প্রবাস থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার নিয়ম
অনেক প্রবাসী বাংলাদেশে ফিরে আসতে চান ছুটি, পারিবারিক অনুষ্ঠান বা স্থায়ীভাবে
বসবাসের জন্য। কিন্তু প্রবাস থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা
না থাকলে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
এই লেখায় আমরা সহজভাবে তুলে ধরবো কীভাবে আপনি সঠিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ফিরে
যেতে পারেন- ভিসা, টিকিট, কোভিড বিধি এবং ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত সব কিছু মিলিয়ে।
তাই যারা প্রথমবার বিদেশ থেকে দেশে আসতে চান তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি।
সূচিপত্রঃ প্রবাস থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার নিয়ম
এই আর্টিকেল থেকে আপনি যে সমস্ত বিষয় জানতে পারবেন তা দেখে নিন-
প্রবাস থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার নিয়ম
দেশ থেকে প্রবাসে যাওয়ার
যেমন নিয়ম রয়েছে, ঠিক তেমনি প্রবাস থেকে দেশে আসার নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি সঠিক
নিয়ম মেনে এই স্টেপ গুলো পালন না করেন তাহলে দেশে আসতে আপনার অনেক সমস্যা হতে
পারে।
আরো পড়ুনঃ পাসপোর্ট ও ভিসার পার্থক্য
তাই কিভাবে নিরাপদে দেশে আসা যায় এবং প্রত্যেকটি কার্যকলাপ সম্পন্ন করা যায় সেই
বিষয়ে স্টেপ বাই স্টেপ ধারণা এখন আমি প্রদান করছি।
প্রবাস থেকে দেশে যাওয়ার ১০টি স্টেপ
প্রবাস থেকে বাংলাদেশে যেতে হলে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রবাস থেকে
বাংলাদেশে যাওয়ার ধাপে ধাপে গাইডলাইন:
- দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিন
- পাসপোর্টের মেয়াদ যাচাই করুন
- ভিসা ও আইডি সংক্রান্ত বিষয় যাচাই করুন
- এয়ার টিকিট বুকিং করুন
- স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ
- দেশ ছাড়ার আগে clearance নিন (যদি প্রযোজ্য হয়)
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংরক্ষণ করুন
- বাংলাদেশে আগমনের প্রস্তুতি
- দেশে পৌঁছানোর পর করণীয়
- ব্যাংক ও সামাজিক সেটেলমেন্ট
এই নিয়মগুলো প্রতিটি দেশের প্রবাসীদের জন্য কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তাই
দেশভেদে আপডেট সে দেশের নিয়ম অনুযায়ী আপনার তথ্য জেনে নিবেন। চলুন আমরা এখন
পর্যায়ক্রমিকভাবে এই স্টেপ গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
স্টেপ ১ঃ দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিন
বিদেশে কাজ বা পড়াশোনা করার পর অনেক সময় মনে হয় এবার দেশে ফিরে যাওয়া যাক।
দীর্ঘদিন বিদেশে কোন উদ্দেশ্যে থাকার পর এই সিদ্ধান্তটা নেওয়া খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজের পরিবার, কাজের অবস্থা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সবকিছু ভেবে
চিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
দেশে ফেরার পূর্বে যে সমস্ত বিষয় ভাবা উচিত:
- দেশে ফিরে গিয়ে ব্যবসা করবেন নাকি চাকরি করবেন সেটি আগে ভাবা উচিত।
- আপনার বিদেশে থাকা কাগজপত্র, চুক্তি বা দায়বদ্ধতা শেষ হয়েছে কিনা তা যাচাই করুন।
- দেশে ফিরে আসার পর নতুন করে কাজ বা উপার্জনের ব্যবস্থা আছে কিনা সেটা ভাবুন।
মনে রাখবেন, হুট করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ধীরে সিদ্ধান্ত নিন। প্রয়োজন হলে
পরিবারের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করুন।
স্টেপ ২ঃ পাসপোর্টের মেয়াদ যাচাই করুন
বিদেশ থেকে দেশে ফেরার জন্য পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য ও অবশ্যই দরকারি কাগজ।
কিন্তু শুধু পাসপোর্ট থাকলেই হবে না, তার মেয়াদ (validity) ঠিক আছে কি না সেটা
যাচাই করতে হবে।
কীভাবে বুঝবেন পাসপোর্টের মেয়াদ আছে কি না?
