিক কম্পনের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: সরল হারমোনিক কম্পনের বৈশিষ্ট্য সমূহ-
- গতি পুনরাবৃত্তিমূলক হয়
- প্রত্যাবর্তনকারী বল থাকে
- বেগ ও ত্বরণ পরিবর্তনশীল
- সর্বোচ্চ অবস্থানে বেগ শূন্য ও ত্বরণ সর্বাধিক
- স্থিতিবিন্দুতে ত্বরণ শূন্য ও বেগ সর্বাধিক
প্রশ্ন ৫: পরিপূর্ণ কম্পন কাকে বলে?
উত্তর: যখন একটি কম্পনকারী বস্তু তার পূর্ণ একবার চলাচল সম্পন্ন করে এবং শুরু
অবস্থায় ফিরে আসে, তখন তাকে এক পরিপূর্ণ কম্পন বলা হয়।
প্রশ্ন ৬: কম্পনের সময় (Time period) কাকে বলে?
উত্তর: একটি পূর্ণ কম্পন সম্পন্ন করতে বস্তু যত সময় নেয়, তাকে কম্পনের সময় বলে।
- প্রতিক: T
প্রশ্ন ৭: কম্পনের কম্পাঙ্ক (Frequency) কাকে বলে?
উত্তর: এক সেকেন্ডে যতগুলো পূর্ণ কম্পন হয়, তাকে কম্পাঙ্ক বলে।
- প্রতিক: f, একক: Hz
প্রশ্ন ৮: সরল হারমোনিক গতি সমীকরণ কী?
উত্তর: সরল হারমোনিক গতি নির্ণয়ে নিচের সমীকরণ ব্যবহার করা হয়:
- x = A sin(ωt) অথবা x = A cos(ωt)
যেখানে:
- x = কোনো নির্দিষ্ট সময়ে অবস্থান
- A = সর্বাধিক বিচ্যুতি (amplitude)
- ω = কৌণিক কম্পাঙ্ক (angular frequency)
- t = সময়
প্রশ্ন ৯: তরঙ্গ কাকে বলে?
উত্তর: যখন কোনো কম্পনকারী বস্তু তার আশপাশে শক্তি বা বাধা ছাড়াই কণার মাধ্যমে
গতি বা শক্তি ছড়িয়ে দেয়, তখন তাকে তরঙ্গ বলে।
প্রশ্ন ১০: যান্ত্রিক তরঙ্গ ও তড়িৎচুম্বক তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: যান্ত্রিক তরঙ্গ: মাধ্যমের প্রয়োজন হয় (যেমন শব্দ তরঙ্গ)। তড়িৎচুম্বক
তরঙ্গ: মাধ্যম ছাড়াও চলতে পারে (যেমন আলো, রেডিও তরঙ্গ)।
প্রশ্ন ১১: অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ ও ট্রান্সভার্স তরঙ্গের পার্থক্য কী?
উত্তর: অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ: কণার কম্পনের দিক ও তরঙ্গ বিস্তার একই (যেমন শব্দ)।
ত্রান্সভার্স তরঙ্গ: কণার কম্পন তরঙ্গ বিস্তার রৈখিকভাবে লম্ব (যেমন আলো, জল
তরঙ্গ)।
প্রশ্ন ১২: তরঙ্গের গতি নির্ণয়ের সূত্র কী?
উত্তর: তরঙ্গের গতি নির্ণয়ের সূত্র- v = f × λ
যেখানে:
- v = তরঙ্গের বেগ
- f = কম্পাঙ্ক
- λ (lambda) = তরঙ্গদৈর্ঘ্য
সূত্রসমূহ:
SHM এর সমীকরণ:
- x = A sin(ωt) অথবা x = A cos(ωt)
কৌণিক কম্পাঙ্ক:
- ω = 2πf
ফ্রিকোয়েন্সি ও সময়ের সম্পর্ক:
- f = 1/T
মনে রাখুন:
- SHM = Simple Harmonic Movement → দোল খাওয়া সহজ!
- f = frequency = Fastness (সেকেন্ডে কতবার কম্পন?)
- λ = length = তরঙ্গদৈর্ঘ্য
- v = fλ = ভি ফর ফ্লো → কম্পাঙ্ক × দৈর্ঘ্য = গতি
তাপগতিবিদ্যা
এই অধ্যায়টি ভাইভা বোর্ডে প্রায়ই আসে কারণ এটি বাস্তব জীবনের সঙ্গে
ওতপ্রোতভাবে জড়িত—যেমন রেফ্রিজারেটর, মোটর, ইঞ্জিন ইত্যাদির সাথে। এখানে সহজ
ভাষায়, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপযোগীভাবে প্রশ্ন-উত্তর এবং সূত্রসহ সব দরকারি
তথ্য তুলে ধরা হলো যা পদার্থ বিজ্ঞান ভাইভা পরীক্ষায় কাজে লাগবে।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: তাপগতিবিদ্যা কী?
উত্তর: তাপ, কাজ ও শক্তির মধ্যকার সম্পর্ক এবং এদের পরিবর্তনের নিয়মকানুন
নিয়ে যে শাখা আলোচনা করে, তাকে তাপগতিবিদ্যা বলে।
প্রশ্ন ২: তাপগতিবিদ্যার মৌলিক রাশি কী কী?
