প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এর ৫টি নিয়ম পড়লেই সব নিয়ম শেষ

বাংলা ব্যাকরণে প্রয়োগ অপপ্রয়োগ অন্যান্য অধ্যায়ের মতোই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। কিন্তু প্রয়োগ অপপ্রয়োগের এতগুলো নিয়ম আপনাদের মনে থাকে না। প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এর ৫টি নিয়ম জানলেই যে কোন পরীক্ষায় আপনারা কমন পাবেন। আপনারা যদি এই পাঁচটা নিয়ম শেষ করতে পারেন তাহলে প্রয়োগ-অপপ্রয়োগের জন্য আর কোন নিয়ম পড়ার দরকার নেই।
প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ-এর-৫টি-নিয়ম
এজন্য এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, কারণ এই একটি আর্টিকেল থেকেই আপনাদের প্রয়োগ অপপ্রয়োগের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

সূচিপত্রঃ প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এর ৫টি নিয়ম

এই আর্টিকেলের সূচিপত্র দেখে নিন-

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এর ৫টি নিয়ম

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ কাকে বলে?

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ: যেকোনো শব্দের সঠিক ব্যবহারের নাম প্রয়োগ, আর ভুল ব্যবহারের নাম অপপ্রয়োগ।


ভাষার অপপ্রয়োগ ঘটে ৩টি কারনে-
  1. উচ্চারন দোষে
  2. শব্দ গঠন ত্রুটিতে
  3. শব্দের অর্থগত বিভ্রান্তিতে
তাহলে চলুন আমরা এখন মাত্র পাঁচটি নিয়মের মাধ্যমে প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ অধ্যায়টি শিখে আসি।

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ নিয়ম ১

⇒ দুটি বহুবচন / একই অর্থবোধক ২টি শব্দ থাকলে ১টি বাদ দিতে হবে। যেমন-
  • সকল ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত। (ভুল)
  • সকল ছাত্র-ছাত্রী উপাডিঙ্খত। (সঠিক)
  • ছাত্র-ছাত্রীরা উপঙ্খিত। (সঠিক)
⇒ অনুরুপ - 'সদাসর্বদা' কথাটি ভুল। কারন ২টি শব্দই একই অর্থবোধক। যেমন-
  • সদা অথবা সর্বদা। (সঠিক)

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ নিয়ম ২

⇒ কোনো 'বিশেষণ' পদের সাথে তা/য/য-ফলা বসলে সেই শব্দটি 'বিশেষ্য' হবে। যেমন-
  • দরিদ্র (বিশেষণ) + তা = দরিদ্রতা (বিশেষ্য)
⇒ মনে রাখতে হবে বিশেষ্যের পরে তা বসলে প্রত্যয়জনিত ভুল হবে। যেমন-
  • দারিদ্র (বিশেষ্য) + তা = দারিদ্রতা (প্রত্যয়জনিত ভুল)

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ নিয়ম ৩

⇒ অহো, দিবা, অর্ধ/মধ্য এই শব্দগুলোর পরে 'রাত্রি' থাকলে রাত্রি, শব্দটি পরিবর্তন হয়ে রাত্র হবে। যেমন-
  • অহো + রাত্রি = অহোরাত্র
  • দিবা + রাত্রি = দিবারাত্র
ব্যাতিক্রমঃ দিনরাত্রি কেখনো দিনরাত্র হয়না)

⇒ পিতা/মাতা/ভ্রাতা এর পরে অন্য শব্দ থাকলে পিতৃ, মাতৃ, ভাতৃ হবে। যেমন-
  • ভ্রাতা + বৃন্দ = ভাতৃবৃন্দ
⇒ কোনো শব্দের শুরুতে নির, নি, নী থাকলে ঐ শব্দের শেষে 'ঈ' হবে না। যেমন-
  • নিরহঙ্কারী (ভুল)
  • নিরহঙকার (সঠিক)
⇒ কালী, ষষ্ঠী, দেবী শব্দগুলোর পরে দাস বসলে শব্দগুলোতে 'ই' কার হবে। যেমন-
  • কালিদাস, দেবিদাস, ষষ্টিদাস

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ নিয়ম ৪

⇒ প্রতি বর্গের তৃতীয় বর্ণ পরিবর্তন হয়ে প্রথম বর্ন হবে। অর্থ্যাৎ গ>ক, জ>চ, ব>প হবে। যেমন-
  • দিগন্ত = দিক্ + অন্ত
  • সুবন্ত = সুপ+অন্ত
⇒ বিসর্গ (ঃ) এর পরে ক/খ, প/ক্ষ, ম/স থাকলে বিসর্গ (ঃ) বহাল থাকবে। যেমন-
  • ইতঃপূর্বে, মনঃকষ্ট, উচ্চঃস্বরে
⇒ কিন্তু বিসর্গ (ঃ) এর পরে উপসের ৬টি পরবর্ণ না থাকলে বিসর্গের খানে হবে। যেমন-
  • ইতঃ + মধ্যে = ইতোমধ্যে
  • তপঃ + বন = তপোবন