- পাসপোর্টের প্রথম পাতায় Issue Date ও Expiry Date লেখা থাকে।
- দেখে নিন আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হতে আর কত দিন বাকি আছে।
- সাধারণত অনেক দেশ চায় যে পাসপোর্টে কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে ভ্রমণের সময়।
আর যদি মেয়াদ শেষ হয়ে যায় বা ৬ মাসের কম মেয়াদ থাকে তাহলে নতুন করে পাসপোর্ট
রিনিউ (নবায়ন) করতে হবে। বিদেশে থাকলে পাসপোর্ট রিনিউয়ের জন্য আপনার নিকটস্থ
বাংলাদেশ দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতে হবে।
স্টেপ ৩ঃ ভিসা ও আইডি সংক্রান্ত বিষয় যাচাই করুন
আপনি যেই দেশে আছেন, সেখানে থাকার জন্য আপনাকে যেই ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট বা আইডি
কার্ড (যেমন: রেসিডেন্স কার্ড, পারমানেন্ট কার্ড) দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যাচাই
করুন।
যে সমস্ত বিষয় যাচাই করবেনঃ
- ভিসার মেয়াদ (Validity) শেষ হয়েছে কি না তা যাচাই করুন।
- আপনি লিগ্যাল ভাবে বিদেশে আছেন কিনা সেটা ভাবুন কারণ ইল্লিগ্যাল ভাবে যদি বিদায় যান তাহলে আপনার দেশে আসতে সমস্যা হবে।
- যদি আপনি কাজের ভিসায় থাকেন, তবে চাকরি ছাড়ার পরও সেটি বৈধ আছে কি না যাচাই করুন।
- যদি আপনি রেসিডেন্ট হন, তাহলে রেসিডেন্স আইডি ঠিকমতো আছে কি না দেখুন।
- কোনো জরিমানা বা মামলার ঝামেলায় থাকলে সেগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে কিনা যাচাই করে নিন।
অনেক দেশ ভিসা শেষ হওয়ার পর জরিমানা করে দেশে পাঠিয়ে দেয়। আপনি যদি নিজে থেকে
আগে সে দেশকে জানিয়ে দেন তাহলে কিছু দেশ জরিমানা ছাড়া দেশে ফেরার সুযোগ দেয়।
যদি মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে দূতাবাসে গিয়ে ট্রাভেল পারমিট (TP) নিতে হয়। (এটা
এক ধরনের অস্থায়ী অনুমতি যা আপনাকে দেশে ফেরার জন্য দেওয়া হয়)
মনে রাখবেন, দেশে ফেরার আগে আপনার বৈধতা যাচাই না করলে এয়ারপোর্টে বা
ইমিগ্রেশনে সমস্যা হতে পারে। তাই আগে থেকেই আইনি দিকগুলো ভালোভাবে দেখে নিন।
স্টেপ ৪ঃ এয়ার টিকিট বুকিং করুন
উপরের স্টেপ গুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে এখন আপনার সময় হলো বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য
বিমান (এয়ার) টিকিট বুক করার।
কীভাবে টিকিট বুক করবেন?
ক. কোন শহর থেকে ফিরবেন সেটা ঠিক করুন যেমন: রিয়াদ, মালয়েশিয়া, দুবাই, লন্ডন
ইত্যাদি।
খ. বাংলাদেশের কোন এয়ারপোর্টে নামবেন তার গন্তব্য ঠিক করুন। যেমনঃ হযরত
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা), শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
(চট্টগ্রাম), ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (সিলেট)।
গ. এয়ারলাইন্স বেছে নিন যেমন: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, এমিরেটস, সৌদি এয়ার,
মালিন্দো এয়ার, এয়ার এশিয়া ইত্যাদি।
ঘ. টিকিট বুকিং করার ২টি পদ্ধতি:
* এজেন্সির মাধ্যমে-
- বিশ্বস্ত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে আপনি টিকেট বুক করতে পারেন। তারা আপনাকে সঠিক তারিখ, সময় এবং নোটিশ দিবে।
* নিজে অনলাইনের মাধ্যমে-
- এয়ারলাইন্সের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান
- তারিখ ও সময় সিলেক্ট করুন
- পাসপোর্ট তথ্য দিন
- অনলাইনে টাকা দিয়ে কনফার্ম করুন
যদি নিজে নিজে না পারেন তাহলে সাইবার ক্যাফে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে এই কাজটি
সম্পন্ন করতে পারবেন।
দেশে যাওয়ার ৭–১৫ দিন আগে টিকিট কাটলে কম দাম পাওয়া যায়। এছাড়া আপনি অফার বা
ডিসকাউন্ট প্যাকেজ দেখে টিকেট বুকিং করতে পারেন। যেহেতু আপনি দেশে ফিরছেন তাই
ওয়ান ওয়ে টিকিট কিনুন।
ওয়ান ওয়ে টিকিট বলতে আসলে কি বুঝায়?