উত্তর: তাপগতিবিদ্যার মৌলিক রাশি সমূহ-
- তাপ (Heat)
- অভ্যন্তরীণ শক্তি (Internal energy)
- কাজ (Work)
- উষ্ণতা (Temperature)
- চাপ (Pressure)
- আয়তন (Volume)
প্রশ্ন ৩: অভ্যন্তরীণ শক্তি (Internal Energy) কাকে বলে?
উত্তর: বস্তুর অণু-পরমাণুর গতিশক্তি এবং স্থিতিশক্তির যোগফলকে অভ্যন্তরীণ
শক্তি বলে।
প্রশ্ন ৪: তাপ ও উষ্ণতার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: তাপ: শক্তির একটি রূপ, যা উচ্চ তাপমাত্রা থেকে নিম্ন তাপমাত্রার দিকে
সঞ্চারিত হয়। উষ্ণতা: বস্তুর গরম বা ঠাণ্ডা অবস্থার পরিমাপক। এটি তাপের
প্রভাব নির্দেশ করে।
- তাপ প্রবাহিত হয়, কিন্তু উষ্ণতা হয় না।
প্রশ্ন ৫: তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র কী?
উত্তর: তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র বলে —
- বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন = বস্তুতে সরবরাহকৃত তাপ − বস্তু কর্তৃক সম্পাদিত কাজ।
তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র:
- Q = ΔU + W
যেখানে:
- Q = সরবরাহকৃত তাপ
- ΔU = অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন
- W = বস্তু কর্তৃক সম্পাদিত কাজ
প্রশ্ন ৬: তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রের ব্যবহার কোথায় হয়?
উত্তর: এটি গ্যাসের সম্প্রসারণ, সংকোচন, ইঞ্জিন ও ফ্রিজের কাজ বোঝাতে ব্যবহৃত
হয়।
প্রশ্ন ৭: তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম সূত্র (Zeroth Law) কী?
উত্তর: যদি A বস্তু B-র সাথে এবং B বস্তু C-র সাথে তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকে,
তবে A ও C-ও পরস্পরের সাথে তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকবে।
প্রশ্ন ৮: তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র কী বলে?
উত্তর: এই সূত্র বলে, তাপ নিজে নিজে কখনো ঠাণ্ডা বস্তু থেকে গরম বস্তুতে
প্রবাহিত হয় না। এছাড়া, কোনো ইঞ্জিন ১০০% তাপকে কাজে রূপান্তর করতে পারে না।
প্রশ্ন ৯: আদর্শ গ্যাস কাকে বলে?
উত্তর: যে গ্যাস তাপগতিবিদ্যার সমস্ত সূত্র ও নিয়ম মেনে চলে এবং যার অণুগুলোর
মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল নেই, তাকে আদর্শ গ্যাস বলে।
প্রশ্ন ১০: তাপ ইঞ্জিন কাকে বলে?
উত্তর: তাপকে কাজে রূপান্তরকারী যন্ত্রকে তাপ ইঞ্জিন বলে। যেমন: কার ইঞ্জিন।
প্রশ্ন ১১: হিট ইঞ্জিনের কার্যকারিতা কাকে বলে?
উত্তর: একটি হিট ইঞ্জিন যতোটা তাপ গ্রহণ করে তার তুলনায় কতটা কাজে রূপান্তর
করতে পারে, তার হারকে কার্যকারিতা (efficiency) বলে।
তাপ ইঞ্জিনের কার্যকারিতার সূত্র:
- η = (W / Q₁) × 100%
বা,
- η = [(Q₁ − Q₂) / Q₁] × 100%
যেখানে:
- η = কার্যকারিতা
- Q₁ = তাপ উৎস থেকে গ্রহণকৃত তাপ
- Q₂ = বর্জিত তাপ
- W = উৎপন্ন কাজ
প্রশ্ন ১২: তাপ ইঞ্জিন কখনো ১০০% কার্যকর হয় না কেন?
উত্তর: কারণ কিছু তাপ সবসময় পরিবেশে বর্জিত হয়, ফলে সব তাপ কাজের রূপে পরিণত
হয় না। এটি তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী।
প্রশ্ন ১৩: কার্নো ইঞ্জিন কাকে বলে?
উত্তর: কার্নো ইঞ্জিন হলো একটি কাল্পনিক তাপ ইঞ্জিন যা সর্বোচ্চ
কার্যকারিতাসম্পন্ন।
মনে রাখুন:
- Q = ΔU + W → কিউ মানে তাপ, ইউ মানে শক্তি, ডাব্লিউ মানে কাজ।
- Zeroth law মানে "তিনজন যদি বন্ধ হয়, তবে তারা সবাই বন্ধ!" (A↔B↔C → A↔C)
- 2nd Law → "তাপ নিচে যায় না!"
- Efficiency = (কাজ / তাপ) × ১০০%
গ্যাসের আচরণ ও গতিতত্ত্ব
এটি এমন একটি অধ্যায়, যেখান থেকে মৌলিক সূত্র, বাস্তব প্রয়োগ এবং
ব্যতিক্রমভিত্তিক প্রশ্ন করা হয়। নিচে আমি সহজ ভাষায় সব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও
উত্তর একসাথে দিয়েছি।
ভাইভাতে আসতে পারে এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: গ্যাসের আচরণ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: গ্যাসের চাপ, আয়তন, তাপমাত্রা ইত্যাদি পরিবর্তনের সময় যেভাবে গ্যাস আচরণ
করে, তাকেই গ্যাসের আচরণ বলে।
প্রশ্ন ২: আদর্শ গ্যাস কাকে বলে?
