প্রবাসে যাওয়ার নিয়ম | প্রথম বিদেশ যাওয়ার নিয়ম
প্রবাসে যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন না। বিশেষ করে যারা প্রথম
বিদেশে যেতে চান তারা প্রথম বিদেশ যাওয়ার নিয়ম গুলো সুশৃংখলভাবে প্রথমে বুঝে
নিতে চান। মূলত তাদের কে টার্গেট করেই আমি আজকে বিদেশে যাওয়ার উপায় স্টেপ বাই
স্টেপ আলোচনা করব।
আপনারা যদি ভবিষ্যতে প্রবাসে যেতে চান তাহলে প্রবাসে যাওয়ার নিয়ম অবশ্যই এটুজেড
প্রথমে জানতে হবে। এই আর্টিকেলে আপনি পাচ্ছেন প্রথম বিদেশ যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
স্টেপ বাই স্টেপ গাইড তাই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
সূচিপত্রঃ প্রবাসে যাওয়ার নিয়ম | প্রথম বিদেশ যাওয়ার নিয়ম
এই আলোচনা থেকে আপনি যে সমস্ত তথ্য পাবেন তা এক নজরে দেখে নি
প্রবাসে যাওয়ার নিয়ম | প্রথম বিদেশ যাওয়ার নিয়ম
প্রবাসে যাওয়ার পূর্বে প্রবাসে যাওয়ার নিয়ম কানুন গুলো মেনে সকল কার্যক্রম
পালন করা উচিত। কারণ নিয়ম মেনে কাজ সম্পন্ন না করলে প্রথমবার বিদেশ যেতে অনেক
দেরি হতে পারে। অধিকাংশ ব্যক্তির প্রথমবার বিদেশ যেতে দেরি হয় কারণ পূর্বে বিদেশ
যাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকে না। একবার বিদেশ যাওয়ার পরে সব কিছু শিখে যাওয়ার পর সেই
ব্যক্তির পরের বার বিদেশ যেতে দেরি লাগে না।
তাই আমার এই গাইডটি শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা প্রথমবার বিদেশ যেতে চাচ্ছেন। একদম
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কি কি কাজ করলে আপনি বিদেশ যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ
প্রস্তুতি নিতে পারবেন তা এখন নিম্নে আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুনঃ প্রবাস থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার নিয়ম
প্রবাসে যাওয়ার ৯টি স্টেপ
সর্বমোট ৯টি স্টেপ সম্পন্ন করলেই প্রবাস যাওয়ার জন্য আপনি সম্পূর্ণ প্রস্তুত
হয়ে যাবেন। এই নয়টি স্টেপ হচ্ছে-
- সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা
- পাসপোর্ট তৈরি বা রিনিউ করুন
- কাজ বা স্টাডির সুযোগ খোঁজা
- ভিসার জন্য আবেদন
- মেডিকেল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- BMET (বিএমইটি) রেজিস্ট্রেশন ও স্মার্ট কার্ড
- ট্রাভেল টিকেট বুকিং
- ইমিগ্রেশন ও এয়ারপোর্ট প্রসেস
- গন্তব্য দেশে পৌঁছে নিয়ম মেনে থাকুন
এই ৯টা স্টেপ বিস্তারিতভাবে জানলেই আপনি যে কোন দেশে যেতে পারবেন। চলুন আমরা এখন
বিস্তারিতভাবে এই নয়টা স্টেপ সম্পর্কে জেনে আসি।
ধাপ ১: সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা
বিদেশে যাওয়ার প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং
পরিকল্পনা করা। আপনি কোথায়, কেন এবং কী উদ্দেশ্যে যাবেন সেই বিষয়গুলো
স্পষ্টভাবে ঠিক করা দরকার।
নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি বিদেশে কেন যেতে চাইছেন, যেমনঃ চাকরি, পড়াশোনা,
ব্যবসা, চিকিৎসা, ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি।
নিজেকে প্রশ্ন করুন পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করুন, আপনি বা আপনারা কত দিনের জন্য
যেতে চান। যেমনঃ স্বল্প সময়ের ভ্রমণ, দীর্ঘমেয়াদি বসবাস, স্থায়ী হওয়ার ইচ্ছে
ইত্যাদি।
কোন দেশে গেলে আপনার উদ্দেশ্য পূরণ হবে সেই গন্তব্য দেশ ঠিক করুন। যেমনঃ কাজের
জন্য মধ্যপ্রাচ্য, পড়াশোনার জন্য কানাডা, ভ্রমণের জন্য মালয়েশিয়া ইত্যাদি।
আর্থিক পরিকল্পনা করুন, যেমন যাতায়াত, ভিসা, পাসপোর্ট, আবাসন, খাবার ও জরুরি
খরচ। সব মিলিয়ে কেমন খরচ হতে পারে, সেটার একটা আন্দাজ করুন ও তালিকা তৈরি করুন।
আপনার নিজের জমানো টাকা দিয়ে বিদেশ যেতে চাচ্ছেন নাকি পারিবারিক বা অন্য কোন
প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে যেতে চাচ্ছেন তা নির্ধারণ করুন।
আপনি কবে নাগাদ যেতে চান? সেই অনুযায়ী এখন থেকে কী কী কাজ শুরু করতে হবে, সেটার
একটা টাইমলাইন বানিয়ে নিন ও সময় নির্ধারণ করুন।
সারসংক্ষেপ: যেভাবে আপনি কোথাও ভ্রমণে যাওয়ার আগে গন্তব্য, খরচ,
কাপড়চোপড়, থাকার জায়গা ইত্যাদি ঠিক করেন। ঠিক তেমনি বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনার
শুরুতেই আপনাকে সবকিছু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে নিতে হবে।
ধাপ ২: পাসপোর্ট তৈরি বা রিনিউ করা