দেখেন, ওয়ান ওয়ে টিকিট মানে হচ্ছে- আপনি শুধু যাওয়ার জন্য টিকিট কাটছেন,
ফেরার কোনো টিকিট এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। যেমন ধরেন, আপনি বাংলাদেশ
থেকে সৌদি আরব যাচ্ছেন কাজ করতে, কিন্তু আপনি এখনই জানেন না কবে ফিরবেন। তখন
আপনি শুধু যাওয়ার টিকিটই কাটবেন, এটাকেই বলে ওয়ান ওয়ে টিকিট।
রিটার্ন বা রাউন্ড ট্রিপ টিকিট কী?
একই সাথে অন্য দেশে যাওয়ার এবং সেই দেশ থেকে পুনরায় নিজ দেশে ফিরে আসার
টিকিট একসাথে কাটলে সেটাই হচ্ছে রিটার্ন বা রাউন্ড ট্রিপ টিকিট। যেমন ধরেন,
আপনি ঘুরতে যাচ্ছেন ট্যুরিস্ট ভিসায়, এই অবস্থায় আপনাকে ভ্রমণে যাওয়ার ও
ফেরার টিকিট একসাথে নিতে হবে। এটা অনেক দেশে বাধ্যতামূলক।
কাদের জন্য ওয়ান ওয়ে টিকিট দরকার হয়?
- যারা চাকরির জন্য বিদেশে যাচ্ছে
- যারা দীর্ঘদিনের জন্য বা স্থায়ীভাবে যাচ্ছে
- যারা জানে না কবে ফিরবে
ফ্লাইট টাইম সকাল বা রাত আপনার সুবিধা অনুযায়ী নিন।
স্টেপ ৫ঃ স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ
দেশে ফেরার আগে শুধু উপরের স্টেপ গুলো পালন করলেই হবে না বরং আপনার কিছু
স্বাস্থ্যসনদ ও অন্যান্য দরকারি কাগজ সঙ্গে থাকা জরুরি। এসব না থাকলে
এয়ারপোর্টে সমস্যা হতে পারে।
* স্বাস্থ্যসনদ (Medical / Health Documents):
ক. কোভিড ভ্যাকসিন সনদ (Vaccination Certificate): অনেক দেশে এখনো কোভিড টিকা
নেওয়া বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে ঢোকার সময় এ সনদ দেখতে চাইতে পারে। আপনি যেখান
থেকে টিকা নিয়েছেন, সেখান থেকে এটি সংগ্রহ করুন। আপনি যে দেশে কোভিডের টিকা
নিয়েছেন সে দেশ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে টিকা কার্ড সংগ্রহ করুন।
খ. কোভিড টেস্ট (যদি প্রয়োজন হয়): কিছু দেশের এয়ারলাইন্সে উঠার আগে ৭২ ঘণ্টার
মধ্যে করোনা টেস্ট রিপোর্ট দরকার হতে পারে।
* অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
ক. পাসপোর্ট ও ভিসা (মূল কপি): এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাই মূল কপি সঙ্গে
রাখুন।
খ. আইডি কার্ড/ওয়ার্ক পারমিট (যদি থাকে): আপনার বিদেশি বৈধতা প্রমাণে এটি
লাগবে।
গ. টিকিটের কপি: টিকিটের কপি প্রিন্ট করে রাখুন এবং মোবাইলে সফট কপি রাখুন।
ঘ. ট্রাভেল পারমিট (TP): যদি আপনার ভিসা/পাসপোর্ট এক্সপায়ার হয়, তবে দূতাবাস
থেকে নেওয়া এই কাগজ লাগবে।
ঙ. এমিগ্রেশন বা এক্সিট কাগজ: কিছু দেশে ফেরার সময় ইমিগ্রেশন অফিস থেকে ছাড়পত্র
নিতে হয়।
স্টেপ ৬ঃ দেশ ছাড়ার আগে ক্লিয়ারেন্স নিন (যদি প্রযোজ্য হয়)
দেশ ছাড়ার আগে সবসময় ক্লিয়ারেন্স না লাগলেও, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ক্লিয়ারেন্স
নিতে হতে পারে।ক্লিয়ারেন্স মানে হলো- আপনি যেই দেশে আছেন, সেখানকার সরকার বা
কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়া। এটি প্রমাণ করে যে আপনি যে দেশে ছিলেন
সে দেশে থেকে বৈধ ভাবে দেশ ছাড়ছেন।
কাদের ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে?