উত্তর: যে গ্যাস তাপগতিবিদ্যার সকল সূত্র ও গ্যাসের সূত্রগুলো ঠিকভাবে অনুসরণ
করে এবং যার অণুরা পরস্পরের প্রতি কোনো আকর্ষণ বল প্রয়োগ করে না, তাকে আদর্শ
গ্যাস বলে।
প্রশ্ন ৩: বাস্তব গ্যাস কী?
উত্তর: বাস্তব জীবনে পাওয়া যায় এমন গ্যাস, যেগুলোর অণুর মধ্যে আকর্ষণ ও বিকর্ষণ
বল থাকে এবং যা সবসময় আদর্শ গ্যাসের মতো আচরণ করে না।
প্রশ্ন ৪: বয়েলের সূত্র কী?
উত্তর: স্থির তাপমাত্রায় গ্যাসের চাপ এবং আয়তনের গুণফল ধ্রুবক থাকে।
সূত্র:
- P × V = Constant
প্রশ্ন ৫: চার্লসের সূত্র কী?
উত্তর: স্থির চাপ থাকলে, গ্যাসের আয়তন তাপমাত্রার সাথে সরাসরি আনুপাতিক হয়।
সূত্র:
- V / T = Constant
প্রশ্ন ৬: গে-লুসাকের সূত্র কী?
উত্তর: স্থির আয়তনে, গ্যাসের চাপ ও তাপমাত্রা পরস্পর আনুপাতিক।
সূত্র:
- P / T = Constant
প্রশ্ন ৭: গ্যাসের সাধারণ সূত্র (General Gas Law) কী?
উত্তর: একটি সূত্রে বয়েল, চার্লস ও গে-লুসাকের সূত্র একত্রে প্রকাশ করা যায়।
সূত্র:
- (P × V) / T = Constant
প্রশ্ন ৮: আদর্শ গ্যাস সমীকরণ (Ideal Gas Equation) কী?
উত্তর: এই সূত্র দিয়ে যেকোনো আদর্শ গ্যাসের আচরণ নির্ণয় করা যায়।
সূত্র:
- PV = nRT
যেখানে:
- P = চাপ
- V = আয়তন
- n = মোল সংখ্যা
- R = গ্যাস ধ্রুবক
- T = কেলভিন স্কেলে তাপমাত্রা
প্রশ্ন ৯: গ্যাস ধ্রুবক R এর মান কত?
উত্তর: গ্যাস ধ্রুবক,
- R = 8.31 J/mol·K
প্রশ্ন ১০: গ্যাসের গতিতত্ত্ব কাকে বলে?
উত্তর: গ্যাস অণুর গতি এবং এদের সংঘর্ষ, গতিশক্তি ও আচরণ নিয়ে যে তত্ত্ব আলোচনা
করে, তাকে গ্যাসের গতিতত্ত্ব বলা হয়।
প্রশ্ন ১১: গ্যাসের গতিতত্ত্বের মূল ধারণা বা উপপাদ্যগুলো কী কী?
উত্তর: গ্যাসের গতিতত্ত্বের মূল ধারণা বা উপপাদ্যগুলো-
- গ্যাস অণু ক্ষুদ্র এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন
- অণুরা এলোমেলোভাবে চলে
- সংঘর্ষ স্থিতিস্থাপক
- মধ্যবর্তী সময় অণুরা কোনো বল প্রয়োগ করে না
- গ্যাসের চাপ সংঘর্ষের কারণে হয়
প্রশ্ন ১২: গড় গতিশক্তির সূত্র কী?
উত্তর: সূত্র: KE_avg = (3/2) kT
যেখানে:
- KE_avg = গড় গতিশক্তি
- k = বল্টজম্যান ধ্রুবক
- T = কেলভিন তাপমাত্রা
প্রশ্ন ১৩: গ্যাসের চাপ কিভাবে তৈরি হয়?
উত্তর: গ্যাসের অণুগুলো যখন পাত্রের দেয়ালে সংঘর্ষ করে, তখন যে বল প্রয়োগ করে
সেটিই চাপ হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন ১৪: গ্যাসের চাপ এবং গড় গতিশক্তির মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর: তাপমাত্রা যত বেশি, অণুর গড় গতিশক্তি তত বেশি, ফলে চাপও বেশি হয়।
মনে রাখুন:
- Boyle = P × V
- Charles = V / T
- Gay-Lussac = P / Tক
- সব একসাথে → PV / T = Constant
- আদর্শ গ্যাসের জন্য PV = nRT
- গড় শক্তি মনে রাখো → 3/2 kT
স্থির বিদ্যুৎ
স্থির বিদ্যুৎ অধ্যায় থেকে ভাইভা প্রশ্ন হয় অনেক বেশি। এই অধ্যায়ের প্রশ্নগুলো
ছোট ও সহজ। আপনি যদি এই প্রশ্ন-উত্তরগুলো মনে রাখেন ও ব্যাখ্যা দিতে পারেন, তাহলে
এই অধ্যায় থেকে খুব সহজে ভাইভা প্রশ্ন ধরলে পারবেন।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: স্থির বিদ্যুৎ কী?