বিদেশে যেতে হলে পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক। আপনি যদি আগে কখনো পাসপোর্ট না
করে থাকেন, তাহলে নতুন পাসপোর্ট করতে হবে। আর আগের পাসপোর্ট থাকলেও যদি সেটা
মেয়াদোত্তীর্ণ (expire) হয়ে যায় বা মেয়াদ কম থাকে, তাহলে সেটা রিনিউ (নতুন
করে নবায়ন) করতে হবে।
নিচের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে নতুন পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন ও রিনিউ
করতে পারবেন। 👇
ডাইরেক্ট পাসপোর্ট ল্যান্ডিং পেজে যাওয়ার লিংক। 👇
পাসপোর্ট তৈরি বা রিনিউ করতে যেসব ডকুমেন্ট লাগবে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- জন্ম নিবন্ধন (যদি NID না থাকে)
- ছবি (সফট কপি বা হার্ড কপি, নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী)
- ঠিকানার প্রমাণ (যেমন: বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল)
- আবেদন ফি (নতুন বা রিনিউ অনুযায়ী আলাদা)
আবেদনের পর পরবর্তী ধাপ:
আবেদন করার পর একটি নির্দিষ্ট দিনে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। আঞ্চলিক
পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার জন্য তারা আপনাকে ডেট ও সময় বলে দিবে। অথবা মোবাইলে
এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দিবে। সেখানে গিয়ে ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ
(Biometric) দেওয়া, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
পাসপোর্ট কতদিনে পাবেন?
- সাধারণ ক্ষেত্রে (Regular): ২১ কর্মদিবস লাগতে পারে।
- জরুরি ক্ষেত্রে (Express): ১০ কর্মদিবস লাগতে পারে
- অতিজরুরি ক্ষেত্রে (Super Express): ২-৩ কর্মদিবস লাগতে পারে।
বিদেশে যেতে চাইলে পাসপোর্ট ছাড়া কোনো উপায় নেই। পাসপোর্ট আপনার জাতীয়
পরিচয় এবং আন্তর্জাতিক যাতায়াতের মূল চাবিকাঠি।
ধাপ ৩: কাজ বা স্টাডির সুযোগ খোঁজা
আপনি বিদেশে কেন যাচ্ছেন- চাকরি করতে, নাকি পড়াশোনা করতে? এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী
আপনাকে সেই দেশের কাজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ খুঁজে নিতে হবে।
ক) যদি আপনি চাকরি করতে যেতে চান তাহলে বিশ্বস্ত সোর্সে চাকরি খুঁজুন। যেমনঃ
- সরকারি অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি
- Baira বা BOESL (সরকারি সংস্থা) ইত্যাদি।
এছাড়া বিশ্বস্ত অনলাইন জব সাইটে খোজ রাখতে পারেন, যেমন:
চাকরির ধরণ বুঝে আবেদন করুন। আপনি কোন পর্যায়ে আছেন সেটা ঠিক করুন, যেমনঃ
লেবার, দক্ষ কারিগরি, মেশিন অপারেটর, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ইত্যাদি।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে ফেলুন, যেমনঃ সিভি/বায়োডাটা, ছবি, অভিজ্ঞতার
সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট কপি, ইত্যাদি।
চেক করুন কোথায় থেকে চাকরির অফারগুলো আসছে। কাজের অফার লেটার, কোম্পানির নাম,
বেতন, কাজের ধরন ও অবস্থান যাচাই করুন।
খ) যদি আপনি পড়াশোনার জন্য যেতে চান তাহলে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে চান ঠিক করুন।
যেমনঃ
- It Institute
- Commerce
- Health (Doctor, Nurse, MPO)
- Engineering ইত্যাদি।
কোন দেশে পড়তে চান সেটা নির্ধারণ করুন যেমন: মালয়েশিয়া, কানাডা, জার্মানি,
অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি।
গুগলে বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পড়াশোনার জন্য আবেদন করুন। যেমনঃ Google এ “Top
universities for [বিষয়] in [দেশ]” লিখে সার্চ করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল
ওয়েবসাইট থেকে অ্যাডমিশনের নিয়ম জেনে আবেদন করুন।
যেসব কাগজ লাগতে পারে-
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
- ট্রান্সক্রিপ্ট
- IELTS বা ইংরেজি দক্ষতার সার্টিফিকেট (প্রয়োজনে)
- পাসপোর্ট
অর্থাৎ বিদেশে যাওয়ার আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে আপনি সেখানে গিয়ে কাজ করবেন
নাকি পড়াশোনা করবেন। এরপর সেই অনুযায়ী সুযোগ খুঁজে নিতে হবে এবং প্রস্তুতি শুরু
করতে হবে।
ধাপ ৪: ভিসার জন্য আবেদন
বিদেশে যেতে হলে শুধু পাসপোর্ট থাকলেই হবে না, আপনাকে সেই দেশের ভিসা নিতে হবে।
ভিসা হচ্ছে সেই দেশের অনুমতি পত্র যেখানে আপনি যেতে চাচ্ছেন।
ভিসা পাওয়ার জন্য কী করতে হবে?
