হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধের জেনেরিক নাম ও কাজ

বর্তমান সময়ের রোগ গুলোর মধ্যে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল সংক্রান্ত সমস্যা সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ। এই রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে শুধু লাইফস্টাইল পরিবর্তন করলেই হয় না, দরকার হয় সঠিক ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করার। কিন্তু অনেকেই জানেন না কোন ওষুধ কেন খাওয়া হয় বা কোন ওষুধের জেনেরিক নাম কী।
হৃদরোগ-উচ্চ-রক্তচাপ-ও-কোলেস্টেরল-কমানোর-ওষুধের-জেনেরিক-নাম-ও-কাজ
এই লেখায় আমি সহজভাবে তুলে ধরব হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধের জেনেরিক নাম ও তাদের কাজ নিয়ে। এতে আপনি ওষুধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করতেও আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন।

সূচিপত্রঃ হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধের জেনেরিক নাম ও কাজ

এই আর্টিকেল থেকে আপনি কি কি শিখছেন তা দেখে নিন-

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধের জেনেরিক নাম ও কাজ

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধের জেনেরিক নাম ও কাজ সম্পর্কে জানুন একসাথে। নিচে স্টেপ বাই স্টেপ উপস্থাপন করা হয়েছে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল এর প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকা ও তাদের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে।


এই শ্রেণির ওষুধগুলো উচ্চ রক্তচাপ, বুক ধড়ফড়, এনজাইনা, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এবং রক্তে কোলেস্টেরল বা ফ্যাট কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

১) উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ (Antihypertensives)

A. Calcium Channel Blocker (CCB)

👉 রক্তনালিকে শিথিল করে প্রেসার কমায়।
  • Amlodipine
  • Cilnidipine
  • Levamlodipine
B. Beta Blocker

👉 হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • Atenolol
  • Bisoprolol Hemifumarate
  • Bisoprolol + Hydrochlorothiazide
  • Bisoprolol + Amlodipine
  • Nebivolol (আধুনিক বেটা-ব্লকার, উচ্চ রক্তচাপে কার্যকর)
C. CCB + Beta Blocker Combination

👉 ডুয়েল অ্যাকশন প্রেসার কন্ট্রোল।
  • Amlodipine + Atenolol
  • Bisoprolol + Amlodipine
D. Angiotensin II Receptor Blockers (ARBs)

👉 রক্তনালিকে প্রসারিত করে প্রেসার কমায়।
  • Losartan Potassium, Losartan + Hydrochlorothiazide
  • Olmesartan Medoxomil, Olmesartan + Hydrochlorothiazide / Amlodipine
  • Telmisartan, Telmisartan + Amlodipine
E. Diuretic / Water Pill

👉 শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ-পানি বের করে প্রেসার কমায়।
  • Spironolactone + Furosemide
  • Indapamide (প্রেসার ও ফ্লুইড রিমুভে কার্যকর)
F. ACE Inhibitors (Angiotensin Converting Enzyme Inhibitors)

👉 হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা ঠিক রাখে এবং প্রেসার কমায়
  • Enalapril, Lisinopril, Ramipril
  • Perindopril, Captopril

২) বুক ধড়ফড় ও ব্যথার ওষুধ (Anti-Anginal)

A. Nitrates

👉 হৃদপেশিকে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে ব্যথা কমায়।
  • Nitroglycerine
  • Isosorbide Mononitrate
  • Isosorbide Dinitrate
B. Fatty Acid Oxidation Inhibitor

👉 হার্ট সেলের শক্তি উৎপাদনে সহায়ক।
  • Trimetazidine Hydrochloride
C. Other Vasodilators
  • Nicorandil (রক্তনালী প্রশস্ত করে chest pain কমায়)

৩) রক্তে চর্বি ও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ (Antihyperlipidemic)

A. Statins (HMG-CoA Reductase Inhibitor)

👉 কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
  • Atorvastatin, Atorvastatin + Ezetimibe
  • Rosuvastatin
B. Fibrates

👉 ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়।
  • Fenofibrate
C. Other Lipid-Modulating Agents
  • Vericiguat (আপডেট ওষুধ – HFpEF রোগীদের জন্য)

৪) রক্ত পাতলা ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে (Antiplatelet / Blood Thinner)

👉 রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে।
  • Aspirin
  • Clopidogrel, Aspirin + Clopidogrel
  • Ticagrelor
  • Prasugrel (অ্যাডভান্সড প্লেটলেট ইনহিবিটার)

স্ট্রোক কাকে বলে?