ক. চুক্তিভিত্তিক কাজের শ্রমিক: যারা কোনো কোম্পানির মাধ্যমে গিয়েছেন, বা
চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছেন, তাদের ফেরার আগে কোম্পানি বা সরকারের কাছ থেকে
ছাড়পত্র লাগবে।
খ. ভিসা এক্সপায়ার হয়ে গেলে: যদি আপনার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং আপনি
আবার দেশে ফিরতে চান, তাহলে সেই দেশের ইমিগ্রেশন থেকে এক্সিট ক্লিয়ারেন্স
লাগবে।
গ. ট্রাভেল পারমিট (TP): যাদের পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে বা মেয়াদ শেষ তারা
বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পারমিট নিয়ে দেশে ফিরবেন, তখন ক্লিয়ারেন্স
লাগতে পারে।
ঘ. বিচারাধীন বা পুলিশ কেসে জড়িত থাকলে: সেই দেশে কোনো আইনগত বিষয়ে সমস্যা
থাকলে আদালতের অনুমতি বা পুলিশের ছাড়পত্র লাগবে।
ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার জন্য কী করতে হবে?
- কোম্পানির HR অফিসে যোগাযোগ করুন। (যদি কোম্পানির অধীনে কাজ করেন)
- ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে ফরম পূরণ করে আবেদন করুন।
- দূতাবাসে যোগাযোগ করুন কারণ তারা আপনাকে গাইড করবে কীভাবে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।
মনে রাখবেন, ক্লিয়ারেন্স ছাড়া আপনি এয়ারপোর্টে আটকে যেতে পারেন। এটি সবার
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এটি শুধু যাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু তারাই
ক্লিয়ারেন্স নিবেন।
স্টেপ ৭ঃ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংরক্ষণ করুন
আপনি যখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরছেন, তখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র
ভালোভাবে গুছিয়ে রাখা খুব জরুরি। কারণ যেকোনো সময় এয়ারপোর্টে বা গমন পথে এগুলো
দরকার হতে পারে।
যে সমস্ত কাগজপত্র গুছিয়ে রাখবেন-
ক. পাসপোর্ট (মূল কপি): সবচেয়ে দরকারি কাগজ। প্লেনে উঠতে, দেশে ঢুকতে সবসময়
লাগবে।
খ. ভিসা বা রেসিডেন্স পারমিট: যদি আপনার ভিসা বা রেসিডেন্স কার্ড আলাদা হয়,
সেটিও সঙ্গে রাখুন।
গ. ট্রাভেল পারমিট (TP): যাদের পাসপোর্ট নেই বা হারিয়েছে, তাদের জন্য এই কাগজ
একমাত্র প্রমাণ।
ঘ. এয়ার টিকিট: হার্ডকপি এবং সফট কপি উভয় রাখবেন।
ঙ. ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট (যদি লাগে): বিশেষ করে কোভিডের পর থেকে এখনো অনেক দেশে
এটি দেখা হয়।
চ. এমিগ্রেশন ছাড়পত্র (Exit Clearance): দেশ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার
ডকুমেন্ট।
ছ. কোম্পানি ছাড়পত্র (Release Letter): চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে বা চুক্তি শেষ
এই কাগজ নিতে হবে।
প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের ১-২টি ফটোকপি করে রাখুন। এছাড়া মোবাইল ফোনে
স্ক্যান করে PDF করে রাখতে পারেন যেন যেকোনো মুহূর্তে আপনি প্রিন্ট করে বের
করতে পারেন। কাগজগুলো Google Drive বা অন্য কোথাও অনলাইনে ব্যাকআপ দিয়ে রাখুন।
স্টেপ ৮ঃ বাংলাদেশে আগমনের প্রস্তুতি
যখন আপনি বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরছেন, তখন দেশে ফেরার আগে কিছু প্রস্তুতি
নিয়ে রাখা খুব দরকার। এতে যাত্রা সহজ হবে এবং ঝামেলা কম হবে।
কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে?