উত্তর: যখন কোনো বস্তুর ওপর চার্জ জমে থাকে কিন্তু সরবে না, তখন তাকে স্থির
বিদ্যুৎ বলে।
যেমন: রুল চুলে ঘষে কাগজ আকর্ষণ করে।
প্রশ্ন ২: ইলেকট্রিক চার্জ কী?
উত্তর: ইলেকট্রন বা প্রোটনের যে বৈদ্যুতিক ধর্ম তাকে চার্জ বলে।
- দুই ধরনের চার্জ আছে: ধনাত্মক (+) ও ঋণাত্মক (−)।
প্রশ্ন ৩: চার্জের একক কী?
উত্তর: চার্জের একক হলো কুলম্ব (Coulomb)।
- ১ ইলেকট্রনের চার্জ = −1.6 × 10⁻¹⁹ C
প্রশ্ন ৪: কুলম্বের সূত্র কী?
উত্তর: দুই স্থির চার্জিত কণার মধ্যে যে বল কাজ করে, তার পরিমাণ চার্জের
গুণফলের সাথে সরাসরি এবং দূরত্বের বর্গের বিপরীত অনুপাতে হয়।
সূত্র: F = (k × q₁ × q₂) / r²
যেখানে:
- F = বল
- q₁ ও q₂ = দুই চার্জ
- r = তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব
- k = 9 × 10⁹ N·m²/C²
প্রশ্ন ৫: কুলম্ব বল কখন আকর্ষণ এবং কখন বিকর্ষণ হয়?
উত্তর: বিপরীত চার্জ হলে → আকর্ষণ। একই ধরনের চার্জ হলে → বিকর্ষণ।
প্রশ্ন ৬: তড়িৎ ক্ষেত্র কাকে বলে?
উত্তর: চার্জের চারপাশে একটি অদৃশ্য ক্ষেত্র থাকে, যেখানে অন্য চার্জের উপর বল
কাজ করে। এটাকে তড়িৎ ক্ষেত্র (Electric Field) বলে।
সূত্র: E = F / q
যেখানে:
- E = তড়িৎ ক্ষেত্রের তীব্রতা
- F = বল
- q = পরীক্ষণ চার্জ
প্রশ্ন ৭: তড়িৎ বিভব (Electric Potential) কাকে বলে?
উত্তর: একক ধনাত্মক চার্জকে কোনো স্থানে আনতে যত কাজ করতে হয়, তা সেই স্থানের
তড়িৎ বিভব।
সূত্র: V = W / q
যেখানে:
- V = তড়িৎ বিভব
- W = কাজ
- q = চার্জ
প্রশ্ন ৮: তড়িৎ বিভব পার্থক্য (Potential Difference) কী?
উত্তর: দুই বিন্দুর তড়িৎ বিভবের পার্থক্যকে তড়িৎ বিভব পার্থক্য বলে। এটি হলো
ভোল্টেজ।
- একক: ভোল্ট (Volt)
প্রশ্ন ৯: বিদ্যুৎ নিরোধক ও পরিবাহীর মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: পরিবাহী: যেসব পদার্থে ইলেকট্রন সহজে চলে, যেমন তামা।
নিরোধক: যেসব পদার্থে ইলেকট্রন চলতে পারে না, যেমন প্লাস্টিক
প্রশ্ন ১০: স্থির বিদ্যুৎ কীভাবে উৎপন্ন হয়?
উত্তর: ঘর্ষণের মাধ্যমে ইলেকট্রনের স্থানান্তর হলে একটি বস্তুর ওপর চার্জ জমে
এবং স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হয়।
প্রশ্ন ১১: স্থির বিদ্যুতের ব্যবহার কোথায় হয়?
উত্তর: স্থির বিদ্যুতের ব্যবহার হয়-
- কপিয়ার মেশিন
- ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক প্রিন্টার
- এয়ার ক্লিনার
- স্প্রে পেইন্টিং
মনে রাখুন:
- F = kqq/r² → বলের উৎস চার্জ আর দূরত্ব
- E = F/q → বল ভাগে চার্জ মানেই ক্ষেত্র
- V = W/q → কাজ ভাগে চার্জ মানেই বিভব
- তড়িৎ বিভব পার্থক্য = কাজ / চার্জ = V
চল বিদ্যুৎ
এই অধ্যায়টি ভাইভা বোর্ডে স্যারদের খুবই ফেভারিট। এখানে সূত্র, সংজ্ঞা, একক,
প্রয়োগ—সব কিছু থেকেই প্রশ্ন হয়।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: চল বিদ্যুৎ কী?
উত্তর: যখন কোনো পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে ইলেকট্রন সঞ্চালিত হয়, তখন তাকে চল
বিদ্যুৎ বা বিদ্যুৎ প্রবাহ বলে।
প্রশ্ন ২: তড়িৎ প্রবাহ বা কারেন্ট কাকে বলে?
উত্তর: একক সময়ের মধ্যে কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যে পরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হয়,
তাকেই তড়িৎ প্রবাহ বা কারেন্ট বলে।
সূত্র: I = Q / t
যেখানে:
- I = কারেন্ট (Ampere)
- Q = চার্জ (Coulomb)
- t = সময় (second)
প্রশ্ন ৩: কারেন্টের একক কী?