স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কে হঠাৎ করে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা রক্তক্ষরণ হওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কিছু অংশ অক্সিজেন ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়া অবস্থাকে বলা হয়। এর কারণে মস্তিষ্কের ওই অংশের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মারা যেতে পারে।
স্ট্রোক-কাকে-বলে
সহজ কথায়, যখন মস্তিষ্কে রক্ত সঠিকভাবে পৌঁছায় না, তখন শরীরের কিছু অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যেমনঃ হাত-পা অচল হয়ে যাওয়া, কথা বলতে সমস্যা হওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া ইত্যাদি।

স্ট্রোক সাধারণত দুই প্রকার:
  1. ইসকেমিক স্ট্রোক- মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া। (সবচেয়ে বেশি দেখা যায়)
  2. হেমোরেজিক স্ট্রোক- মস্তিষ্কের মধ্যে রক্তক্ষরণ হওয়া।
স্ট্রোকের রোগী দ্রুত চিকিৎসা না পেলে গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে, তাই এর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া খুবই জরুরি।

স্ট্রোক কেন হয়?

স্ট্রোক হওয়ার মূল কারণ হলো মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়া বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়া। এর ফলে মস্তিষ্কের কিছু অংশে পর্যাপ্ত রক্ত বা অক্সিজেন পৌঁছায় না, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।


স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো:

রক্তনালীর আটকে যাওয়া (থ্রম্বোসিস বা এম্বোলিজম): মস্তিষ্কের রক্তনালী কোনো কারণে আটকে গেলে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটির পেছনে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো শরীরে কোলেস্টেরল জমে রক্তনালী সংকুচিত হওয়া।

রক্তনালী ফেটে যাওয়া (হেমোরেজিক স্ট্রোক): রক্তনালী ফেটে মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তক্ষরণ ঘটলে স্ট্রোক হয়। এটি সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ বা মাথায় আঘাতের কারণে হয়।

উচ্চ রক্তচাপ: বেশি উচ্চ রক্তচাপ থাকলে রক্তনালী দুর্বল হয়ে যায় এবং ফেটে যেতে পারে।

ডায়াবেটিস ও মোটা হওয়া: এই রোগগুলো রক্তনালীর সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়, ফলে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান: এই অভ্যাসগুলো রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়।

অনিয়মিত জীবনযাপন: যেমন, ব্যায়ামের অভাব, ডায়েট কন্ট্রোল না করা, অতিরিক্ত স্ট্রেস ইত্যাদি।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও শর্করা পরীক্ষা করানো জরুরী।

স্ট্রোকের লক্ষণ

স্ট্রোক হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হঠাৎ করেই ঠিকমতো কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।

স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:

দেহের হাত বা পা বা মুখের দুর্বলতা: হঠাৎ হাত-পা বা মুখের এক পাশে দুর্বলতা দেখা দেয়, যা কথা বলতে বা হাঁটতে অসুবিধা তৈরি করে।

আচমকা মুখের একপাশ ঝুলে পড়া: হাসতে গেলে মুখের এক পাশ নিচু হয়ে যাওয়া।

কথা বলতে সমস্যা হওয়া বা অন্যদের কথা বুঝতে না পারা: ভাষায় বিভ্রাট সৃষ্টি হওয়া ও কথা জটিল হওয়া। ভাষা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে যাওয়া।

হঠাৎ মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো বা চলাফেরা করতে সমস্যা: হাঁটতে বা দাঁড়াতে অসুবিধা হওয়া, মাথা ভারি হয়ে থাকা।

দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ কমে যাওয়া: এক বা দুই চোখে দৃষ্টি ঝাপসা বা অন্ধকার দেখা।

হঠাৎ অসহ্য মাথা ব্যথা: প্রথমবার স্ট্রোক হওয়ার আগে হঠাৎ অসহ্য মাথাব্যথা হয়।

স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় | স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়