ক. ফ্লাইটের তারিখ ও সময় নিশ্চিত করুনঃ আপনার টিকিটে যে সময় দেওয়া আছে, সেটা
ভালোভাবে দেখে নিন। ফ্লাইটের ২৪ ঘণ্টা আগে এয়ারলাইনের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে
গিয়ে ফ্লাইট স্ট্যাটাস চেক করুন। যদি কোনো পরিবর্তন হয়, তাহলে আগেই জেনে
প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
খ. পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুনঃ বাংলাদেশে আপনার নিজ পরিবারকে জানিয়ে দিন।
তারা যেন এয়ারপোর্টে আপনাকে নিতে আসতে পারে ও প্রস্তুত থাকে।
গ. লাগেজ গুছিয়ে ফেলুনঃ আপনার সব দরকারি জিনিস স্যুটকেসে গুছিয়ে ফেলুন। যেসব
জিনিস যাত্রাপথে নিয়ে যাওয়া নিষেধ সেগুলো না নেওয়াই ভালো। লাগেজে আপনার
নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে রাখুন।
ঘ. জরুরি ফোন নম্বর সঙ্গে রাখুনঃ যাত্রাপথে প্রয়োজন হতে পারে এরকম জরুরি
নাম্বার সঙ্গে রাখুন এবং মোবাইলে ফুল চার্জ রাখুন।
ঙ. পোশাক ও আবহাওয়ার কথা মাথায় রাখুনঃ বাংলাদেশে গিয়ে কেমন আবহাওয়া থাকবে, তা
দেখে সেই অনুযায়ী পোশাক রাখুন। অনেকে শীতের দেশ থেকে আসেন তখন বাংলাদেশে এসে
অনেক গরম লাগে। তাই হালকা জামা রাখতে ভুলবেন না।
স্টেপ ৯ঃ দেশে পৌঁছানোর পর করণীয়
সফলভাবে দেশে পৌঁছানোর পর এখন এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত ও পরে কিছু
গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে। নিচে ধাপে ধাপে কাজগুলো আলোচনা করা হলো-
ক. ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার করুনঃ ফ্লাইট থেকে নামার পর প্রথমেই ইমিগ্রেশন
কাউন্টারে যাবেন। আপনার পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন অফিসারকে দিবেন। তারা পাসপোর্টে
সিল দিবে এবং কিছু প্রশ্ন করতে পারে। প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর দেবেন।
খ. লাগেজ সংগ্রহ করুনঃ ইমিগ্রেশনের পর লাগেজ বেল্টে গিয়ে নিজের লাগেজ খুঁজে
বের করুন। নাম/ট্যাগ দেখে নিশ্চিত হোন এটা আপনার ব্যাগ। লাগেজ নিয়ে বের হওয়ার
সময় কাস্টমস (শুল্ক বিভাগ) কাউন্টারে যেতে হতে পারে।
গ. এয়ারপোর্ট থেকে বের হনঃ এয়ারপোর্ট থেকে বের হন এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে
বাসায় আসুন।
ঘ. পরিবার পরিজনদের জানিয়ে দিনঃ বাড়ি পৌঁছে বা এয়ারপোর্ট থেকেই ফোন করে
জানিয়ে দিন যে আপনি নিরাপদে এসেছেন। এতে তারা নিশ্চিন্ত থাকবে।
ঙ. বিশ্রাম নিন ও ব্যাগ গুছানঃ যাত্রা দীর্ঘ হলে টায়ার্ড লাগতে পারে তাই তখন
বিশ্রাম নিন। একটু রেস্ট নেওয়া হয়ে গেলে লাগেজ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো
বের করে গুছিয়ে ফেলুন।
চ. অফিসে বা কর্তৃপক্ষকে জানানোঃ কেউ যদি দেশে ফেরার তথ্য অফিস বা সংস্থাকে
জানানোর দরকার হয়, তাহলে সেটা জানিয়ে দিন। যেমন: সরকারি ছুটিতে এসেছেন বা
কাজের মেয়াদ শেষ করে ফিরেছেন এটা জানিয়ে দিন।
স্টেপ ১০ঃ ব্যাংক ও সামাজিক সেটেলমেন্ট
দেশে ফেরার পর বাড়িতে থেকে পরিবার-পরিজনদের সাথে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটানোর
পাশাপাশি আপনাকে আর্থিকভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দেশে
আসার জন্য সমাজের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এটাকে বলা হয় সামাজিক ও
ব্যাংক সেটেলমেন্ট।
ক. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আপডেট করুন বা খুলুনঃ আপনার যদি আগে থেকে ব্যাংক
অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে যাচাই করে দেখুন সেটা সচল আছে কি না। অনেক সময় দীর্ঘদিন
ব্যবহার না করলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রবাসী ছিলেন বলে আপনি চাইলে
এফসি অ্যাকাউন্ট (বিদেশি মুদ্রা জমার জন্য) খুলতে পারেন। যদি অ্যাকাউন্ট না
থাকে, তাহলে নিকটবর্তী যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী (সেভিংস)
অ্যাকাউন্ট খুলে নিন।
অ্যাকাউন্ট খুলতে যে সমস্ত ডকুমেন্ট লাগবে-
- পাসপোর্ট (যাত্রার সিলসহ)
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- ছবি
- ঠিকানার প্রমাণক
খ. বিদেশ থেকে আনা টাকা জমা দিনঃ আপনি নগদ টাকা আনলে বা বৈধভাবে বিদেশ থেকে
রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, সেটা ব্যাংকে জমা রাখুন। এতে আপনার টাকা নিরাপদ থাকবে
এবং প্রয়োজনে যেকোনো সময় তুলতে পারবেন।
পরামর্শ: টাকা বেশি হলে ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করতে পারেন।
গ. সমাজে আবার যুক্ত হনঃ দেশে দীর্ঘদিন পর ফিরলে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে
যোগাযোগ শুরু করুন। সমাজে যুক্ত হতে গেলে আপনাকে কিছু সময় দেওয়া লাগবে। মসজিদে
যাওয়া, পাড়া-মহল্লায় সময় দেওয়া বা পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করলে মানসিকভাবে
আপনি অনেক ভালো বোধ করবেন
ঘ. নতুন জীবনের পরিকল্পনা শুরু করুনঃ আপনি দেশে স্থায়ীভাবে থাকবেন নাকি আবার
বিদেশ যাবেন এই নিয়ে চিন্তা করুন। চাকরি, ব্যবসা, পড়াশোনা বা পারিবারিক দায়িত্ব
যেটাই হোক, ধীরে ধীরে পরিকল্পনা করুন। হুট করে বড় সিদ্ধান্ত না নিয়ে সময় নিয়ে
ভাবুন।
প্রবাস থেকে দেশে ফিরতে অনলাইনে ফর্ম পূরণ
যেসব প্রবাসী ভাই-বোনেরা বাংলাদেশে ফিরতে চান, তাদের জন্য এখন অনেক কিছুই সহজ
হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে অনলাইনে ফর্ম পূরণ করা।
প্রবাস থেকে দেশে ফিরতে অনলাইনে ফর্ম পূরণ পদ্ধতি খুব সহজ। আপনি যেই দেশে
থাকেন, সেখান থেকে মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে এই ফর্ম পূরণ করতে পারবেন। সাধারণত
এই ফর্মে আপনার নাম, পাসপোর্ট নম্বর, কোন দেশ থেকে ফিরছেন, কোন ফ্লাইটে আসছেন
এসব তথ্য দিতে হয়।
এই ফর্মটি মূলত বাংলাদেশ সরকারের ইমিগ্রেশন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য
দরকার হয়, যেন তারা আপনার আগমন সম্পর্কে আগে থেকেই জানে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নিতে পারে। ফর্মটি পূরণ করতে কোনো টাকা লাগে না, শুধু সতর্কতার সহিত সঠিক তথ্য
দিতে হয়।