উত্তর: কারেন্টের একক হলো অ্যাম্পিয়ার (Ampere)।
- ১ Ampere = ১ কুলম্ব / ১ সেকেন্ড
প্রশ্ন ৪: বিদ্যুৎ উৎস বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যে ডিভাইস তড়িৎ বিভব প্রদান করে ও ইলেকট্রনকে সঞ্চালনে সহায়তা করে, তাকে
বিদ্যুৎ উৎস (e.g., ব্যাটারি, সেল) বলে।
প্রশ্ন ৫: ওহমের সূত্র কী?
উত্তর: স্থির তাপমাত্রায় কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্য কারেন্টের
সাথে সরাসরি অনুপাতিক।
সূত্র: V = I × R
যেখানে:
- V = বিভব পার্থক্য (Volt)
- I = কারেন্ট (Ampere)
- R = রোধ বা রেজিস্ট্যান্স (Ohm)
প্রশ্ন ৬: রোধ বা রেজিস্ট্যান্স কী?
উত্তর: কোনো পরিবাহীতে কারেন্ট প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যে ধর্ম, তাকে
রোধ বলে।
- রোধের একক: ওহম (Ω)
প্রশ্ন ৭: ওহমের সূত্র থেকে রোধ বের করার সূত্র কী?
- সূত্র: R = V / I
প্রশ্ন ৮: রোধ কিসে নির্ভর করে?
উত্তর: রোধ যেসবে নির্ভর করে-
- পরিবাহীর দৈর্ঘ্য
- ক্ষেত্রফল
- পদার্থের প্রকার
- তাপমাত্রা
সূত্র: R = ρ × (L / A)
যেখানে:
- ρ = পদার্থের রোধক ধর্ম (Resistivity)
- L = দৈর্ঘ্য
- A = ক্ষেত্রফল
প্রশ্ন ৯: রোধের ধর্ম কাকে বলে?
উত্তর: একক দৈর্ঘ্য এবং একক ক্ষেত্রফলের কোনো পদার্থের রোধকে রোধের ধর্ম বা
Resistivity বলে।
- একক: Ohm·meter (Ω·m)
প্রশ্ন ১০: পরিবাহীর সমান্তরাল ও শ্রেণী সংযোগের নিয়ম কী?
- শ্রেণী সংযোগে: R_total = R₁ + R₂ + R₃ + ...
- সমান্তরাল সংযোগে: 1/R_total = 1/R₁ + 1/R₂ + 1/R₃ + ...
প্রশ্ন ১১: কন্ডাক্টর ও ইনসুলেটরের পার্থক্য কী?
উত্তর: কন্ডাক্টর: বিদ্যুৎ সহজে প্রবাহিত হয় (যেমন: তামা)। ইনসুলেটর: বিদ্যুৎ
প্রবাহিত হয় না (যেমন: রাবার)
প্রশ্ন ১২: ব্যাটারির কাজ কী?
উত্তর: ব্যাটারি ইলেকট্রন প্রবাহের জন্য একটি তড়িৎ বিভব তৈরি করে এবং চল
বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
প্রশ্ন ১৩: কারেন্ট প্রবাহের দিক কেমন হয়?
উত্তর: কারেন্ট প্রবাহ ধনাত্মক থেকে ঋণাত্মকের দিকে ধরা হয় (সনাতন দিক)। তবে
ইলেকট্রন প্রবাহিত হয় ঋণাত্মক থেকে ধনাত্মকে।
মনে রাখুন:
- I = Q/t → “কারেন্ট মানে চার্জের বেগ”
- V = IR → “ভোল্টেজ = কারেন্ট × রোধ”
- R = ρL/A → “রোধ বাড়ে দৈর্ঘ্যে, কমে চওড়ায়”
চৌম্বকত্ব
এই অধ্যায়টি ছোট হলেও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক ব্যবহারিক উদাহরণ রয়েছে এখানে।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: চৌম্বকত্ব কী?
উত্তর: কোনো বস্তুর এমন ধর্ম, যার মাধ্যমে সেটি লোহা, নিকেল, কobalt ইত্যাদি
পদার্থকে আকর্ষণ করতে পারে, তাকে চৌম্বকত্ব বলে।
প্রশ্ন ২: চুম্বক কাকে বলে?
উত্তর: যে বস্তু চৌম্বকীয় পদার্থকে আকর্ষণ করে, তাকে চুম্বক বলে।
প্রশ্ন ৩: প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম চুম্বকের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: প্রাকৃতিক চুম্বক প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়, যেমন ম্যাগনেটাইট। কৃত্রিম
চুম্বক মানুষ তৈরি করে, যেমন লোহায় চৌম্বক ঘষে বানানো চুম্বক।
প্রশ্ন ৪: চুম্বকের দুটি মেরু কী?
উত্তর: চুম্বকের দুটি মেরু থাকে: উত্তর মেরু (North Pole) ও দক্ষিণ মেরু (South
Pole)।
- একই মেরু বিকর্ষণ করে, ভিন্ন মেরু আকর্ষণ করে।
প্রশ্ন ৫: চৌম্বক বল কী?