স্ট্রোক একটি জীবন-হুমকিস্বরূপ রোগ হলেও অনেক সহজ উপায়ে এর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। নিচে স্ট্রোক প্রতিরোধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় দেওয়া হলো।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন: উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের প্রধান কারণ। নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করুন।

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান: তেল-মশলার পরিমাণ কমিয়ে, প্রচুর সবজি, ফল ও ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে। শরীরে কোলেস্টেরল ও ট্রান্সফ্যাট কমানো খুব জরুরি।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন: সপ্তাহে কমপক্ষে ৩-৪ দিন ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করুন। এতে রক্ত সঠিকভাবে চলাচল করবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে।

ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন: সিগারেট ও মদ্যপান রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন: রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রেখে নিয়মিত ওষুধ ও ডায়েট মেনে চলা প্রয়োজন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস বাড়ায় যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

স্ট্রেস কমান: অতিরিক্ত মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়ায়। যোগব্যায়াম, ধ্যান অথবা পছন্দের কাজ করে মানসিক শান্তি বজায় রাখুন।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান: উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করালে স্ট্রোকের ঝুঁকি আগেভাগেই ধরতে পারবেন।

সময়মতো সতর্কতা অবলম্বন করলে ও চিকিৎসা নিলে স্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

স্ট্রোক রোগের ব্যায়াম

আমরা জানি স্ট্রোক রোগীরা শরীরের কোন এক পাশে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এই রোগীদের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে ব্যায়াম করানো। তবেই আপনি স্ট্রোকের রোগীদের এক পাশের ভারসাম্যহীনতা অনেকাংশে কমাতে পারবেন।

স্ট্রোক রোগীর ৫টি পায়ের ব্যায়াম

স্ট্রোক হলে পায়ের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া বা অচল হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত পায়ের ব্যায়াম করলে পেশি শক্তিশালী হয়, রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে এবং স্বাভাবিক চলাচলে সাহায্য করে। নিচে কিছু সহজ ও নিরাপদ পায়ের ব্যায়ামের উদাহরণ দেওয়া হলো যা স্ট্রোক রোগীর জন্য উপযোগী।

১. পা সোজা করা ও বাকানো (Ankle Pumps): শুয়ে বা বসে পা সোজা করা ও বাকানোর ব্যায়াম করুন।ধীরে ধীরে পায়ের পাতা উপরে তোলুন (যেমন পায়ের আঙ্গুল আকাশের দিকে উঠে)। তারপর পায়ের পাতা নিচে নামান। এই কাজটি ১০-১৫ বার ধীরে ধীরে করুন।

২. পায়ে বৃত্তাকার চালানো (Ankle Circles): পা সোজা রেখে পায়ের গুটিকয়েক ধীরে ধীরে বৃত্তাকারভাবে ঘোরান। প্রথমে ডানদিকে, তারপর বামদিকে ঘুরাবেন। এভাবে দশবার করে দুই তিন সেট ব্যায়াম করুন।

৩. আঙুল ওঠানো ও নামানো (Toe Raises): পায়ের আঙুলগুলো একসঙ্গে উপরে উঠান। এরপর কিছু সেকেন্ড ধরে রাখুন, তারপর নিচে নামান। এভাবে ১০-১৫ বার দুই তিন সেট ব্যায়াম করুন।

৪. পা মোড়ানো (Knee Bends): বসে বা শুয়ে ধীরে ধীরে হাঁটু মোড়ান। পায়ের পাতা সোজা রেখে হাঁটু কাছের দিকে আনুন। কিছু সেকেন্ড ধরে রাখুন, আবার সোজা করুন। এভাবে ১০ বার করুন।

৫. হাতের সাহায্যে পা স্ট্রেচ করা: পা সোজা রেখে হাত দিয়ে পায়ের আঙুল ধরা চেষ্টা করুন। যতদূর পারেন পা সোজা টেনে ধরুন। এভাবে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।