ক. কোন ধরনের ভিসা লাগবে বুঝে নিন-
উদ্দেশ্য | ভিসা টাইপস |
---|---|
চাকরি | ওয়ার্ক ভিসা |
পড়াশোনা | স্টুডেন্ট ভিসা |
ঘুরতে যাওয়া | ট্যুরিস্ট ভিসা |
আত্মীয় বা কাছে যাওয়া | ভিজিট ভিসা |
খ. দরকারি কাগজপত্র সংগ্রহ করুন-
ভিসার ধরন অনুযায়ী নিচের কাগজপত্র লাগতে পারে:
- পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- ভিসা ফর্ম পূরণ করা
- ইনভিটেশন লেটার (যদি থাকেন আত্মীয় বা বন্ধুর কাছে)
- চাকরির অফার লেটার (ওয়ার্ক ভিসার জন্য)
- বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন লেটার (স্টুডেন্ট ভিসার জন্য)
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (অর্থনৈতিক সামর্থ্য প্রমাণের জন্য)
- মেডিকেল রিপোর্ট (কিছু দেশে প্রয়োজন হয়)
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়)
গ. ভিসা আবেদনের পদ্ধতি-
মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, কাতার ইত্যাদি দেশগুলোতে ভিসার
জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয় অথবা দূতাবাস / হাইকমিশন এ গিয়ে করতে হয়।
উদাহরণ:
- মালয়েশিয়া ভিসা: অনলাইনে আবেদন ওয়েবসাইট www.windowmalaysia.my
- ইউএই ওয়ার্ক ভিসা: নিয়োগদাতা (Sponsor) করে দেয়।
ঘ. ফি জমা ও সাক্ষাৎকার-
- কিছু ভিসার জন্য ফি জমা দিতে হয় এবং দূতাবাসে গিয়ে সাক্ষাৎকার দিতে হতে পারে।
ঙ. ভিসা পাওয়ার সময়-
ভিসার ধরন, দেশ ও ডকুমেন্ট সমূহ ঠিকঠাক থাকলে ভিসা পেতে দেরি হয় না এবং ২ দিন
থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভিসা পাওয়া যায়। অর্থাৎ ভিসা হচ্ছে বিদেশ যাওয়ার
টিকিটের অনুমতি। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন তা বুঝে সেই দেশের নিয়ম
অনুযায়ী ভিসার আবেদন করতে হবে।
ধাপ ৫: মেডিকেল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
এই ধাপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনি বিদেশে যেতে চাইলে প্রমাণ দিতে হবে যে
আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ এবং আইন মেনে চলা একজন ভালো নাগরিক।
ক. মেডিকেল টেস্টঃ
বিদেশে যাওয়ার আগে কিছু নির্দিষ্ট দেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে
হয়। মেডিকেল টেস্ট পরীক্ষাতে দেখা হয় আপনি কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কিনা
এবং শারীরিকভাবে বিদেশে গিয়ে কাজ করার জন্য উপযুক্ত আছেন কিনা।
মেডিকেল টেস্টে যা পরীক্ষা করা হয়-
- রক্ত পরীক্ষা
- এক্স-রে (X-Ray)
- ইউরিন টেস্ট
- চোখ ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা
- উচ্চতা ও ওজন ইত্যাদি।
যেসব দেশে মেডিকেল টেস্ট বাধ্যতামূলক সে সম্পর্কে জেনে নিন-
- সৌদি আরব
- কুয়েত
- মালয়েশিয়া
- ওমান
- কাতার
- বাহরাইন
- সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) ইত্যাদি।
GAMCA মেডিকেল সেন্টার বা GCC Approved Medical Center)-
GCC দেশগুলোর (আরব অঞ্চলের) জন্য নির্দিষ্ট মেডিকেল সেন্টারে পরীক্ষা করাতে হয়।
এখানে "GAMCA বা GCC Approved Medical Center" বলা হলেও, এগুলো আসলে বাংলাদেশে
অবস্থিত কিছু নির্দিষ্ট মেডিকেল সেন্টার, যেগুলো সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার
ইত্যাদি দেশ থেকে অনুমোদিত।
খ. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (PCC)
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (PCC) হলো একটা সরকারি কাগজ, যেখানে লেখা থাকে
আপনি যে দেশে থাকেন সে দেশের কোনো অপরাধের সাথে জড়িত নন।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট কোথায় থেকে পাওয়া যায়?
- আপনার এলাকার থানা (স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী)।
- জেলা পুলিশ অফিস।
- অথবা অনলাইনে www.police.gov.bd থেকে আবেদন করা যায়।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য যা যা লাগবে:
- পাসপোর্টের কপি
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- ছবি (পাসপোর্ট সাইজ)
- আবেদন ফর্ম
- আবেদন ফি জমার রসিদ
অর্থাৎ আপনি বিদেশে যাচ্ছেন এজন্য প্রমাণ দিতে হবে যে আপনি সুস্থ ও নিরাপদ
ব্যক্তি। প্রবাস যাওয়ার আগে মেডিকেল টেস্ট প্রমাণ করে আপনি কোনো রোগে আক্রান্ত
নন আর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রমাণ করে আপনি কোনো অপরাধী নন।
ধাপ ৬: BMET রেজিস্ট্রেশন ও স্মার্ট কার্ড তৈরি
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যারা কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি অবশ্যই
বাধ্যতামূলক।
BMET কী?