উত্তর: চুম্বকের কোনো মেরু যখন আরেকটি চুম্বকের ওপর বল প্রয়োগ করে, তখন তাকে
চৌম্বক বল বলে।
প্রশ্ন ৬: চৌম্বক ক্ষেত্র কাকে বলে?
উত্তর: চুম্বকের চারপাশে একটি অদৃশ্য এলাকা থাকে যেখানে চৌম্বক বল কাজ করে।
এটিই চৌম্বক ক্ষেত্র।
প্রশ্ন ৭: চৌম্বক ক্ষেত্রের রেখা (Lines of force) কীভাবে চলে?
উত্তর: চৌম্বক ক্ষেত্রর রেখা উত্তর মেরু থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ মেরুতে প্রবেশ
করে।
প্রশ্ন ৮: চৌম্বকীয় পদার্থ ও অকৌম্বকীয় পদার্থের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: চৌম্বকীয় পদার্থ: চুম্বক আকর্ষণ করে (যেমন: লোহা)। অকৌম্বকীয় পদার্থ:
চুম্বক আকর্ষণ করে না (যেমন: কাঠ, প্লাস্টিক)
প্রশ্ন ৯: বৈদ্যুতিক চুম্বক কী?
উত্তর: কোনো লোহার কোরে তার পেচিয়ে তাতে কারেন্ট প্রবাহিত করলে তৈরি হওয়া
চুম্বককে বৈদ্যুতিক চুম্বক বলে।
- ব্যবহার: বৈদ্যুতিক বেল, মোটর, ক্রেন ইত্যাদিতে।
প্রশ্ন ১০: স্থায়ী চুম্বক ও অস্থায়ী চুম্বকের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: স্থায়ী চুম্বক: দীর্ঘ সময় চৌম্বক ধর্ম বজায় রাখে (যেমন: অ্যালনাইকো)।
অস্থায়ী চুম্বক: সাময়িকভাবে চৌম্বক হয় (যেমন: বৈদ্যুতিক চুম্বক)
প্রশ্ন ১১: পৃথিবী নিজেই একটি চুম্বক – এটা কিভাবে?
উত্তর: পৃথিবীর অভ্যন্তরে গলিত লোহা থাকে, যা পৃথিবীর নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্র
সৃষ্টি করে। তাই পৃথিবী নিজেই একটি বিশাল চুম্বক।
প্রশ্ন ১২: কম্পাস কীভাবে কাজ করে?
উত্তর: কম্পাসে ছোট একটি চুম্বক থাকে, যা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র অনুসরণ করে
উত্তর-দক্ষিণ দিকে স্থির থাকে। এজন্য দিক নির্দেশনা দিতে পারে।
প্রশ্ন ১৩: চুম্বকের কিছু ব্যবহার কী কী?
উত্তর: চুম্বকের কিছু ব্যবহার হচ্ছে-
- কম্পাসে দিক নির্ধারণ
- মোটর, জেনারেটরেচ
- মাইক্রোফোন, স্পিকারে
- ডোর লক, চৌম্বক তালায়
- MRI মেশিনে
কিছু পয়েন্ট মনে রাখুন:
- চৌম্বক ক্ষেত্রর রেখা চলে: উত্তর → দক্ষিণ (চুম্বকের বাইরে)
- চৌম্বকীয় পদার্থ: লোহা, নিকেল
- বৈদ্যুতিক চুম্বক তৈরি হয়: কারেন্ট চালানো কুন্ডলীতে
- পৃথিবী নিজেই একটি চুম্বক – উত্তর ও দক্ষিণ মেরু আছে
আরো মনে রাখুন:
- চুম্বক = দুই মেরু
- চৌম্বক ক্ষেত্র = বল কাজ করে এমন অদৃশ্য জায়গা
- চুম্বকের রেখা সবসময় উত্তর থেকে দক্ষিণ যায়
- বৈদ্যুতিক চুম্বক = কুন্ডলী + কারেন্ট + লোহার কোর
বৈদ্যুতিক বর্তনী ও পরিব্যাপ্তি
এই অধ্যায়টি বাস্তব জীবনের অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িত — যেমন সুইচ, সার্কিট বোর্ড,
বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: বৈদ্যুতিক বর্তনী (Electric Circuit) কাকে বলে?
উত্তর: যখন বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য একটি সম্পূর্ণ পথ তৈরি হয়, যেটির মাধ্যমে
ইলেকট্রন প্রবাহিত হতে পারে, তখন তাকে বৈদ্যুতিক বর্তনী বলে।
প্রশ্ন ২: বন্ধ ও খোলা বর্তনী কী?
উত্তর: বন্ধ বর্তনী: সুইচ বন্ধ থাকলে সার্কিট সম্পূর্ণ হয়, কারেন্ট প্রবাহিত
হয়। খোলা বর্তনী: সুইচ খোলা থাকলে সার্কিটে গ্যাপ থাকে, কারেন্ট প্রবাহিত হয়
না।
প্রশ্ন ৩: বৈদ্যুতিক বর্তনীর মূল উপাদানগুলো কী কী?