স্ট্রোক রোগীর ৫টি হাতের ব্যায়াম

স্ট্রোকের কারণে হাতের মাংসপেশি দুর্বল বা অচল হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত হাতের ব্যায়াম করলে পেশি শক্ত হয়, রক্তসঞ্চালন ভালো থাকে এবং হাতের চলাচল ও স্পর্শ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিচে সহজ ও কার্যকর কিছু হাতের ব্যায়াম দেওয়া হলো যা স্ট্রোক রোগীদের জন্য উপযোগী।

১. আঙুল উঁচু-নিচু করা (Finger Taps): হাত সোজা রেখে ধীরে ধীরে একে একে আঙুলগুলো একসাথে মুঠো করে আবার খুলুন। প্রতিটি আঙুল আলাদাভাবে উঠানো ও নিচে নামানোর চেষ্টা করুন। এভাবে ১০-১৫ বার এই কাজ করুন।

২. মুঠো মারা ও খোলা (Making a Fist): হাতের আঙুলগুলো ধীরে ধীরে মুঠো করুন। কিছু সেকেন্ড ধরে রাখুন, তারপর আঙুলগুলো খুলে দিন। এভাবে ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

৩. হাতের কব্জি নড়াচড়া (Wrist Bends): হাত সামনে সোজা করে রেখে কব্জি ধীরে ধীরে উপরে এবং নিচে নাড়ান। এভাবে প্রতিটি দিকে ১০-১৫ বার কব্জি নাড়ান।

৪. বাঁকা হাত সোজা করা (Elbow Bends): হাত সোজা রেখে ধীরে ধীরে বাঁকা করুন, তারপর আবার সোজা করুন। এভাবে ১০-১৫ বার করুন।

৫. আঙুল দিয়ে কোন কিছু ছোঁয়া (Touching Fingers): হাতে থাকা প্রত্যেকটি আঙ্গুল দিয়ে কোন কিছু ছোয়ার চেষ্টা করুন। এই কাজ ১০ বার করে ২-৩ সেট করুন।

সতর্কতা: ব্যায়াম ধীরে ধীরে করুন এবং ব্যথা হলে ব্যায়াম করা বন্ধ করুন। প্রয়োজনে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্ট্রোক রোগীর জন্য পায়ের ব্যায়াম করানো খুবই জরুরি। এটি পেশি শক্তি বাড়ায় এবং দৈনন্দিন জীবনে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে সাহায্য করে।

হার্ট অ্যাটাক কাকে বলে?

হার্ট অ্যাটাক হলো হৃদপিণ্ডের মাসল বা পেশিতে রক্ত প্রবাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা। এর ফলে হৃদপিণ্ডের কিছু অংশ অক্সিজেন ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বা মারা যেতে পারে।
হার্ট-অ্যাটাক-কাকে-বলে
সহজ ভাষায় বললে, যখন হৃদপিণ্ডে রক্ত বহনকারী ধমনীগুলোতে জমে থাকা চর্বি বা ব্লকেজ (জমাট বাঁধা) হঠাৎ ভেঙে পড়ে বা সংকুচিত হয়ে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, তখন হার্ট মাসল পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন পায় না। এর ফলে হৃদপিণ্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে যা একটি জীবন-হুমকিস্বরূপ অবস্থা।


হার্ট অ্যাটাক খুব দ্রুত চিকিৎসা না পেলে মারাত্মক সমস্যা বা মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বুঝে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?

হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মূল কারণ হলো হৃদপিণ্ডের রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা রক্ত প্রবাহ খুব কমে যাওয়া। হৃদপিণ্ডের পেশিকে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ করে যেসব ধমনীগুলো যেগুলোকে করোনারি আর্টারি বলা হয়। সেগুলোতে কোনো কারণে বাধা সৃষ্টি হলে হার্ট অ্যাটাক হয়।

হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণগুলো হলো:

ধমনীর ভিতরে চর্বি জমা (অ্যাথেরোসক্লেরোসিস): ধমনীর দেয়ালে কোলেস্টেরল ও চর্বির জমাট বাঁধা হয়ে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে। হার্ট অ্যাটাকের এটি সবচেয়ে সাধারণ একটি কারণ।

রক্তের জমাট (থ্রম্বাস): ধমনীর ভেতরে জমাট বাঁধা রক্ত হঠাৎ ধমনীর পথ বন্ধ করে দিতে পারে, ফলে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।