প্রবাস থেকে দেশে ফিরতে অনলাইনে হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম পূরণ
বাংলাদেশে ফিরতে চাইলে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম
পূরণ করা। এটি একটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ফর্ম যা অনলাইনে পূরণ করতে হয়।
প্রবাস থেকে দেশে ফিরতে অনলাইনে হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম পূরণ পদ্ধতি খুবই সহজ।
আপনি
Bangladesh National Portalওয়েবসাইটে গিয়ে আর্টিকেল্টি পড়ুন এবং ফর্মটি পূরণ করুন। এই আর্টিকেল এর পেজের
মধ্যেই হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম সম্পর্ক তথ্য দেওয়া আছে এবং ফরম পূরণ করার লিংক
দেওয়া আছে।
এখানে আপনার নাম, পাসপোর্ট নম্বর, কোন দেশে ছিলেন, কবে ফিরছেন, আপনার বর্তমান
শারীরিক অবস্থা এসব তথ্য দিতে দিন।
এই ফর্মটি যাত্রার আগে ফিল আপ করে একটি QR কোড ডাউনলোড করতে হয়, যা এয়ারপোর্টে
দেখাতে হয়।
এটা মূলত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যাচাই করা হয়, যাতে কেউ
অসুস্থ অবস্থায় দেশে না ফেরে এবং অন্যদের ঝুঁকিতে না ফেলে।
FAQs
১। সৌদি থেকে বাংলাদেশে কয়টি মোবাইল আনতে পারবো?
উত্তরঃ আপনি সৌদি আরব থেকে বছরে মোট ৩টি মোবাইল ফোন আনতে পারবেন। তার মধ্যে ২টি
পুরানো বা ব্যবহৃত মোবাইল আনতে পারবেন একদম ফ্রিতে। আর ১টি নতুন মোবাইল আনতে
চাইলে কিছু ট্যাক্স (শুল্ক) দিতে হবে।
২। বিদেশ থেকে মোবাইল আনলে কত টাকা শুল্ক দিতে হয়?
উত্তরঃ যদি আপনি নতুন মোবাইল আনেন, তাহলে তার দামের ওপর নির্ভর করে শুল্ক দিতে
হবে।উদাহরণ: মোবাইলের দাম যদি ৩০,০০০ টাকার কম হয় তাহলে শুল্ক লাগবে প্রায়
৫,০০০ টাকা।মোবাইলের দাম যদি ৩০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকার মধ্যে হলে শুল্ক লাগবে
১০,০০০ টাকা। আর দাম ৬০,০০০ টাকার বেশি হলে শুল্ক লাগবে ২৫,০০০ টাকা।
৩। বাংলাদেশে আসার সময় এয়ারপোর্টে কত গ্রাম সোনা আনা যায়?
উত্তরঃ যদি ব্যবহারের জন্য হয় তাহলে আপনি ১০ তোলা বা ১১৬ গ্রাম পর্যন্ত সোনার
গহনা আনতে পারেন ট্যাক্স ছাড়া। আর যদি আপনি সোনার বার বা নতুন সোনা আনেন তাহলে
প্রতি তোলায় প্রায় ৫,০০০ টাকা করে শুল্ক দিতে হবে।
৪। প্রবাসীরা কয়টি মোবাইল ফোন বাংলাদেশে আনতে পারবেন?
উত্তরঃ প্রবাসী ভাই-বোনেরা সাধারণত বছরে ২টি ব্যবহৃত ফোন আনতে পারেন বিনা
শুল্কে এবং ১টি নতুন ফোন আনতে পারেন, তবে এজন্য শুল্ক দিতে হবে। আর যদি আপনার
BMET কার্ড থাকে (যারা সরকারিভাবে প্রবাসে যান), তাহলে আপনি বছরে ২টি নতুন
মোবাইল আনতে পারবেন।
উপসংহার
প্রবাস থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে জানা থাকলে যাত্রা সহজ ও
ঝামেলামুক্ত হয়। তাই আগেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত রাখা, স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলা এবং ট্র্যাভেল পার্কে আপডেট জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়মগুলো
মেনে চললে প্রবাসীদের জন্য দেশে ফেরা হবে নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক।