পাসপোর্ট ও ভিসার পার্থক্য

পাসপোর্ট ও ভিসার পার্থক্য অনেকেই জানেন না। এই আর্টিকেলে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে—কীভাবে পাসপোর্ট ও ভিসা আলাদা, কী কাজে লাগে, এবং কখন কোনটি প্রয়োজন হয়।
পাসপোর্ট-ও-ভিসার-পার্থক্য
তাই আপনি যদি পাসপোর্ট ও ভিসা সম্পর্কে কিছুই না বুঝে থাকেন এখান থেকে খুব সহজেই এই বিষয় ২টি বুঝতে পারবেন।

সূচিপত্রঃ পাসপোর্ট ও ভিসার পার্থক্য

এক্সপোর্ট ও ভিসা সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আপনি যা যা তথ্য জানতে পারবেন তা এক নজরে দেখে নিন-

পাসপোর্ট ও ভিসার পার্থক্য

পাসপোর্ট হলো আপনার নিজের দেশের একটি আইডেন্টিটি ডকুমেন্ট যা দিয়ে আপনি বিদেশ যেতে পারেন। অন্যদিকে, ভিসা হলো কোনো নির্দিষ্ট দেশে প্রবেশের জন্য সেই দেশের অনুমতি।


সহজভাবে বললে-
  • পাসপোর্ট: নিজের দেশের পরিচয়
  • ভিসা: অন্য দেশের অনুমতি
এই পার্থক্যটা বুঝলেই আপনি বিদেশ ভ্রমণের নিয়ম অনেক সহজে বুঝতে পারবেন।

পাসপোর্ট কী?

পাসপোর্ট হচ্ছে আপনার দেশের সরকার প্রদত্ত একটি পরিচয়পত্র বা ভ্রমণ-ডকুমেন্ট, যা প্রমাণ করে যে আপনি সেই দেশের নাগরিক।
  • এটি ছাড়া আপনি আপনার দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারবেন না।
  • পাসপোর্টে আপনার পরিচয়, জন্মতারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, ছবি এবং পাসপোর্টের মেয়াদ সম্পর্কে তথ্য থাকে।
সুতরাং পাসপোর্ট মানে আপনার নিজের দেশের অনুমতি যা দিয়ে আপনি বিদেশে যেতে পারবেন।

ভিসা কী?

ভিসা হচ্ছে এমন একটি অনুমতিপত্র, যা অন্য কোনো দেশ আপনাকে দেয়, যাতে আপনি তাদের দেশে কিছু সময়ের জন্য প্রবেশ করতে পারেন।
  • প্রতিটি দেশ ঠিক করে দেয় কে তাদের দেশে প্রবেশ করতে পারবে, কতো দিন থাকতে পারবে, কী কারণে যাবে (যেমন: ভ্রমণ, পড়াশোনা, কাজ ইত্যাদি)।
  • এটি সাধারণত পাসপোর্টের মধ্যে স্টিকার আকারে বা আলাদা কাগজে দেওয়া হয়।
সুতরাং ভিসা মানে অন্য দেশের অনুমতি যা দিয়ে আপনি তাদের দেশে প্রবেশ করতে পারবেন।

পাসপোর্ট ও ভিসার সহজ উদাহরণ

১। ধরুন আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। আপনি যদি মালয়েশিয়া যেতে চান, তাহলে:
  • প্রথমে আপনার বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকতে হবে।
  • তারপর মালয়েশিয়ার সরকার থেকে ভিসা নিতে হবে।
২। ধরুন আপনি বাংলাদেশের নাগরিক, তবে এখন আপনি মালয়েশিয়াতে থাকেন (যেমন: পড়াশোনা, চাকরি বা অন্য কারণে)। এখন আপনি বাংলাদেশে আসতে চান।


এই ক্ষেত্রে:
  • আপনার বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলেই আপনি বাংলাদেশে আসতে পারবেন।
  • আপনার ভিসা লাগবে না, কারণ আপনি নিজের দেশে ফিরছেন।
অর্থাৎ পাসপোর্ট প্রমাণ করে যে আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। নিজ দেশে ঢুকতে কোনো নাগরিকের ভিসা লাগে না।

৩। আর যদি আপনি মালয়েশিয়ার পাসপোর্টধারী হতেন তাহলে আপনি বাংলাদেশে আসতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ভিসা নিতে হতো। কারণ আপনি তখন বাংলাদেশি না, আপনি অন্য দেশের নাগরিক।

পাসপোর্ট ও ভিসার মধ্যে পার্থক্য

পাসপোর্ট ও ভিসার মধ্যে ৬টি পার্থক্য পার্থক্য

বিষয় পাসপোর্ট ভিসা
১. এটা কী? আপনার নিজের দেশের পরিচয়পত্র (International ID) অন্য দেশে প্রবেশের অনুমতি
২. এটা কে দেয়? আপনার নিজের দেশের সরকার যে দেশে আপনি যেতে চান, সে দেশের সরকার
৩. উদ্দেশ্য আপনি কোন দেশের নাগরিক তা প্রমাণ করে আপনি সেই দেশে কেন যাচ্ছেন তা অনুমোদন করে
৪. এটি কখন কাজে লাগে? বিদেশে ভ্রমণের জন্য বাধ্যতামূলক বিদেশে প্রবেশ বা থাকার জন্য বাধ্যতামূলক
৫. মেয়াদ (Validity) সাধারণত ৫ বা ১০ বছর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (যেমন: ১৫ দিন, ১ মাস, ১ বছর)
৬. এক দেশের জন্য নাকি অনেক দেশের জন্য? একটাই পাসপোর্ট থাকে, সব দেশে যেতে কাজে লাগে প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা ভিসা লাগে

একজন ব্যক্তির দুই দেশের পাসপোর্ট বা নাগরিকত্ব থাকতে পারে?