উত্তর: বৈদ্যুতিক বর্তনীর মূল উপাদানগুলো-
- বিদ্যুৎ উৎস (ব্যাটারি)
- পরিবাহী তার
- রোধ বা রেজিস্টর
- সুইচ
- লোড (যেমন: বাল্ব, ফ্যান)
প্রশ্ন ৪: সরল বর্তনী ও যৌগিক বর্তনীর মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: সরল বর্তনী: একটি মাত্র পথ থাকে কারেন্ট প্রবাহের জন্য। যৌগিক বর্তনী:
একাধিক পথ থাকে কারেন্ট প্রবাহের জন্য।
প্রশ্ন ৫: পরিব্যাপ্তি (Continuity) কী?
উত্তর: পরিব্যাপ্তি বোঝায় যে সার্কিটে কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারছে কি না। যদি
সার্কিট সম্পূর্ণ হয়, তবে পরিব্যাপ্তি আছে।
প্রশ্ন ৬: পরিব্যাপ্তি পরীক্ষক কী?
উত্তর: এটি একটি যন্ত্র যা দিয়ে দেখা হয় কোনো সার্কিট সম্পূর্ণ আছে কিনা —
অর্থাৎ কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারছে কিনা। সাধারণত টেস্টারের মতো।
প্রশ্ন ৭: সিরিজ ও প্যারালাল সংযোগে কারেন্ট ও ভোল্টেজ কেমন থাকে?
উত্তর: সিরিজ সংযোগে:
- কারেন্ট সমান থাকে
- ভোল্টেজ ভাগ হয়
প্যারালাল সংযোগে:
- ভোল্টেজ সমান থাকে
- কারেন্ট ভাগ হয়
প্রশ্ন ৮: হোমে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সংযোগ কোন ধরণের সংযোগ?
উত্তর: প্যারালাল সংযোগ, যাতে প্রতিটি যন্ত্র আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করতে পারে।
প্রশ্ন ৯: শর্ট সার্কিট কী?
উত্তর: যখন কোনো কারণে সরাসরি দুইটি তার সংযুক্ত হয়ে যায় এবং রোধ প্রায় শূন্য
হয়ে যায়, তখন সেটিকে শর্ট সার্কিট বলে। এতে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হয় এবং
আগুন লাগার ঝুঁকি থাকে।
প্রশ্ন ১০: ফিউজ কী?
উত্তর: ফিউজ হলো এমন একটি যন্ত্রাংশ, যা সার্কিটে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত
হলে গলে গিয়ে সার্কিট বন্ধ করে দেয়। এটি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে।
প্রশ্ন ১১: সার্কিট ডায়াগ্রাম বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: বৈদ্যুতিক বর্তনীর বিভিন্ন অংশকে প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করে একটি
ডায়াগ্রামের মাধ্যমে প্রকাশ করাকে সার্কিট ডায়াগ্রাম বলে।
প্রশ্ন ১২: সাধারণভাবে কোন কোন প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার হয়?
উত্তর: যেসব প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার হয়-
- ব্যাটারি: |||
- বাল্ব: ⓞ
- সুইচ: —o o—
- রোধ: ▭▭▭
- গ্রাউন্ড: ⏚
কিছু সূত্র:
- Ohm’s Law: V = I × R
- সিরিজ সংযোগে রোধ: R_total = R₁ + R₂ + R₃ + ...
- প্যারালাল সংযোগে রোধ: 1/R_total = 1/R₁ + 1/R₂ + ...
- শক্তি: P = V × I
মনে রাখুন:
- V = IR → ভোল্টেজ = কারেন্ট × রোধক
- ফিউজ = সেফটি ডিভাইস
- শর্ট সার্কিট = বিপজ্জনক, কারেন্ট বেড়ে যায়
- পরিব্যাপ্তি মানে সার্কিট ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান
এই অধ্যায়টি একটু নতুন ধরণের হলেও বেশ চিত্তাকর্ষক। এখানে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স,
কোয়ান্টাম ধারণা, অণু, পরমাণু, বিকিরণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন আসে।
এই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১: আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান কী?
উত্তর: ১৮৯৫ সালের পর আবিষ্কৃত পদার্থবিজ্ঞানের যেসব নতুন তত্ত্ব, যেমন –
কোয়ান্টাম তত্ত্ব, আপেক্ষিকতা তত্ত্ব, নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান, সেগুলো আধুনিক
পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন ২: রেডিওঅ্যাকটিভিটি কী?
উত্তর: কিছু মৌল এমনিতেই নিউক্লিয়াস থেকে বিকিরণ নিঃসরণ করে। এই প্রক্রিয়াকে
রেডিওঅ্যাকটিভিটি বলে।
প্রশ্ন ৩: রেডিওঅ্যাকটিভ বিকিরণের তিনটি ধরন কী কী?
উত্তর: রেডিওঅ্যাকটিভ বিকিরণের তিনটি ধরন-
- আলফা (α): ভারী, ধীরগতি সম্পন্ন
- বিটা (β): হালকা, দ্রুতগতিসম্পন্ন
- গামা (γ): তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ, ভর নেই
প্রশ্ন ৪: আলফা, বিটা ও গামা কণার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: আলফা: হিলিয়াম নিউক্লিয়াস, প্রবল আয়নকারী ক্ষমতা। বিটা: ইলেকট্রনের
মতো, মাঝারি আয়নকারী। গামা: উচ্চ শক্তিসম্পন্ন তরঙ্গ, আয়নকারী নয়, প্রবল
অনুপ্রবেশ ক্ষমতা।
প্রশ্ন ৫: আইসোটোপ (Isotope) কী?
উত্তর: একই মৌল কিন্তু পারমাণবিক ভর ভিন্ন এমন পরমাণুকে আইসোটোপ বলে। যেমন:
H-1, H-2, H-3।
প্রশ্ন ৬: পারমাণবিক সংখ্যা ও ভর সংখ্যা কী?
উত্তর: পারমাণবিক সংখ্যা (Z): পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সংখ্যা। ভর সংখ্যা
(A): নিউক্লিয়াসে প্রোটন + নিউট্রনের সংখ্যা।
প্রশ্ন ৭: নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া কী?
উত্তর: যে বিক্রিয়ায় পরমাণুর নিউক্লিয়াস পরিবর্তিত হয়ে নতুন মৌল তৈরি হয় এবং
শক্তি উৎপন্ন হয়, তাকে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া বলে।
প্রশ্ন ৮: ফিউশন ও ফিশনের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ফিশন: ভারী নিউক্লিয়াস ছোট টুকরোতে ভেঙে যায় (যেমন: ইউরেনিয়াম বিভাজন)।
ফিউশন: দুটি হালকা নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে (যেমন: সূর্যে
হাইড্রোজেন ফিউশন)।
প্রশ্ন ৯: নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর কী?
উত্তর: নিয়ন্ত্রিতভাবে নিউক্লিয়ার ফিশন ঘটিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্রকে
নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বলে।
প্রশ্ন ১০: আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের কিছু ব্যবহার কী কী?
উত্তর: আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের কিছু ব্যবহার নিম্নরূপ নিচে দেওয়া হল-
- পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন
- মেডিকেল রেডিওথেরাপি
- শিল্পে রেডিওগ্রাফি
- স্যাটেলাইট ও স্পেস টেকনোলজি
- পারমাণবিক অস্ত্র
প্রশ্ন ১১: ‘E = mc²’ সূত্রটি কী বোঝায়?
উত্তর: এই সূত্রটি আইনস্টাইন দিয়েছেন। এর মানে, ভর (mass) ধ্বংস হলে তা শক্তিতে
(energy) পরিণত হয়। অর্থাৎ, অল্প পরিমাণ ভর থেকেও অনেক শক্তি তৈরি হতে পারে।
এখানে:
- E = শক্তি
- m = ভর
- c = আলোর গতি (3 × 10⁸ m/s)
মনে রাখুন:
- রেডিওঅ্যাকটিভ বিকিরণে তিনটি কণা: α, β, γক
- আলফা = ভারী, গামা = অনুপ্রবেশ ক্ষমতা বেশি
- ফিশন = ভাঙে, ফিউশন = জোড়া লাগে
- E = mc² মনে রাখুন: ভর → শক্তি
গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞান FAQs
১. গতি ও অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য কী?
গতি মানে হলো অবস্থানের পরিবর্তন, আর অবস্থান মানে নির্দিষ্ট কোনো স্থানে থাকা।
২. পৃথিবী যদি আকর্ষণ না করত তাহলে কী হতো?
সবকিছু শূন্যে ভেসে থাকত, নিচে পড়ত না এবং জীবন অসম্ভব হতো।
৩. শব্দ কানে না পৌঁছালে কি শব্দ তৈরি হয় না?
শব্দ তৈরি হয়, কিন্তু কানে না পৌঁছালে আমরা শুনতে পাই না।
৪. চুম্বক পুরানো হলে কাজ কমে কেন?
কারণ অভ্যন্তরীণ চৌম্বক কণাগুলো বিশৃঙ্খল হয়ে যায়, তাই আকর্ষণ কমে যায়।
৫. গ্যাসের চাপ কিভাবে বাড়ানো যায়?
ভলিউম কমিয়ে বা তাপমাত্রা বাড়িয়ে গ্যাসের চাপ বাড়ানো যায়।
৬. আমরা আয়নাতে উল্টো দেখি কেন?
কারণ আয়না প্রতিফলিত আলোর ডান-বাম দিক বদলে দেয়।
৭. বিদ্যুৎ ছাড়াও চুম্বক কেন কাজ করে?
স্থায়ী চুম্বক বিদ্যুৎ ছাড়াই কাজ করে, কারণ এতে চৌম্বকীয় গুণ থাকে।
৮. রেফ্রিজারেটর ঠান্ডা করে কীভাবে?
অভ্যন্তরীণ গরম বাতাস বের করে বাইরে পাঠায়, আর ভিতর ঠান্ডা রাখে।
উপসংহার
এই লেখায় আলোচনা করা পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত ভাইভা প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিবে। পরীক্ষায় ভালো ফল করতে চাইলে সংক্ষিপ্ত
ও গুরুত্বপূর্ণ বেসিক প্রশ্নের প্র্যাকটিস করা প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করেছি সহজ
ভাষায় প্রত্যেকটি টপিক উপস্থাপন করতে, যেন সবাই বুঝতে পারে। একটি ভালো
প্রস্তুতি পরীক্ষার আগের টেনশন কমিয়ে দেয় অনেকখানি। আশা করি, এই গাইড আপনাকে
ভাইভা পরীক্ষায় সফল করতে সাহায্য করবে।