BMET মানে হলো ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং। এটি
বাংলাদেশের সরকার পরিচালিত একটি অফিস, যারা বিদেশে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের
নিবন্ধন করে দেয়।
BMET রেজিস্ট্রেশন কেন জরুরি?
- সরকারিভাবে আপনি প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।
- বিদেশে যেকোনো সমস্যায় পড়লে বাংলাদেশ সরকার আপনাকে সহায়তা করতে পারবে।
- বিমানে ওঠার আগে স্মার্ট কার্ড দেখাতে হয়।
- বিদেশে যাওয়ার পর দূতাবাস ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড (WEWB) এটি যাচাই করবে।
স্মার্ট কার্ড কী?
BMET রেজিস্ট্রেশনের পরে আপনি পাবেন একটি স্মার্ট কার্ড। এই কার্ডে থাকবে-
- আপনার ছবি
- আপনার পাসপোর্ট নাম্বার
- আপনার গন্তব্য দেশ
- ভিসার তথ্য
- আপনার পেশা
এটি বিদেশে আপনার পরিচয়পত্র হিসেবে কাজ করবে।
কিভাবে BMET রেজিস্ট্রেশন করবেন?
আপনি দুইভাবে BMET রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন-
১. অনলাইন রেজিস্ট্রেশন: ওয়েবসাইট-
https://bmet.gov.bd/
২. জেলাভিত্তিক টিটিসি বা BMET অফিসে গিয়ে BMET রেজিস্ট্রেশন করা যায়। অনেক
জেলা শহরে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (TTC) আছে। সেখানে গিয়ে হাতে কলমে
রেজিস্ট্রেশন করা যায়।
BMET রেজিস্ট্রেশন করতে দরকারি কাগজপত্র-
- পাসপোর্ট (অরিজিনাল + কপি)
- ভিসা
- মেডিকেল রিপোর্ট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- ছবি (পাসপোর্ট সাইজ)
- নিয়োগপত্র (চাকরির অফার লেটার)
- নির্ধারিত ফি
সাধারণত ১–৩ কার্যদিবসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন শেষ হয়। এরপর স্মার্ট কার্ড হাতে
পাওয়া যায়। আপনি বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছেন, তাই সরকারকে জানিয়ে নিবন্ধন করতে
হবে। এতে আপনি সরকারি প্রবাসী কর্মী হিসেবে গণ্য হবেন এবং বিদেশে গেলে আপনাকে
সাহায্য করা সহজ হবে।
ধাপ ৭: ট্রাভেল টিকিট বুকিং
বিদেশে যাওয়ার জন্য আপনি যেভাবে বাস বা ট্রেনে টিকিট কাটেন, তেমনি বিমান (Air
Ticket) কেটে রাখতে হয় নির্দিষ্ট তারিখে ভ্রমণের জন্য। এই ধাপটি আপনার
প্রস্তুতির শেষদিকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
ট্রাভেল টিকিট বলতে কী বোঝায়?
ট্রাভেল টিকিট বা এয়ার টিকিট হলো- আপনি কোন দিন, কোন এয়ারলাইন্সে, কোন সময়, কোন
দেশে যাবেন এগুলোর পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ একটি যাত্রার অনুমতি। এই টিকিট ছাড়া আপনি
বিমানবন্দরে যেতে পারবেন না।
কখন টিকিট বুক করবেন?
- ভিসা পাওয়ার পর
- মেডিকেল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হয়ে গেলে
- BMET রেজিস্ট্রেশন ও স্মার্ট কার্ড হয়ে গেলে
টিকিট কিভাবে বুক করবেন?
ক. আপনি আপনার পাসপোর্ট আর ভিসার কপি ট্রাভেল এজেন্সিকে দিলেই ওরা সব ব্যবস্থা
করে দেবে। তারা সময়, তারিখ ও সাশ্রয়ী ভাড়া দেখিয়ে টিকিট দেয়। আপনি কিছু না
বুঝলেও ওরা সব বুঝে আপনার টিকিট বুকিং এর কাজটি করে দেবে।
খ. অনলাইনে নিজে বুকিং করা, যেমন:
- www.biman-airlines.com
- www.emirates.com
- www.qatarairways.com
- www.skyscanner.net (সব এয়ারলাইন্সের দাম একসাথে তুলনা করে)
অনলাইনে বুক করতে হলে অবশ্যই নিজের ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং
অ্যাকাউন্ট থাকা লাগবে।
ভাড়া কেমন হয়?
বিমান টিকিটের দাম নির্ভর করে নিচের বিষয়গুলোর ওপর-
- আপনি কোন দেশে যাচ্ছেন
- কবে যাচ্ছেন (সিজন অনুযায়ী ভাড়া বাড়ে/কমে)
- কোন এয়ারলাইন্সে যাচ্ছেন
- আপনি একমুখী (one-way) যাচ্ছেন নাকি যাওয়া-আসা দুইটা (round-trip) ইত্যাদি।
টিকিট বুক করার আগে যা চেক করবেন-
- পাসপোর্টে নাম ও জন্মতারিখ সঠিক আছে কি না
- ভিসার মেয়াদ ঠিক আছে কি না
- কোন তারিখে ফ্লাইট, কতটায় ফ্লাইট
- টার্মিনাল নম্বর ও চেক-ইন টাইম
- লাগেজের পরিমাণ (সাধারণত ২০–৩০ কেজি অনুমোদিত) ইত্যাদি।
টিকিট কাটার সময় ঠিকমতো তারিখ, সময়, দেশ এবং আপনার নামের বানান সব ঠিক আছে কিনা
এগুলো খুব ভালোভাবে দেখে টিকিট নিতে হবে।
ধাপ ৮: ইমিগ্রেশন ও এয়ারপোর্ট প্রসেস
এটি বিদেশ যাওয়ার আগের শেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
ইমিগ্রেশন কী?