রক্তচাপ বেশি থাকা: উচ্চ রক্তচাপ ধমনীর দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ব্লকেজ বাড়িয়ে দেয়।

ধূমপান: সিগারেট ধমনীর ক্ষতি করে, রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।

ডায়াবেটিস: রক্তের শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে ধমনীর ক্ষতি হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে।

অতিরিক্ত ওজন ও খারাপ লাইফস্টাইল: খাদ্যাভ্যাস ঠিক না থাকা, ব্যায়ামের অভাব, মানসিক চাপ এসব হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

পরিবারের ইতিহাস: যদি পরিবারের কারো হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকে, তবে সেই পরিবারে মানুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে।

সুতরাং, হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ধূমপান থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরি। এছাড়া নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও প্রয়োজন।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ

হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ হতে পারে আবার ধীরে ধীরে হতে পারে, তাই এর লক্ষণগুলো ভালো করে জানা খুবই জরুরি। নিচে হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণগুলো দেওয়া হলো।

বুকে প্রচণ্ড ব্যথা বা চেপে ধরা অনুভূতি: বুকের মাঝখানে বা বাম পাশে ভারি চাপ বা ব্যথা হতে পারে যা কয়েক মিনিট ধরে চলতে থাকে। অনেক সময় এই ব্যথা হাত, কাঁধ, পিঠ বা থুতনিতে ছড়িয়ে পড়ে।

শ্বাসকষ্ট: হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। এই সময় রোগী অক্সিজেন পর্যাপ্ত পায় না।

জ্বর ও ঘাম: শরীরে ঘাম ঝরানো বা হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া।

মাথা ঘোরা বা মাথা ভারী লাগা: অসুস্থ লাগা, মাথা ঘোরা বা বমি ভাব অনুভব করা।

জোরালো দুর্বলতা ও ক্লান্তি: শরীরে শক্তি কমে যাওয়া, হঠাৎ দুর্বল বোধ করা।

হাত, পিঠ, গলা, পেটে বা চোয়ালে অস্বস্তিকর ব্যথা: বুকের ব্যথার সঙ্গে বা আলাদা ভাবে শরীরের এই অংশগুলোতেও ব্যথা হতে পারে।

অজ্ঞান হওয়া: গুরুতর ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সময় মানুষ মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পারে বা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

মনে রাখবেন: এই লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যান। হার্ট অ্যাটাক দ্রুত চিকিৎসা না পেলে জীবনহানির ঝুঁকি থাকে। সময়ে চিকিৎসা হলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

হার্ট এটাক প্রতিরোধের উপায় | হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায়

হার্ট অ্যাটাক একটি মারাত্মক রোগ, কিন্তু সচেতন জীবনযাপন এবং সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই রোগ থেকে নিরাপদে থাকা সম্ভব। নিচে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় দেওয়া হলো:

১. স্বাস্থ্যকর খাবার খানঃ বেশি তেল, চর্বি, ট্রান্সফ্যাট ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার কম খান। সবজি, ফল, বাদাম, মাছ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান।

২. নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ সপ্তাহে কমপক্ষে ৩-৪ দিন আধা ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো বা অন্য কোনো হালকা ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৩. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুনঃ সিগারেট ও মদ্যপান ধমনীর ক্ষতি করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করুন।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, যা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।

৬. মানসিক চাপ কমানঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ হার্টের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাই অতিরিক্ত মানসিক চাপ কমাতে হবে।

৭. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানঃ রক্তে কোলেস্টেরল, সুগার ও অন্যান্য হার্ট সম্পর্কিত টেস্ট করান।

৮. পর্যাপ্ত ঘুম নিনঃ প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সচেতন জীবনযাপনই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। নিয়ম মেনে চলুন, স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা | হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয়

হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া জীবন রক্ষা করতে সাহায্য করে। নিচে হার্ট অ্যাটাকের সময় করণীয় প্রাথমিক চিকিৎসার ধাপগুলো দেওয়া হলো:

১. ৯৯৯ বা এম্বুলেন্সের সাহায্য নিনঃ যদি আপনি বা আশেপাশের কেউ হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ অনুভব করেন (বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা ইত্যাদি) তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ বা নিকটস্থ এম্বুলেন্স ডায়াল করুন।

২. আরাম করুন ও বিশ্রাম নিনঃ রোগীকে কোনো চাপ না দিয়ে ধীর স্থির রাখুন। তিনি যেন ভালোভাবে শ্বাস নিতে পারে এজন্য তাকে সাহায্য করুন ও অস্থিরতা কমান।

৩. অ্যাসপিরিন খাওয়ান (যদি চিকিৎসক পরামর্শ দেন): সাধারণত হার্ট অ্যাটাক হলে ৩০০ মিগ্রা অ্যাসপিরিন চিবিয়ে খাওয়ানো হয়। কারণ এটি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে যাদের অ্যাসপিরিন এলার্জি আছে, তাদের জন্য এটি দেওয়া যাবে না।

৪. ওষুধ ও ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলুনঃ হাসপাতালে ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও ওষুধ দিয়ে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা শুরু করবেন। এই সময় নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ ও ডাক্তারের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।

৫. হঠাৎ জ্ঞান হারালে বা শ্বাস বন্ধ হলে CPR দিনঃ CPR (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) প্রয়োজনে প্রয়োগ করুন। CPR করার জন্য প্রশিক্ষণ থাকলে ও এটি দ্রুত প্রয়োগ করলে জীবন বাঁচানো সম্ভব।

হার্ট অ্যাটাক হলে সময় নষ্ট করে চিকিৎসা নিতে দেরি করলে জীবনানির ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই উপরের ধাপগুলো দ্রুত ও সতর্কতার সঙ্গে পালন করতে হবে। প্রয়োজনে পরিচিত বা আশেপাশের কারো সাহায্য নিন।

স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে পার্থক্য

স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক—দুটি আলাদা রোগ হলেও উভয়ই রক্ত প্রবাহের সমস্যা থেকে ঘটে এবং এই দুইটা রোগ জীবন হুমকিস্বরূপ রোগ। নিচে সহজ ভাষায় দুইটির প্রধান পার্থক্য তুলে ধরা হলো।

প্রধান পার্থক্য সমূহ

বিষয় স্ট্রোক (Stroke) হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack)
সংজ্ঞা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত বা রক্তক্ষরণ হওয়া হৃদপিণ্ডের মাসলে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া
আঘাতের স্থান মস্তিষ্ক হৃদপিণ্ড
কারণ মস্তিষ্কের রক্তনালীর ব্লক বা ফেটে যাওয়া করোনারি আর্টারির ব্লক বা রক্ত জমাট বাঁধা
প্রধান লক্ষণ হঠাৎ মাথা ঘোরা, হাত-পা দুর্বলতা, কথা বলতে বা বুঝতে সমস্যা বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম ঝরা, দুর্বলতা
প্রতিকার যত দ্রুত চিকিৎসা, তত ভাল দ্রুত চিকিৎসা না হলে জীবন ঝুঁকির মধ্যে
প্রভাব শরীরের অর্ধেক পক্ষপাত, কথা বলার সমস্যা, চলাফেরায় সমস্যা হৃদপিণ্ডের পেশি নষ্ট হওয়া, প্রাণহানি ঝুঁকি

অন্যান্য পার্থক্য সমূহ

উপসর্গ (Signs & Symptoms)

বিষয় স্ট্রোক (Stroke) হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack)
শারীরিক দুর্বলতা হঠাৎ হাত-পা বা শরীরের একপাশ দুর্বল বা অচল হয়ে যাওয়া বুকে চেপে ধরা বা প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হওয়া
কথা বলার সমস্যা কথা বলা বা বোঝার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া সাধারণত কথা বলতে সমস্যা হয় না
দৃষ্টি সমস্যা এক বা দুই চোখে ঝাপসা বা অন্ধকার দেখা চোখে সমস্যা কম হয়
শ্বাসকষ্ট শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম শ্বাসকষ্ট সাধারণ ও গুরুতর হতে পারে
মাথা ঘোরা প্রচণ্ড মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো মাথা ঘোরা কম হয়

প্রতিকার (Treatment)