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ নিয়ম ৫

⇒ কোনো শব্দে ঋ/ঋ-কার (ৃ), র/র-ফলা (এ)/রেফ (') এবং ষ/ক্ষ থাকলে ঐ শব্দে 'ণ' হবে। যেমন-
  • ঋণ, তৃণ, প্রাণ, বর্ণ, ভাষণ
⇒ ট-বর্গীয় (ট, ঠ, ড, ঢ) বর্ণের পূর্বে 'ণ' হবে। যেমন-
  • বণ্টন, কণ্ঠ, কাণ্ড
⇒ কিছু শব্দে ঋ, র, ষ এবং ট-বর্গীয় বর্ণ না থাকার পরেও স্বভাবতই 'ণ' হয়।
  • যেমনঃ চাণক্য, বাণিজ্য, ফণী, শোণিত
⇒ কোন শব্দে র/র-ফলা/রেফ থাকলে ঐ শব্দে হ্ণ (হ+ণ) হবে অন্যথায় হ্ন (হ+ন) হবে। যেমন-
  • অপরাহ্ণ, পূর্বাহ্ণ, সায়াহ্ন, মধ্যাহ্ন

⇒ কিছু তৎসম শব্দের 'ণ' পরিবর্তন হয়ে তদ্ভব হলে দন্ত্য-ন হয়। যেমন-
  • পুরাণ (তৎসম)- পুরানো/পুরোনো (তদ্ভব)
⇒ কতিপয় সনিধ ও সমাসবদধ শব্দে 'ণ' বসে না। যেমন-
  • অহর্ণিশ (ভুল) – অহর্নিশ (সঠিক)
  • হরিণাম (ভুল) – হরিনাম (সঠিক)
⇒ বিদেশি শব্দে 'ণ' বসে না। যেমন-
  • মডার্ণ (ভুল) – মডার্ন (সঠিক)

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্ন উত্তর পর্ব

১. প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ কি শুধুমাত্র ভাষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

উত্তর: প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ শুধুমাত্র ভাষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বরং শব্দার্থ, বাক্যগঠন, এমনকি কাব্যের প্রয়োগেও এটি প্রযোজ্য।

২. অপপ্রয়োগ কি সবসময় ভুল হিসেবে ধরা হয়?

উত্তর: সব অপপ্রয়োগই ভুল নয়। অনেক সময় সাহিত্যিক বা কবিরা রচনায় ইচ্ছাকৃতভাবে অপপ্রয়োগ ব্যবহার করেন বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য। এটি শিল্পের স্বাধীনতা হিসেবে গণ্য হয়।

৩. অর্ধপ্রয়োগ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: অর্ধপ্রয়োগ হলো এমন প্রয়োগ যেখানে শব্দ বা বাক্যের অর্থ আংশিকভাবে সঠিক, কিন্তু পুরোপুরি সঠিক নয়। যেমন, “তিনি একটি সুন্দর বই পড়লেন”। এখানে "সুন্দর" শব্দটি বইয়ের ক্ষেত্রে সঠিক, তবে এটি "আকর্ষণীয়" শব্দের চেয়ে কম প্রাসঙ্গিক।

৪. শব্দের অপপ্রয়োগ কখন ভিন্ন অর্থ তৈরি করতে পারে?

উত্তর: শব্দের অপপ্রয়োগ অনেক সময় হাস্যকর বা বিভ্রান্তিকর অর্থ তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, ভুল- আমি তাকে বিশাল ক্ষুদ্র উপহার দিলাম। সঠিক- আমি তাকে ছোট একটি উপহার দিলাম।

৫. প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ ভাষার পরিবর্তনের সঙ্গে বদলায়?

উত্তর: হ্যাঁ, ভাষা পরিবর্তনের সঙ্গে প্রয়োগ-অপপ্রয়োগের সংজ্ঞা বদলায়। যেমন- একসময় “অপ্সরা” শব্দটি কেবল দেবী বা অপার্থিব সৌন্দর্যের অর্থে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে এটি প্রসাধনী বা সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

৬. প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ শেখার জন্য কোন রিসোর্স ভালো?

উত্তর: প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ শেখার জন্য বাংলা ব্যাকরণের বই সবচেয়ে ভালো। এছাড়া নিয়মিত বাংলা সংবাদপত্র ও সাহিত্য পাঠ করলে প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ শেখা যায়।

উপসংহার

প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এর ৫টি নিয়ম আমাদের ভাষা ব্যবহারে শুদ্ধতা ও উপযুক্ততা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। সঠিক নিয়ম মেনে শব্দের প্রয়োগ আমাদের বক্তব্যকে অর্থবহ ও প্রভাবশালী করে তোলে। অন্যদিকে অপপ্রয়োগ ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে। তাই দৈনন্দিন লেখালেখি কিংবা কথোপকথনে প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এর ৫টি নিয়ম ভালোভাবে জানা ও তা অনুসরণ করা খুবই জরুরি। ভাষার সৌন্দর্য বজায় রাখতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ও সচেতন পাঠকদের এসব নিয়ম চর্চা করা উচিত।

Share This Post ...

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url