ইমিগ্রেশন মানে হলো- আপনি একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশে ভ্রমণ করছেন, সেটি সরকারকে
জানানো এবং সরকারিভাবে অনুমতি নেওয়া।
যখন আপনি বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যাচ্ছেন, তখন বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অফিসার চেক
করে দেখেন -
- আপনি বৈধভাবে যাচ্ছেন কিনা।
- আপনার সব কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা।
- আপনি সেই দেশে ঢোকার অনুমতি (ভিসা) পেয়েছেন কিনা ইত্যাদি।
✈️ এয়ারপোর্টে কীভাবে প্রক্রিয়া হয়? (স্টেপ বাই স্টেপ)
ক. এয়ারপোর্টে প্রবেশ: পাসপোর্ট ও টিকিট দেখিয়ে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করবেন।
পরিবারের সদস্যদের বাইরে থেকে বিদায় দিয়ে আসবেন।
খ. চেক-ইন প্রক্রিয়া:
- নির্ধারিত এয়ারলাইন্স কাউন্টারে যাবেন।
- অফিসার আপনার পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিট দেখে নিবে।
- তারা আপনার লাগেজ ওজন করে বিমানে পাঠাবে।
- আপনাকে বোর্ডিং পাস দেবে। (এই পাস দিয়েই আপনি বিমানে উঠবেন)
গ. ইমিগ্রেশন ডেস্কে যাওয়া:
পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসারের সামনে দাঁড়াবেন। অফিসার আপনাকে
জিজ্ঞাসা করতে পারে যে-
- আপনি কোন দেশে যাচ্ছেন
- কিসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন (চাকরি, শিক্ষা, ভ্রমণ)
- ভিসা কোথা থেকে পেয়েছেন ইত্যাদি বিষয়গুলো।
ঘ. পাসপোর্টে সীল (Stamp) দেওয়া হবে:
অফিসার যদি সন্তুষ্ট হন, তাহলে পাসপোর্টে “প্রস্থানের অনুমোদন” সীল মারবেন।
আপনি তখন আন্তর্জাতিক যাত্রী হিসেবে অনুমোদিত হলেন।
ঙ. সিকিউরিটি চেক: আপনার শরীর ও হাতব্যাগ স্ক্যান করা হবে। নিষিদ্ধ কোন কিছু
সঙ্গে থাকলে সেগুলো বের করে নেওয়া হবে।
চ. বোর্ডিং গেট ও বিমানে ওঠা: নির্ধারিত গেটের সামনে অপেক্ষা করবেন বিমানে ওঠার
জন্য। যখন ঘোষণা আসবে তখন বোর্ডিং পাস দেখিয়ে বিমানে উঠবেন।
এয়ারপোর্টে যা সাথে রাখবেন-
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র | কেন দরকার |
---|---|
পাসপোর্ট | পরিচয় ও ভ্রমণের প্রমাণ |
ভিসা | বিদেশ যাওয়ার অনুমতি |
BMET স্মার্ট কার্ড | প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে প্রমাণ |
এয়ার টিকিট | বিমানে ওঠার অনুমতি |
বোর্ডিং পাস | ফ্লাইটে সিট নিশ্চিত |
চাকরির অফার লেটার (যদি থাকে) | প্রয়োজনে দেখাতে হতে পারে |
আপনি যখন বিদেশ যেতে এয়ারপোর্টে যাবেন, তখন সরকার দেখে নেয় আপনি আইন মেনে
যাচ্ছেন কিনা। এজন্য তারা আপনার কাগজপত্র দেখে অনুমতি দেয়। সব কিছু ঠিক থাকলে
আপনি বিমানে উঠতে পারবেন। এটি হলো আপনার বিদেশ যাত্রার সর্বশেষ ধাপ।
ধাপ ৯: গন্তব্য দেশে পৌঁছে নিয়ম মেনে থাকা
মনে রাখবেন আপনার প্রবাসজীবনের শুরু এখান থেকেই। এখন প্রশ্ন হল গন্তব্য দেশে
পৌঁছে কী করবেন?