হ্যাঁ একজন ব্যক্তি দুই দেশের পাসপোর্ট বা নাগরিকত্ব কিছু ক্ষেত্রে নিতে পারে। তবে সব সময় নয় কারণ এটা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নিয়মের উপর নির্ভর করে।
একজন-ব্যক্তির-দুই-দেশের-পাসপোর্ট-বা-নাগরিকত্ব-থাকতে-পারে

ডুয়াল সিটিজেনশিপ অনুমোদন করে যেসব দেশ

এগুলো হল সেই দেশগুলো যারা একজন মানুষকে একাধিক দেশের নাগরিক হতে দেয়, মানে দুইটা পাসপোর্ট রাখতে দেয়। যেমন:
  • কানাডা
  • যুক্তরাষ্ট্র (USA)
  • যুক্তরাজ্য (UK)
  • অস্ট্রেলিয়া
  • আয়ারল্যান্ড
  • ফ্রান্স, ইত্যাদি
এই দেশের নাগরিকরা অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিলে তাদের পুরাতন নাগরিকত্ব বাতিল করতে হয় না। ফলে তারা দুই দেশের পাসপোর্ট রাখতে পারে।

যেসব দেশ ডুয়াল সিটিজেনশিপ অনুমোদন করে না

এগুলো হল সেই দেশগুলো যারা একজন মানুষকে একাধিক দেশের নাগরিক হতে দেয় না, মানে দুইটা পাসপোর্ট রাখতে দেয় না। যেমন:
  • চীন
  • জাপান
  • বাংলাদেশ (কিছু ব্যতিক্রমসহ)
এই দেশের নিয়ম অনুযায়ী, আপনি যদি অন্য দেশের নাগরিকত্ব নেন, তাহলে পুরানো দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

বাংলাদেশে সাধারণভাবে ডুয়াল সিটিজেনশিপ অনুমোদন করে না, কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে ডুয়াল সিটিজেনশিপ অনুমোদন করে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু দেশের জন্য। যেমন:
  • আমেরিকা
  • কানাডা
  • অস্ট্রেলিয়া
  • যুক্তরাজ্য
  • সরকারের তালিকাভুক্ত আরও কিছু দেশ
যেসব বাংলাদেশি বিদেশে গিয়ে ঐ দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তারা চাইলে “Dual Nationality Certificate” নিতে পারেন।

পাসপোর্ট ও ভিসা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর পর্ব

১. পাসপোর্ট ছাড়া কি ভিসা পাওয়া যায়?
উত্তরঃ না, আপনি পাসপোর্ট ছাড়া ভিসার আবেদন করতে পারবেন না। ভিসা পেতে হলে অবশ্যই আগে পাসপোর্ট থাকতে হবে।

২. ভিসা ছাড়া কি বিদেশ যাওয়া যায়?
উত্তরঃ কিছু দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা-ফ্রি বা অন অ্যারাইভাল ভিসা চুক্তি আছে, সেখানে ভিসা ছাড়া যাওয়া যায়। কিন্তু বেশিরভাগ দেশের জন্য ভিসা বাধ্যতামূলক।

৩. একবার যদি কোন দেশের ভিসা পাওয়া যায় তাহলে সেই দেশে সব সময় যাওয়া যাবে?
উত্তরঃ না, বেশিরভাগ ভিসা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষ হলে আবার নতুন ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।

৪. ভিসা কত ধরনের হয়?
উত্তরঃ ভিসার অনেক ধরন রয়েছে, যেমন: ট্যুরিস্ট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা, ট্রানজিট ভিসা, রেসিডেন্ট ভিসা ইত্যাদি।

৫. ভিসা প্রক্রিয়ায় কী কী লাগে?
উত্তরঃ ভিসার প্রক্রিয়ায় লাগতে পারে- বৈধ পাসপোর্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ছবি, ইনভিটেশন লেটার বা ট্রাভেল প্ল্যান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট।

উপসংহার

আশা করি আপনি এখন পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন পাসপোর্ট ও ভিসার পার্থক্য কী। যেকোনো আন্তর্জাতিক ভ্রমণের আগে এই দুটি জিনিস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। পাসপোর্ট ছাড়া আপনি বিদেশ যেতে পারবেন না, আর ভিসা ছাড়া অনেক দেশে ঢোকা সম্ভব না। তাই পাসপোর্ট ও ভিসা জনিত পরিকল্পনা করার সময় এই দুটো বিষয় ভালোভাবে মাথায় রাখুন।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন ...

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url