বিষয় স্ট্রোক (Stroke) হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack)
জরুরি ব্যবস্থা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, রক্তনালী খুলে দেওয়া ও প্রয়োজনে থ্রম্বোলাইসিস করা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, ব্লক খুলে দেওয়ার জন্য স্টেন্ট বা সার্জারি
ওষুধ রক্ত পাতলা করা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ রক্ত পাতলা ও হৃদপিণ্ডের পেশি রক্ষা করার ওষুধ
পুনর্বাসন ফিজিওথেরাপি, হাত-পায়ের ব্যায়াম ধীরগতিতে ফিজিওথেরাপি, লাইফস্টাইল পরিবর্তন
জীবনযাপন স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, স্ট্রেস কমানো স্বাস্থ্যকর খাদ্য, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার, ব্যায়াম

খাদ্যাভ্যাস (Diet)

বিষয় স্ট্রোক (Stroke) হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack)
খাবারের ধরন ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, কম লবণ, কম চর্বি ও তেল কম তেল, কম কোলেস্টেরল, বেশি ফল ও সবজি
এড়িয়ে চলুন প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি ফাস্ট ফুড, ট্রান্সফ্যাট ও উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার
বিশেষ টিপস পর্যাপ্ত পানি পান ও ওজন নিয়ন্ত্রণ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও খাবারে ভারসাম্য বজায় রাখা

FAQs

১। হার্ট কিভাবে শক্তিশালী করব?

উত্তর: হার্ট শক্তিশালী রাখতে হলে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করতে হবে, যেমন: ব্রিস্ক ওয়াক, সাইক্লিং বা সাঁতার। কম তেল-মসলা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত এবং তাজা ফল, শাকসবজি বেশি খাওয়া উচিত। ধূমপান, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত ঘুম ঘুমাতে হবে ও মানসিক চাপ কমাতে হবে।

২। কোনটি হৃদরোগের প্রধান কারণ?

উত্তর: হৃদরোগের প্রধান কারণ হলো ধমনিতে চর্বি জমে ব্লক হওয়া যাকে ইংরেজিতে বলা হয় Atherosclerosis।

৩। কত হলে হাই প্রেসার হয়?

উত্তর: সাধারণভাবে যদি কারও রক্তচাপ ১৪০/৯০ mmHg বা তার বেশি হয়, তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার ধরা হয়।

৪। BP এর মাত্রা কত?

উত্তর: সাধারণভাবে স্বাভাবিক BP (Blood Pressure) এর পরিমাপ:
  • সিস্টোলিক (উপরের সংখ্যা): ৯০–১২০ mmHg
  • ডায়াস্টোলিক (নিচের সংখ্যা): ৬০–৮০ mmHg
  • আদর্শ BP: ১২০/৮০ mmHg এর আশেপাশে।
৫। কি খেলে কোলেস্টেরল কমবে?

উত্তর: কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এমন খাবার হলো:
  • ওটস, ব্রাউন রাইস, শাকসবজি
  • বাদাম (বিশেষ করে আখরোট ও আমন্ড)
  • অলিভ অয়েল, রসুন, মাছ (যেমন স্যামন)
  • বেশি পানি পান ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
৬। কোলেস্টেরল নরমাল রেঞ্জ কত?

উত্তর: রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক রেঞ্জ হল:
  • Total Cholesterol: ২০০ mg/dL এর নিচে
  • LDL (খারাপ কোলেস্টেরল): ১০০ mg/dL এর নিচে
  • HDL (ভালো কোলেস্টেরল): ৪০ mg/dL বা তার বেশি
  • Triglycerides: ১৫০ mg/dL এর নিচে

উপসংহার

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধের জেনেরিক নাম ও কাজ জানা প্রতিটি রোগীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রোগ বুঝে ওষুধ গ্রহণ করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কমে এবং চিকিৎসার ফলাফল আরও ভালো হয়। তবে মনে রাখবেন, এই ওষুধগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে, উপরের এই ওষুধগুলো নিজে নিজে সেবন কখনো করবেন না। আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন হোন, ওষুধ সম্পর্কে জানুন এবং সুস্থ থাকুন।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন ...

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url