বিদেশে পা রাখার পর, আপনার উচিত প্রথম দিন থেকেই সঠিক নিয়মে থাকা ও কাজ করা।
এতে আপনি নিরাপদ থাকবেন, সমস্যায় পড়বেন না এবং আইন মেনে একজন ভালো প্রবাসী
হিসেবে জীবন শুরু করতে পারবেন।
উদাহরণ: আপনি যদি মালয়েশিয়া যান আপনি বিমান থেকে নেমে যা করবেন-
ক. ইমিগ্রেশন অফিসে ভিসা দেখানো
- এয়ারপোর্টে নেমে প্রথমে ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্ট থাকবে।
- অফিসার আপনার পাসপোর্ট ও ভিসা চেক করবেন।
- যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে তারা পাসপোর্টে সীল (Entry Stamp) দিয়ে আপনাকে ঢুকতে দিবে।
আপনার ভিসা যদি চাকরির হয়, তাহলে সেই অনুযায়ী কাজের অনুমতি থাকবে।
খ. নিরাপদ জায়গায় যাওয়া (যেমন: হোস্টেল/বাসা/হোটেল)
- এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আপনি যেখানে থাকার কথা, সেখানে যাবেন।
- যদি স্পন্সর বা কোম্পানির লোক পাঠায়, তাদের সঙ্গে নিরাপদ স্থানে যাবেন।
অচেনা লোক বা দালালের কথায় অন্য কোন জায়গায় যাবেন না।
গ. দূতাবাস বা হাইকমিশনে রেজিস্ট্রেশন (যদি প্রয়োজন হয়)
- কিছু দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের দূতাবাসে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।
- এতে আপনি ভবিষ্যতে সেই দেশে কোন সমস্যায় পড়লে সহায়তা পাবেন।
ঘ. কাজের জায়গায় যোগাযোগ (যদি আপনি চাকরির জন্য যান)
- প্রবাসে যাওয়ার পর চাকরিদাতার অফিসে যোগাযোগ করুন।
- ভিসা অনুযায়ী কাজ শুরু করুন।
- কাজের চুক্তি (contract) দেখে কাজ বুঝে নিন।
ঙ. স্থানীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলুন
প্রতিটি দেশের আলাদা আইন, সংস্কৃতি ও নিয়ম থাকে। যেমন:
- অপ্রাসঙ্গিকভাবে জড়ো হওয়া যাবে না।
- রাস্তায় জোরে কথা বলা বা বিশৃঙ্খলা করা যাবে না।
- স্থানীয়দের সম্মান করতে হবে।
- ভিসার শর্ত মেনে চলতে হবে।
আপনি বিদেশে নেমে যেনো ঠিকমতো কাজ শুরু করতে পারেন, ভালোভাবে থাকতে পারেন, আর
আইন ভাঙার কোনো কিছু না করেন সেটাই এই ধাপের মূল কথা। নিয়ম মানলে আপনি নিরাপদ
থাকবেন, কাজও স্থায়ী হবে।
বিশেষ সতর্কতা: ভিসার মেয়াদ দেখে রাখুন কারণ ওভারস্টে হলে বড় জরিমানা বা
ডিপোর্ট হতে পারেন।
বিদেশ যাওয়ার জন্য কি কি প্রয়োজন?
বিদেশ যাওয়ার জন্য অনেকের মাথায় প্রশ্ন আসে যে সেখানে যেতে ঠিক কী কী
লাগবে? আসলে বিদেশ যেতে খুব বেশি কিছু লাগেনা, তবে কিছু মূল জিনিস অবশ্যই
থাকতে হবে। প্রথমেই আপনার থাকতে হবে একটি বৈধ পাসপোর্ট, যেটা সরকারের কাছ
থেকে নিতে হয়। এরপরে আপনি যে দেশে যেতে চান সে দেশের ভিসা লাগবে।
এছাড়াও লাগতে পারে আপনার শিক্ষাগত সনদ, জন্মসনদ, চাকরির কাগজপত্র (যদি কাজের
ভিসা চান), আর ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা টাকার প্রমাণ।
সবশেষে, ফ্লাইটের টিকিট, আর ওষুধ বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাগজপত্র (যদি
প্রয়োজন হয়) নিয়ে প্রস্তুত থাকলেই আপনি নিরাপদে বিদেশ যেতে পারবেন।
বিদেশ যাওয়ার চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম
বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার আগে অনেকেই বুঝে না কীভাবে চুক্তিপত্র বা
এগ্রিমেন্ট তৈরি করতে হয়। অথচ এটিই হলো আপনার নিরাপত্তার প্রথম ধাপ।
চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম খুব কঠিন কিছু না। শুরুতেই সেখানে আপনার নাম,
ঠিকানা, পাসপোর্ট নম্বর, এবং যিনি আপনাকে চাকরি দিচ্ছেন তার তথ্য লিখতে
হবে। এরপর আপনি কোন দেশে যাচ্ছেন, কাজের ধরন কী, বেতন কত, কর্মঘণ্টা, ছুটি
কতদিন এসব স্পষ্টভাবে লিখতে হবে।
চুক্তিপত্রে আরও থাকতে হবে- আপনি যেখানে কাজ করবেন সেখানে থাকা খাওয়ার
সুবিধা কে দেবে। চিকিৎসা বা ইন্স্যুরেন্স সুবিধা আছে কিনা। সেখানে গিয়ে
জরুরি কিছু হলে দায়িত্ব কে নেবে এসব ইত্যাদি বিষয়গুলো পরিষ্কার থাকা
জরুরি। বিদেশ যাওয়ার চুক্তিপত্র এমনভাবে লিখতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কোনো
সমস্যা হলে আপনি আইনি সহায়তা নিতে পারেন।
বিদেশ যাওয়ার চুক্তিপত্র নমুনা
অনেকেই জানতে চান বিদেশ যাওয়ার চুক্তিপত্র দেখতে কেমন হয় সে সম্পর্কে। নিচে
একটি বিদেশ যাওয়ার চুক্তিপত্র নমুনা দেওয়া হলো-
আমি [আপনার নাম], পাসপোর্ট নম্বর: [XXXXXXX], বাংলাদেশের নাগরিক। আমি [দেশের
নাম] এ [চাকরির ধরন] হিসেবে চাকরি করতে যাচ্ছি।
আমার নিয়োগদাতা: [নিয়োগদাতার নাম ও ঠিকানা]
বেতন: প্রতি মাসে [টাকার পরিমাণ]
কাজের সময়: প্রতিদিন [ঘণ্টা]
ছুটি: প্রতি সপ্তাহে [দিন]
থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা: নিয়োগদাতা কর্তৃক
চিকিৎসা ও নিরাপত্তা: নিয়োগদাতা প্রদান করবে
আমি এই চুক্তি পড়েছি এবং বুঝে স্বাক্ষর করেছি।
প্রার্থী: __________
নিয়োগদাতা প্রতিনিধি: __________
তারিখ: __ / __ / __
বিদেশ যাওয়ার জন্য ভালো এজেন্সি চেনার উপায়
বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন অনেকের, কিন্তু সঠিক পথ না জানার কারণে অনেকে প্রতারিত
হন। তাই প্রথম কাজ হলো বিদেশ যাওয়ার জন্য ভালো এজেন্সি খুঁজে বের করা। তবে
ভালো-মন্দ এজেন্সি চেনা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায় কারণ বাংলাদেশে দালাল প্রচুর।
নিচে কিছু সহজ উপায় বলছি যা আপনাকে সাহায্য করবে ভালো এজেন্সি খুঁজে বের করতে-
লাইসেন্স আছে কিনা দেখুন: সরকার অনুমোদিত (বোইএসএল, বিএমইটি)
লাইসেন্সধারী এজেন্সি কিনা যাচাই করুন। এজেন্সির লাইসেন্স নম্বর চেক করুন।
অফিস ঠিকানা ও কন্টাক্ট: ভালো এজেন্সির অফিস ঠিকানা সঠিক হয় এবং
ইন্টারনেটে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে। এসব এজেন্সিতে যে কোন সময় ফোন বা মেসেজ
করলে তারা সাড়া দেয়।
পূর্ব অভিজ্ঞতা: যারা ইতিমধ্যেই বিদেশে গেছেন, এমন কারও রেফারেন্সে
এজেন্সি বেছে নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
ফালতু লোভনীয় অফার পরিহার করুন: বেশি বেতনের লোভ, কম খরচ, ঝামেলা ছাড়া
ভিসা এ সমস্ত কথা বলে যদি আপনাকে কেউ লোভনীয় অপরাধ করে তাহলে তাদের পরিহার করে
চলুন।
চুক্তিপত্র: ভালো এজেন্সি বিদেশ যাওয়ার আগে আপনাকে একটি লিখিত
চুক্তিপত্র দেয়। সেখানে সব কিছু স্পষ্ট থাকে।
আপনি গুগলে বা
BMET এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে খোঁজ নিতে পারেন কোন এজেন্সি বৈধ। নিচে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত ও
বিশ্বস্ত কিছু বিদেশে পাঠানোর এজেন্সি দেওয়া হলো। এগুলোতে বহু প্রবাসী সফলভাবে
বিদেশ গেছেন। এগুলো বোইএসএল (BOESL) বা BMET অনুমোদিত, তাই নিরাপদ ও
বিশ্বাসযোগ্য।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যাওয়ার জন্য ভালো এজেন্সির তালিকা
১. BOESL – বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড
- ওয়েবসাইট: www.boesl.gov.bd
২. Career Overseas Ltd.
- ওয়েবসাইট: www.career-overseas.com
৩. BAIRA
- ওয়েবসাইট: www.prantikgroup.com
৪. Amin Tours & Travels
- ওয়েবসাইট: www.amintravels.com.bd
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ BOESL সরকারি এজেন্সি, তাই এই এজেন্সির মাধ্যমে বেরিয়ে
যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
কোথা থেকে যাচাই করবেন?
BMET অফিসিয়াল সাইটে গিয়ে
রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নম্বর দিয়ে সার্চ করে দেখতে পারবেন তারা বৈধ কিনা।
সতর্কতা: যে কোনো এজেন্সিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই অফিসে সরাসরি যান এবং কথা বলুন।
পুরোনো প্রবাসীদের রেফারেন্স নিলে ভাল হবে। চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়ে নিন।
ভুলভাল ওয়াদা বা তাড়াহুড়ো ভাবে বিশ্বাস করে কোন কাজ করবেন না।
বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ
বিদেশে কাজ করতে গেলে শুধু পাসপোর্ট বা ভিসা থাকলেই হয় না। অনেক দেশে যাওয়ার
আগে কিছু নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রশিক্ষণ (Training) নেওয়া বাধ্যতামূলক। যেমন:
- আপনি যদি গৃহকর্মী হিসেবে যান, তাহলে কাজ শেখা লাগবে।
- যদি কারিগরি পেশায় কাজ করতে চান, তাহলে সেই কাজের সার্টিফিকেটসহ ট্রেনিং দরকার।
- আবার যে দেশে যাবেন সে দেশের ভাষা শিখে গেলে চাকরি পেতে সুবিধা হয়।
বিদেশ যাওয়ার ট্রেনিং সেন্টার
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি অনেক ট্রেনিং সেন্টার আছে যেখানে বিদেশে যাওয়ার
আগে দরকারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রশিক্ষণ সেন্টারের
নাম দেওয়া হল-
১. টিটিসি (TTC - Technical Training Center): এটি সরকারের অধীনে
চলে। পুরো দেশে ৫০টির বেশি TTC আছে। এখানে ভাষা, কারিগরি ও নিরাপত্তা
প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
২. BOESL Training Programs: এটি সরকারিভাবে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য
ভাষা ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়।
৩. PKSF ও অন্যান্য NGO ভিত্তিক প্রশিক্ষণ: URAL এলাকার মানুষদের
ট্রেনিং দিয়ে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে।
৪. বিশ্বস্ত বেসরকারি ট্রেনিং সেন্টার: কিছু বিশ্বস্ত ভালো বেসরকারি
ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে যারা সরকার অনুমোদিত। আপনি এই সমস্ত বেসরকারি বিশ্বস্ত
ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং গ্রহণ করতে পারেন। তবে অবশ্যই যাচাই করে ভর্তি
হবেন।
ট্রেনিংয়ে কী শেখানো হয়?
- পেশাগত কাজ শেখানো হয় যেমন: রান্না, ড্রাইভিং, ওয়েল্ডিং ইত্যাদি।
- ভাষা শেখানো হয় যেমনঃ কোরিয়ান, আরবি, ইংরেজি, জার্মান, স্প্যানিশ ইত্যাদি।
- আচরণ, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা শিক্ষা দেয়।
- ভিসা, কাজের নিয়ম, বিদেশের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা দেয়।
বিদেশ যেতে চাইলে শুধু পাসপোর্ট নয়, ভালো প্রশিক্ষণও আপনার বড় শক্তি। সরকারি
ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ শিখে গেলে আপনি সহজে ভালো কাজ পাবেন এবং
প্রতারণার হাত থেকেও বাঁচবেন।
FAQs
১। বিদেশ যেতে কত টাকা খরচ হয়?
উত্তর: বিদেশ যেতে কত টাকা খরচ হয় তা নির্ভর করে আপনি কোন দেশে যাচ্ছেন,
কিসের জন্য যাচ্ছেন (কাজ, পড়াশোনা, ট্যুরিস্ট) এবং কোন এজেন্সির মাধ্যমে
যাচ্ছেন তার উপর। সাধারণভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে (যেমন: সৌদি আরব, কুয়েত,
ওমান) কাজের জন্য গেলে খরচ হয় প্রায় ১.৫ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এর
মধ্যে থাকে-
- পাসপোর্ট ফি
- মেডিকেল টেস্ট
- ভিসা প্রসেসিং
- বিমানের টিকিট
- এজেন্সি চার্জ
যদি সরকারিভাবে যান (BMET বা BOESL এর মাধ্যমে), তাহলে খরচ অনেক কম হয়।
২। প্রথম বিদেশ যেতে কেমন লাগে?
উত্তর: প্রথমবার বিদেশ যাওয়ার অনুভূতি অনেকটা মিশ্র থাকে, যেমনঃ একদিকে বিদেশ
যাওয়ার উত্তেজনা, অন্যদিকে নতুন পরিবেশে থাকার ভয়। নতুন জায়গা, নতুন ভাষা,
নতুন নিয়ম এসব কিছু নিয়ে টেনশন থাকতে পারে। তবে পরিবার, পরিবারের ছেলেমেয়ে ও
দেশের ভবিষ্যতের কথা ভাবলে বিদেশে কাজ করার আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
প্রথমবার বিমানে চড়বেন, প্রথমবার এত দূর যাচ্ছেন এগুলো যেমন আনন্দের বিষয়,
ঠিক তেমনি দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য কিছুটা আবেগম হয়ে যায়। কিন্তু নিজের লক্ষ্য
ঠিক রাখলে, এই প্রথম যাত্রা ভবিষ্যতের বড় এক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে।
৩। বাংলাদেশ থেকে কোন দেশে গেলে ভালো হবে?
উত্তর: বাংলাদেশ থেকে কোন দেশে গেলে ভালো হবে এটা নির্ভর করে আপনি কী ধরনের
কাজ খুঁজছেন, আপনার যোগ্যতা কতটুকু এবং আপনি কী ধরনের পরিবেশে কাজ করতে চান
তার ওপর। সাধারণভাবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিচের দেশগুলো ভালো অপশন হতে
পারে-
- সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, কাতার, ইউএই: শ্রমিক, ড্রাইভার, টেকনিশিয়ান, ক্লিনার, হসপিটাল/হোটেল জব।
- মালয়েশিয়া: কৃষি ও কারখানার কাজ, কিছু শিক্ষিত পদের জন্যও সুযোগ আছে।
- জাপান: দক্ষ কর্মীদের জন্য ট্রেইনি প্রোগ্রাম (টেকনিক্যাল ইন্টার্ন)।
- ইতালি ও রোমানিয়া: কৃষিকাজ ও নির্মাণ খাতে চাহিদা বাড়ছে।
- কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া: পড়াশোনা ও দক্ষ ভিসার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে যাওয়ার সুযোগ।
উপসংহার
প্রবাসে যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে অনেক সময় ঝুঁকিতে পড়তে
হয়। বিদেশে যাওয়ার আগে বৈধ পাসপোর্ট, নির্ধারিত মেডিকেল পরীক্ষা, ভিসা
প্রক্রিয়া ও চুক্তিপত্র স্বাক্ষর এসব নিয়ম অবশ্যই মেনে চলা উচিত। এছাড়া
সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ। তাই
যারা প্রবাসে যেতে চান, তাদের অবশ্যই আগে থেকে প্রবাসে যাওয়ার নিয়ম
ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত যেন ভবিষ্যতে কোনো প্রতারণার শিকার না হন এবং
নিরাপদ একটি প্রবাসজীবন শুরু করতে পারেন।